বন্য প্রাণী দেখার জন্য বিশ্বসেরা ৫ উদ্যান

বিশ্বের সেরা জাতীয় উদ্যানগুলো যেন প্রকৃতির বিস্ময়! পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় এসব উদ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্যানে প্রাণীরা নির্ভয়ে বাঁচতে পারে। কারণ, সেখানে বন্য প্রাণী হত্যা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। পশুপাখি ও বন্য প্রাণীর শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট হতে পারে, এমন কোনো কাজ উদ্যানে করা হয় না। বাইরের থেকে কোনো শিকারিও নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতরে ঢুকতে পারেন না। বাংলাদেশে এ রকম ২০টি উদ্যান রয়েছে। তবে সরকারিভাবে ঘোষিত জাতীয় উদ্যান হলো ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরে এর অবস্থান। ১২ হাজার ৪০৯ একর জমি নিয়ে গড়া এই উদ্যানে একসময় দেখা যেত বাঘ, কালো চিতা, চিতা, হাতি ও ময়ূরের মতো বন্য প্রাণী। এখনো ভাওয়ালে গড়ে ৬৪ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। উদ্ভিদ আছে প্রায় ২২১ প্রজাতির। আমাদের আজকের আলোচনা বিশ্বের সেরা পাঁচ জাতীয় উদ্যান নিয়ে। এই তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো উদ্যান। তাই আগেই তোমাদের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কথা একটু জানিয়ে দিলাম। এখন চলো বিশ্বের সেরা জাতীয় উদ্যানগুলো সম্পর্কে জানি।

ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান, যুক্তরাষ্ট্র

ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানে নেকড়ে
ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

১৮৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্র আইন পাস করে ইয়োলস্টোনকে জাতীয় উদ্যানে প্রতিষ্ঠা করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইয়োমিং রাজ্যে অবস্থিত। বিশ্বের প্রথম জাতীয় উদ্যানও এটি। আয়তন প্রায় ৮ হাজার ৯৮০ বর্গকিলোমিটার। এখানে রয়েছে হ্রদ, নদ-নদী ও পর্বতমালা। উত্তর আমেরিকার বেশ কিছু বড় হ্রদ এই উদ্যানে অবস্থিত। এখানে স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ, সরীসৃপসহ শতাধিক প্রজাতি বাস করে। ভালুক, বাইসন ও নেকড়ে দেখতে হাজার হাজার পর্যটক এই উদ্যানে ভিড় করেন। স্থানীয় আমেরিকানরা এ অঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার বছর ধরে বাস করছেন।

সেরেঙ্গেটি জাতীয় উদ্যান, তানজানিয়া

সেরেঙ্গেটি জাতীয় উদ্যানে ওয়াইল্ড বিস্ট
ছবি: সেরেঙ্গেটি জাতীয় উদ্যান সাফারি

তানজানিয়ায় অবস্থিত সেরেঙ্গেটি ন্যাশনাল পার্ক প্রায় ১৪ হাজার ৭৬৩ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। পার্কটি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উদ্যানে প্রায় ১৫ লাখ নীল ওয়াইল্ডবিস্ট রয়েছে। জেব্রা আছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার। আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩ হাজার সিংহের আবাসস্থল এই সেরেঙ্গেটি জাতীয় উদ্যানে। পাশাপাশি এখানে আরও রয়েছে আফ্রিকান হাতি, চিতা, আফ্রিকান মহিষসহ আরও অনেক প্রাণী। তবে উদ্যানটির বন ধীরে ধীরে কমছে। হুমকির মুখে পড়ছে পশুপাখিও।

আরও পড়ুন

ব্যানফ জাতীয় উদ্যান, কানাডা

ব্যানফ জাতীয় উদ্যানে বুনো ভাল্লুক
ছবি: ব্যানফ লেক অ্যান্ড লুইস

কানাডার সবচেয়ে পুরোনো উদ্যান এটি। ১৮৮৫ সালে রকি মাউন্টেনস পার্ক নামে এটি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় ৬ হাজার ৬৪১ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এ উদ্যানের বিস্তৃতি। এখানে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যেই বরফের দেখা পাবেন। সঙ্গে রয়েছে বিশাল বনাঞ্চল। বছরে ৩০ লাখের বেশি পর্যটক আসে এ উদ্যানে। ফলে কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে এটি। এখানে ৫৬টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতি রয়েছে। ভালুক, শিয়াল, বাইসন, হরিণ, বাজপাখি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আছে হাজার হাজার প্রজাতির গাছ। এই উদ্যানে প্রায় ১০ হাজার ৩০০ বছর আগের আদিবাসীদের বসবাসের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

তরেস দেল পাইন জাতীয় উদ্যান, চিলি

তরেস দেল পাইন জাতীয় উদ্যানে দেখা যাবে গুয়ানাকো
ছবি: পিগমি এলিফেন্ট

চিলির পাতাগোনিয়ায় অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যান। এখানে রয়েছে পর্বতমালা, হ্রদ, হিমবাহ ও নদী। উদ্যানটি প্রায় ১ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। বছরে প্রায় আড়াই লাখ পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিদেশি পর্যটক। এখানে গুয়ানাকো একটি প্রাণী দেখা যায়। এটিকে বলা হয় দক্ষিণ আমেরিকার উট। এ ছাড়া শিয়াল ও বন বিড়ালের পাশাপাশি ১৫ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। বন্য প্রাণী দেখার চেয়ে এখানকার পাহাড়-পর্বত দেখতে মানুষ বেশি আসেন। তা ছাড়া নানা ধরনের গাছপালা তো আছেই। প্রায় ৭ প্রজাতির অর্কিড ও ৮৫ প্রজাতির বিভিন্ন দেশের উদ্ভিদ রয়েছে। ১৯৫৯ সালে উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন অবশ্য এর নাম ছিল ‘গ্রে লেক পর্যটন উদ্যান’। পরে ১৯৭০ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় তরেস দেল পাইন-জাতীয় উদ্যান।

আরও পড়ুন

ক্রুগার জাতীয় উদ্যান, দক্ষিণ আফ্রিকা

ক্রুগার জাতীয় উদ্যানে জেমসবক
ছবি: আফ্রিকান ব্লু

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক। সংক্ষেপে বলে কেএনপি। এটি প্রায় ১৯ হাজার ৬২৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ১৯২৬ সালে আফ্রিকার প্রথম জাতীয় উদ্যান হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উদ্যানের উত্তরে রয়েছে জিম্বাবুয়ে এবং পূর্বে মোজাম্বিক। ২০১১ সালে এই উদ্যানের বন্য প্রাণী হিসাব করা হয়েছিল। সিংহ, চিতা, হাতি, গন্ডার, জেব্রা—কী নেই এই উদ্যানে। এখানে সাদা ও কালো, দুই ধরনের গন্ডার দেখা যায়। ১২ হাজারের বেশি সাদা গন্ডার রয়েছে উদ্যানটিতে। জেব্রা ৩৫ হাজারের বেশি। মহিষ আছে প্রায় ৩৭ হাজার। হাতি ১৩ হাজারের বেশি। জলহস্তী, কুমির, হায়না, ইম্পালাসহ আমাদের পরিচিত-অপরিচিত অনেক প্রাণীর দেখা মিলবে এ উদ্যানে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

আরও পড়ুন