ঢাকার কোথায় লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার সুযোগ আছে
নাজির হোসেন তখন তরুণ। সন্ধ্যা হলেই ফটিক চাঁদের চায়ের দোকানে বসে পড়তেন দস্যু মোহনের মতো ডিটেকটিভ বই হাতে নিয়ে। আশপাশে ভিড় জমে যেত। সাধারণ মানুষের গল্প শোনার আগ্রহ তাঁকে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করে।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কিংবদন্তির ঢাকা বইয়ের এই লেখক প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন আজাদ মুসলিম পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯৫২ সালে পুরান ঢাকার লালবাগের আমলীগোলায় স্থাপিত এই লাইব্রেরিটি অবশ্য এখন ভালো অবস্থায় নেই।
ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি গণগ্রন্থাগারের সংখ্যা ৭১। আর সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে অনুদানপ্রাপ্ত বেসরকারি গ্রন্থাগারের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০। অনুদান ও অনুদানের বাইরে থাকা গ্রন্থাগারের সংখ্যা সব মিলে দুই হাজারের বেশি হবে। তবে রাজধানী শহরে সক্রিয় বেসরকারি গ্রন্থাগারের সংখ্যা ৪০টির বেশি নয়। গ্রন্থাগার গবেষক আশরাফুল ইসলামের মতে, সারা দেশে এখনো ৪১টি গ্রন্থাগার টিকে আছে, যেগুলো শতবর্ষ পেরিয়েছে।
এ লেখায় আমরা এমন কিছু গ্রন্থাগারের গল্প বলব, যেগুলো বেশ টিকে আছে। সরব উপস্থিতিও আছে পাঠকের।
ঢাকার কোথায় লাইব্রেরি আছে
লেখার শুরুতে আমরা যে আজাদ মুসলিম পাবলিক লাইব্রেরির কথা উল্লেখ করলাম, এর কাছেই আছে গ্রন্থবিতান গ্রন্থাগার। লালবাগের শ্রীনাথ রায় স্ট্রিটে এই গ্রন্থাগার বেশ বড়সড়। প্রধান ফটক ঠেলে ভেতরে পা রাখতেই সবুজের স্নিগ্ধ পরশ। দুই পাশে নাতিদীর্ঘ মেহগনি, অর্জুন আর মেহেদিগাছ। এই গ্রন্থাগারে আমি প্রথম যাই ২০১৬ সালের ৩১ মে। কাঠের টেবিল-চেয়ার। ভেতরে ডান দিকে বইয়ের তাক। এখানে রয়েছে সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি আর ইতিহাসের সব নামী বই। সাকল্যে ১০ হাজার। পুরোনো বইগুলো তিন মাস পরপর রোদে নেড়ে ঝাড়পোছ করে আবার তাকে সাজানো হয়। প্রতিবছরই নতুন বই কেনে এই গ্রন্থাগার। দৈনিক সংবাদপত্র, কিশোর আলোসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাগাজিন রাখা হয়। আশপাশের মানুষই মূলত এই লাইব্রেরির পাঠক। এখানে বই পড়ার ভালো পরিবেশ রয়েছে।
পুরান ঢাকা থেকে বেরিয়ে এবার ঢাকার আরেকটি গ্রন্থাগারে যাই। শহীদ বাকী স্মৃতি পাঠাগার, খিলগাঁওয়ে পল্লীমা সংসদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এখানে বইয়ের সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি। ৫২ পেরিয়ে ৫৩ বছরে পড়া এই গ্রন্থাগার নিয়মিত সাপ্তাহিক পাঠচক্র করে। রাজধানীর দূরদূরান্ত থেকে এখানে বই পড়তে আসেন পাঠকেরা। আমি নিজে নিবন্ধন খাতা খুলে দেখেছি, কেবল খিলগাঁও নয়, মালিবাগ, শান্তিবাগ, গুলবাগ, সবুজবাগ, মিরবাগ, রামপুরা, গোড়ান, মুগদা এলাকার পাঠকও আছে। তিন হাজার বর্গফুটের গ্রন্থাগারে নিবন্ধিত পাঠকের সংখ্যা ছয় শতাধিক। বাকী স্মৃতি পাঠাগারের সম্পাদক হিসেবে আছেন আনিসুল হোসেন তারেক, যিনি দুই দশক ধরে ঢাকায় বই পড়ার আন্দোলনকে এগিয়ে নিচ্ছেন।
ঢাকার পরে যেতে হবে নারায়ণগঞ্জ শহরে। এখানকার সুধীজন পাঠাগার সবার কাছেই পরিচিত। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে বেশ নিয়মিত পাঠক আছে। এ ছাড়া আলী আহম্মদ চুনকা নগর পাঠাগারও সুনাম কুড়িয়েছে।
বলে রাখা দরকার, ১৮৫০ সালে যুক্তরাজ্যে পাস হয় পাবলিক লাইব্রেরি অ্যাক্ট। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অভিজাত ও রক্ষণশীল সদস্যরা সাধারণ জনগণের মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরির জন্য রাজকোষ থেকে অর্থ ব্যয়ের বিপক্ষে ছিলেন। তাঁদের বিরোধিতার মুখেও আইনটি পাস হয়ে যায়।
যুক্তরাজ্যে লাইব্রেরি আইন প্রণয়ন, কয়েকজন রাজকর্মচারীর পৃষ্ঠপোষকতা এবং এ অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষিত শ্রেণির চেষ্টায় ১৮৫৪ সালে বাংলা অঞ্চলে একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয় পাঁচটি গণগ্রন্থাগার। স্থানগুলো হলো যশোর, বগুড়া, রংপুর, বরিশাল ও হুগলি। এর মধ্যে বন্ধ আছে বরিশালের গ্রন্থাগারটি।
অন্য শহরের লাইব্রেরিগুলোর কথা বলব পরের লেখায়।