মারামারি দেখতে ভালো লাগে কেন

টিভির পর্দায় রেসলিং খেলা চলছে। মঞ্চে খালি হাতে লড়ছেন দুজন মানুষ। সমানতালে লড়াই করছেন দুজনেই। উত্তেজনায় ভাসছে দর্শকসারির হাজারো মানুষ। টিভির সামনে বসে তুমিও পাচ্ছো উত্তেজনার স্বাদ। এ দৃশ্য খুব অস্বাভাবিক নয়। শুধু রেসলিং কেন, চলচ্চিত্রের অ্যাকশন দৃশ্যসহ নানা ফাইটিং প্রতিযোগিতা আমাদের উত্তেজিত করে তোলে। অনেকেই সেই দৃশ্যে আনন্দ পান। মারামারির মতো ভয়ংকর, হিংস্র বিষয় অনেক সময় দেখে আমাদের ভালো লাগে। কিন্তু কেন? কারণ জানতে চাইলেই ফিরতে হবে অতীতে।

প্রাচীনকালে মানুষের জীবন এখনকার মতো সহজ ও নিরাপদ ছিল না। প্রতিদিন বেঁচে থাকতে হতো প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে। সেই যুদ্ধে যেমন শক্তির প্রয়োজন ছিল, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল কৌশলের। কৌশলী, শক্তিমান মানুষেরা পেত বিপদ জয় করার তৃপ্তি আর মানুষের বাহবা।

সময়ের পরিক্রমায় মানুষ আরও উন্নত হয়েছে। মানুষের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। ফলে বন্য প্রাণী বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে অনেকটা নিরাপদ হলেও বিপদের তালিকায় উঠে এসেছে মানুষের নাম। প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে মানুষ মারামারি বা যুদ্ধের নানা কৌশল রপ্ত করেছে। এখানেও মানুষ পেত বিপদ জয় করার তৃপ্তি আর স্বগোত্রীয়দের শ্রদ্ধা।

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের জিনে বয়ে চলা স্মৃতি মিশে আছে মানুষের অস্তিত্বে। ফলে আধুনিক মানুষের জীবন অনেকটা নিরাপদ হলেও সহিংসতার প্রতি টান মুছে যায়নি। এখনো সহিংসতা দেখলে মানুষের দেহে অ্যাড্রোনালিনের মতো উত্তেজক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। খেয়াল করলে দেখবে, রাস্তায় সম্পূর্ণ অচেনা দুজন কোনো একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি শুরু করলে তা দেখার জন্য ভিড় জমে যায়। নিরাপদ বা নিজের কোনো বিপদ নেই, এমন পরিস্থিতি থেকে সহিংসতা দেখার কারণে ভয় বা আতঙ্কের বদলে মানুষের মধ্যে তৈরি হয় আনন্দের অনুভূতি। মারামারি দেখে তাই ভালো লাগার বিষয়টি খুব একটা অস্বাভাবিক নয়।

মারামারি দেখে সবার একই রকম ভালো লাগে না। কারও কারও কাছে এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি একটু বেশি আকর্ষণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্লুমিংটনের এক জরিপে দেখা গেছে, যাঁদের বিপদের ঝুঁকি বেশি অথবা যাঁরা ভয়ের অনুভূতি উপভোগ করেন, তাঁরা মিক্সড মার্শাল আর্ট (এমএমএ) দেখে বেশি আনন্দ পান এবং খেলাধুলা দেখতে পছন্দ করেন।

মারামারি উপভোগের কারণটি ভায়োলেন্স বা সহিংসতা নয়; অর্থাৎ সহিংসতার কারণে মানুষ মারামারির বিষয়টা উপভোগ করে, বিষয়টি এমন নয়। একটি অপেশাদার এমএমএ অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে করা এক জরিপে জানা যায়, অনুষ্ঠানটির নাটকীয়তা তাঁদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। দর্শকের মতে, যেকোনো মারামারি বা যুদ্ধের গল্পের ওপর নির্ভর করে তাঁদের উত্তেজনার পরিমাণ। গল্পটি যত আকর্ষণীয় হয়, ততই মারামারি দেখে বাড়ে ভালো লাগার পাল্লা।

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস