চকলেট কীভাবে তৈরি হয়
প্রায় ৫ হাজার ৩০০ বছর আগেও মানুষ চকলেট খেত। তখন চকলেট খাওয়ার প্রক্রিয়াটা ছিল ভিন্ন। আদিম মানুষ চকলেট খেত পানীয় হিসেবে। সেই পানীয় চেখে দেখতে পারত শুধু ওপরের সারির ধনী ব্যক্তিরা। তবে এখন চকলেট সহজলভ্য। হাতের নাগালেই পাওয়া যায় নামীদামি সব ব্র্যান্ডের চকলেট। কিন্তু কীভাবে তৈরি হয় এই চকলেট?
থিওব্রোমা ক্যাকাওগাছের বীজ থেকে চকলেট তৈরি করা হয়। দেখে নেওয়া যাক চকলেট তৈরির পদ্ধতিটা কী।
বেড়ে ওঠা
পরিণত বয়সে থিওব্রোমা ক্যাকাওগাছের নিচের শাখাগুলোয় ছোট ছোট ফুল ফুটতে শুরু করে। পরাগায়িত হলে ফুলগুলো বিকশিত হয়। এ অবস্থাকে বলে পড। ধীরে ধীরে পড পরিণত হয় ফলে। ফল পাকতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় মাস। প্রতিটি ফল প্রায় ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। ফল পাকলে হলুদ থেকে কমলা রং ধারণ করে।
ফল পাড়া
১৫ থেকে ২৬ ফুট উঁচু গাছ থেকে ফলগুলো পেড়ে নেওয়া হয় লাঠি দিয়ে। এরপর ফল থেকে খোসা ছাড়িয়ে আলাদা করা হয় বীজ। একটি ফলে প্রায় ২০ থেকে ৬০টি বীজ থাকে। গাছ থেকে ফল পাড়ার দিনেই বা কয়েক দিনের মধ্যে ফল থেকে বীজ আলাদা করা হয়। চাইলে এই ফলের বীজও খাওয়া যায়। বীজের ভেতরে বেগুনি ও বাদামি রঙের মিশেলে থাকে আরও একটি দানা। এটা খেতে তেতো। তবে দানার চারপাশে থাকে রসালো একটা সাদা অংশের আবরণ। এ সাদা অংশ খেতে বেশ মিষ্টি।
গাজন
খোসা থেকে বীজ ছাড়িয়ে আলাদাভাবে স্তূপ করে রাখা হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলে ফার্মেনটেশন বা গাজনপ্রক্রিয়া। এ অবস্থায় বীজে ব্যাকটেরিয়া জমা হয়। ব্যাকটেরিয়াগুলো গাজনের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিড ও অ্যাসিটিক অ্যাসিড তৈরি করে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় সপ্তাখানেক সময় লাগে।
শুকানো
গাজন থেকে বের করে বীজগুলো শুকাতে হয়। ঐতিহ্যগতভাবে বীজগুলো সূর্যের তাপেই শুকায়। বীজ শুকানোর ফলে আরও তেতো হয়ে যায় দানা। প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন লাগে বীজ শুকাতে। শুকানো বীজের অ্যাসিটিক অ্যাসিড বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়। ফলে বীজে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে এবং স্বাদও বাড়ে।
রোস্টিং
এরপর বীজগুলো ভাজা হয়। ফলে বীজের ওপরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক মারা যায়। এ ছাড়া বীজগুলো রোস্টিংয়ের কারণে এর অম্লীয় স্বাদ কমে যায়। রোস্ট বলতে এখানে ভাজা বীজকেই বোঝানো হচ্ছে। ফলে পরবর্তী ধাপের কাজ করতে সুবিধা হয়।
গুঁড়া করা
রোস্টিং করা বীজগুলো থেকে আলাদা করা হয় দানা। একই সঙ্গে হাতের সাহায্যে সরিয়ে ফেলা হয় ছোট ছোট পাথুরে কণা। এরপর হালকা বাতাসের মাধ্যমে ওপর থেকে ধুলাবালু ঝেড়ে ফেলা হয়। আধুনিক যুগে এ কাজগুলো মেশিন দিয়েই করা হয়। ক্যাকো ক্রাশার দিয়ে গুঁড়া করা হয় দানাগুলো। এরপর বীজবিহীন দানায় চিনি মেশানো হয়। কারণ, দানাগুলো তেতো থাকে। ষোড়শ শতকে দানার সঙ্গে চিনি মেশানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল স্পেনে।
গরম ও প্যাকিং
ধীরে ধীরে চকলেট ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গরম করা হয়। এরপর ঠান্ডা করা হয় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবার ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গরম করা হয়। এতে চকলেটের মসৃণতা ও স্বাদের মান বাড়ে। এরপর এই গরম চকলেট বিভিন্ন ধাঁচে ফেলে তৈরি করা নানা আকারে চকলেট। সর্বশেষে করা হয় প্যাকেজিং। এসব প্রক্রিয়া শেষে আমাদের হাতে এসে পৌঁছায় নানা স্বাদের বাহারি চকলেট।