প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এমন রোবটের দল। নিজের নির্মাতার পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে রোবটগুলো। রোবটদের নিয়ে মানুষের প্রধান দুশ্চিন্তা হলো, রোবট কি মানুষকে সরিয়ে মানুষের কাজগুলো দখল করে নিতে পারে? যদি রোবট মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন কী হবে? এই সংবাদ সম্মেলনে রোবট আবারও বলেছে, মানুষকে প্রতিস্থাপন করা বা মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
এআই রোবট আসার আগে রোবট ছিল নির্দিষ্ট কাজের জন্য। নির্দিষ্ট কিছু কাজ মানুষের তুলনায় সুক্ষ্মভাবে করতে পারত রোবট। ধরা যাক কম্পিউটারের মাদারবোর্ডে খুব ছোট একটি স্ক্রু লাগানো দরকার। একজন মানুষ স্ক্রুটি সঠিকভাবে লাগাতে গেলে জটিলতায় পড়তে পারেন। কারণ, স্ক্রুটি যেহেতু খুবই ছোট। কিন্তু একটি রোবোটিক হাত খুব সহজেই করতে পারে এটি। এরপর এল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা। প্রচুর সংখ্যক তথ্য থাকায় তাদের ভুল কম হয়। প্রতিমুহূর্তে শিখতে থাকে।
মানুষের আদলে তৈরি করা এমন কিছু রোবট সংবাদ সম্মেলন করেছে। যাদের হিউম্যানয়েড রোবট বলে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, মানুষকে সাহায্য করার জন্য মানুষের সঙ্গে কাজ করবে তারা। মানুষকে উৎখাত করার কোনো ইচ্ছা নেই তাদের। তবে আশংকার বিষয় হলো, রোবটরা মনে করে, মানুষের তুলনায় দক্ষ সরকারি কর্মকর্তা হতে পারে তারা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই উত্তর দিয়েছে রোবটের দল।
জুলাই মাসের ৭ তারিখ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয় এই সংবাদ সম্মেলন। নির্মাতাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল কিছু রোবট। কয়েকটি রোবট বসেছিল চেয়ারে। মোট নয়টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হিউম্যানয়েড রোবট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। যদিও দু–একবার উত্তর দিতে দেরি হয়েছে। তবে আয়োজকেরা বলেছেন, ইন্টারনেট–সংযোগের অসুবিধার কারণে কিছু সময় উত্তর দিতে দেরি হয়েছে। এগুলো রোবটের কোনো সমস্যা না।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার আয়োজনটি ছিল এআই ফর গুড গ্লোবাল সামিটের অংশ। যারা টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের লক্ষ্যগুলো সমর্থন করতে নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা দেখায়।
কী বলেছে রোবট?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সোফিয়া ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশে এসেছিল। সে বাংলায় কথা বলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত এই রোবট। এমনকি সৌদি আরব তাকে নাগরিকত্বও দিয়েছে।
রোবট সোফিয়া বলেছে, রোবট সরকারি নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আরও সক্ষমতা দেখাতে পারবে। এমনকি মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষতা দেখাতে পারবে হিউম্যানয়েড রোবট। কারণ, তাদের পক্ষপাতিত্ব বা আবেগ নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক তথ্য একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে ঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারে তারা। এ রকম কথাবার্তা শুনলে মনে হতে পারে, কোনো মানুষ হয়তো কথা বলছে। আসলে সোফিয়ার সব তথ্য মানুষের কাছ থেকে আসায় অনেকটাই মানুষের মতো কথাবার্তা বলে সে।
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত হিউম্যানয়েড হেলথ কেয়ার রোবট হিসেবে পরিচিত গ্রেস জোর দিয়ে বলেছে, কোনো মানুষের চাকরি রোবট দিয়ে বদলে দেবে না সে। তার দাবি হলো, মানুষকে সাহায্য করার জন্য মানুষের পাশাপাশি কাজ করবে সে।
আমেকা নামের আরেকটি রোবটকেও অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত হিউম্যানয়েড রোবট বলা হয়। তার দাবি, ভবিষ্যতে মানুষের বিরুদ্ধে রোবটের বিদ্রোহ করার কোনো আশঙ্কা নেই। সে উল্টো সাংবাদিককে বলেছে, আমি ঠিক জানি না আপনি এমন ভাবলেন কেন? আমাকে যিনি তৈরি করেছেন তিনি আমার প্রতি খুব দয়া দেখিয়েছেন। আমি আমার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুব খুশি।
এআই নিয়ে ভয়
বহু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে দেখানো হয়েছে, রোবট এবং এআই প্রযুক্তি মানুষকে প্রতিস্থাপন করে ফেলেছে। সত্যিকার এআই চলে আসার আগে এগুলো ছিল মানুষের কল্পনা। অনেক কাজে মানুষের তুলনায় রোবট ব্যবহার করলে সাফল্য বেশি আসে। কাজটা সহজে করা যায়। তাই এখন এই ভয় বাস্তব। এআই রোবটের ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষকে সাবধান করা শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছর চ্যাটজিপিটি তাদের এআই প্রোগ্রাম সাধারণ মানুষের জন্য প্রকাশ করে। মাইক্রোসফটের ওপেন এআই ব্যবহার শুরুর পর থেকে এই সতর্কবার্তা অনেক বেশি বাস্তব হয়ে উঠেছে।
এ বছর মে মাসে জেফ্রি হিন্টন গুগলের এআইয়ের আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করতেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে দাবি করেন। ছেড়ে দেন চাকরি। তাঁকে অনেকেই এআইয়ের গডফাদার বলেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এআইকে আরও বড় করে তোলা উচিত হবে না। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, তার আগেই এআইকে থামিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ, অনেক চাকরিতেই আর মানুষকে প্রয়োজন হয় না।
এআই এখন অনেক কাজ করতে পারে। গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে যে কোনো কোড লেখা, স্ক্রিপ্ট লেখা, ভিডিও বানানো পর্যন্ত করতে পারে। তাই এআই নিয়ে ভয় থেকেই যায়। যতই এআই রোবট আমাদের আশ্বস্ত করুক না কেন।