যে দেশ চাঁদের সবচেয়ে কাছে

দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের দেশ ইকুয়েডর। স্প্যানিশে ইকুয়েডরের মানে বিষুবরেখা। বিষুবরেখা হলো একটি কাল্পনিক রেখা, যা পৃথিবীকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে ভাগ করেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই ইকুয়েডরের এমন নাম দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের ১৩টি দেশ পুরোপুরি বিষুবরেখার ওপর অবস্থিত, এর মধ্যে অন্যতম ইকুয়েডর।

আমরা জানি, পৃথিবী কমলালেবুর মতো চ্যাপ্টা। পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় কেন্দ্র থেকে বিষুবরেখার দূরত্ব সবচেয়ে বেশি। এ কারণে বিষুবরেখায় মাধ্যাকর্ষণ বল তুলনামূলকভাবে সামান্য কম। এই দেশটি অন্যান্য এলাকা থেকে উঁচু। ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই উচ্চতার কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতার রাজধানী এটি। এই ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এখানে জীবন কিছুটা কঠিন।

আরও পড়ুন
বিশ্বের ১৩টি দেশ পুরোপুরি বিষুবরেখার ওপর অবস্থিত, এর মধ্যে অন্যতম ইকুয়েডর।
ছবি: উইকিপিডিয়া

ইকুয়েডর থেকে চাঁদকে সবচেয়ে কাছে দেখা যায়। আশ্চর্যজনক মনে হলেও এটি সত্য। একটি এলাকা মহাকাশের কত কাছে, তা নির্ভর করে এলাকাটি কত উঁচু। পৃথিবীর কোনো স্থান যদি সবচেয়ে উঁচু হয়, তবে সেটা এভারেস্ট। তাহলে তো মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে মহাকাশ সবচেয়ে কাছে হওয়ার কথা। এখান থেকেই চাঁদকে সবচেয়ে কাছে মনে হবে। কিন্তু ইকুয়েডর চিম্বোরাজো পর্বত থেকে চাঁদকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা যায়।

ইকুয়েডর থেকে শুধু চাঁদকে সবচেয়ে কাছে দেখা যায়, এমন নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে সূর্যের তাপও খুব প্রখর।

চিম্বোরাজো ও এভারেস্ট দুটিই বিশ্বের বিখ্যাত পর্বত। চিম্বোরাজো পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এভারেস্টের তুলনায় দূরে অবস্থিত। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার দিক দিয়ে এভারেস্টই বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এভারেস্টের উচ্চতা প্রায় ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার। আর চিম্বোরাজোর উচ্চতা প্রায় ৬ হাজার ২৬৩ মিটার। চিম্বোরাজো পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত না হয়েও এর অবস্থান এমন যেখান থেকে চাঁদকে অনেক কাছ থেকে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

ইকুয়েডর থেকে শুধু চাঁদকে সবচেয়ে কাছে দেখা যায়, এমন নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে সূর্যের তাপও খুব প্রখর। বিষুবরেখার ওপর অবস্থিত হওয়ায় সারা বছর এখানে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান থাকে। সূর্য সরাসরি মাথার ওপরে অবস্থান করে। মিডল অব দ্য ওয়ার্ল্ড সিটি নামক স্থানে দুপুর ১২টা বাজে কোনো ছায়া দেখা যায় না।

বিশ্বের বৃহত্তম কচ্ছপ থেকে শুরু করে সামুদ্রিক ইগুয়ানা, পেঙ্গুইন, সি লাওনসহ আরও কত কী দেখা যায় ইকুয়েডরে।
ছবি: উইকিপিডিয়া

ইকুয়েডরে কাল্পনিক বিষুবরেখা চিহ্নিত করতে একটি লাইন আঁকা আছে। পর্যটকদের কাছে এই লাইন খুবই আকর্ষণীয়। এ ছাড়া এই লাইন বরাবর পৃথিবীর আকর্ষণ ভিন্নভাবে কাজ করে। কেউ যদি বিষুবরেখা চিহ্নিত লাইন দিয়ে হাঁটতে চায় তবে কিছুক্ষণের মধ্যে সে পড়ে যাবে, হাঁটতে পারবে না। কারণ, এই রেখায় ‘কোরিওলিস বলের’ প্রভাব শূন্য। উত্তর মেরুতে পানির ঘূর্ণন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ও দক্ষিণ মেরুতে ঘড়ির কাঁটার দিকে হয়। কিন্তু বিষুবরেখায় বেসিনে পানি ছাড়লে পানি পাইপ দিয়ে সরাসরি নিচে চলে যায় ঘূর্ণন তৈরি না করেই। বেসিনে পানি ছেড়ে তুমিও এটি পরীক্ষা করতে পারবে ইকুয়েডরে গেলে। এ ছাড়া এই রেখার উপরে খুব সহজেই কোনো কিছুর ভারসাম্য রাখা যায়। যেমন একটি পেরেকের ওপর সহজেই ডিম বসিয়ে রাখা যাবে।

পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় কেন্দ্র থেকে বিষুবরেখার দূরত্ব সবচেয়ে বেশি
ছবি: দিয়েগো দেসলো, উইকিপিডিয়া

এ ছাড়া জীববৈচিত্র্য দেখার জন্য ইকুয়েডর একটি জনপ্রিয় দেশ। এখানে রয়েছে ইউনেসকো হেরিটেজ গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। এখানে ৯ হাজারের বেশি প্রজাতির প্রাণীর দেখা মেলে। বিশ্বের বৃহত্তম কচ্ছপ থেকে শুরু করে সামুদ্রিক ইগুয়ানা, পেঙ্গুইন, সি লাওনসহ আরও কত কী। এই দ্বীপে বাস করা জীববৈচিত্র্য পৃথিবীর আর কোথাও দেখা মেলে না।

সূত্র: অরোরা এক্সপেডিশন্স, উইকিপিডিয়া, ন্যাস ডেইলি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন