অতীতে সমুদ্রে ঘুরে ঘুরে দিন কাটানো বেশ কঠিন হলেও ফলপ্রসূও ছিল। নাবিকেরা সে সময় বিশ্ব ভ্রমণ করে এমন সব খাবার আর উপকরণ আবিষ্কার করেছিলেন, যেসবের ব্যাপারে তাঁদের আগে থেকে কোনো ধারণা ছিল না। তাঁরা তাঁদের জাহাজগুলো প্রচুর সম্পদ দিয়ে পূর্ণ করতেন। উন্মুক্ত করতেন বাণিজ্যের পথ। অভিযাত্রীরাই প্রথম সমুদ্র এবং অসংখ্য স্থলপথের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। পর্যায়ক্রমে তাঁদের আবিষ্কারগুলো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য অভিযাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নতুন জিনিস খুঁজে ফিরেছেন। বিশেষ করে ১৪৮৮ সাল থেকে ১৬০০ শতকের শুরুর দিকে দারুণ সক্রিয় ছিল এ ধরনের অভিযান। এই সময়কাল অন্বেষণের যুগ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এ সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক নতুন দেশ খুঁজে পেয়েছিলেন অভিযাত্রীরা।
কিন্তু মানুষ কেন অনুসন্ধান করতে শুরু করেছিলেন? পর্তুগিজরা পশ্চিম আফ্রিকায় নতুন বাণিজ্যের পথ খুঁজছিলেন। কারণ, অটোমান সাম্রাজ্য তাঁদের বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। নতুন নতুন স্থান খুঁজে পেতে শুরু করলেন পর্তুগিজরা। ফলে আরও নতুন জায়গা খোঁজায় তাঁদের উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল। স্প্যানিশরাও নানা সাগর–মহাসাগর অনুসন্ধান করেছে। আমেরিকার একটা বড় অংশ শাসনও করেছে তারা। চলো, এমন কয়েকজন ইউরোপীয় অভিযাত্রীর কথা জানা যাক, যাঁরা সমুদ্র ভ্রমণ করেছেন এবং নতুন বিশ্বকে তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। এসব অভিযানে অনেকেই সফল হয়েছেন, আবার অনেকেই হয়তো হয়েছেন ব্যর্থ। ইতিহাস শুধু সফলদের কথাই মনে রেখেছে। সফলদের তালিকায় ক্রিস্টোফার কলম্বাস, জেমস কুক ও ফ্রান্সিস ড্রেক অন্যতম।
তাঁরা কোথায় গিয়েছিলেন
অনুসন্ধানী যুগে প্রধানত পর্তুগাল, স্পেন, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডস থেকে অভিযাত্রীরা যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ সময় তাঁরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, ব্রাজিল, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, হাওয়াই এবং অ্যান্টার্কটিকার কাছাকাছি দ্বীপগুলো আবিষ্কার করেছিলেন। অভিযাত্রীরা মূলত অর্থ, খ্যাতি ও অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এসব ভ্রমণে বের হতেন।
ভ্রমণ না করেও যিনি অভিযাত্রী
হেনরি দ্য নেভিগেটর আসলে কোনো অভিযাত্রী ছিলেন না। এমনকি তিনি নাবিকও নন। সত্যি কথা বলতে, হেনরি তাঁর জীবদ্দশায় খুব বেশি ভ্রমণও করেননি। তাহলে কীভাবে তিনি অভিযাত্রী হিসেবে পরিচিতি পেলেন? আসলে তিনি অন্য অভিযাত্রীদের সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন। পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল অনুসন্ধানের জন্য তিনি অভিযাত্রীদের সমুদ্র অনুসন্ধানের জন্য পাঠান সেই অনুসন্ধানী যুগে। তাঁর কাজ সম্পর্কে মানুষকে জানাতে ১৪১৯ সালে অভিযাত্রীদের জন্য পর্তুগালে একটি স্কুলও খুলেছিলেন।
প্রাচীন অভিযাত্রীরা
গ্রিক অভিযাত্রী পাইথিয়াস অব ম্যাসালিয়া ছিলেন প্রাচীনতম অভিযাত্রীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ৩৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে বর্তমান ফ্রান্সের দক্ষিণ থেকে ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমাংশে যাত্রা করেছিলেন। তিনি যেখানে গিয়েছিলেন, সেটা বর্তমান সময়ের গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড। সেই সঙ্গে তিনি সুমেরু অঞ্চল ও থুলে নামের একটি দ্বীপে গিয়েছিলেন। দ্বীপটি আধুনিক কালের আইসল্যান্ড নামে পরিচিত। ব্রিটেনে অনেক মূল্যবান টিন ছিল।
তুমি কি জানো
পাইথিয়াস নর্দান লাইটস সম্পর্কে লিখেছিলেন। সূর্য থেকে আসা চার্জযুক্ত কণাগুলো আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পরমাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একধরনের বর্ণালি দেখা যায়।