প্রতিবছর কেন মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বাড়ছে

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট।এএফপি

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার। তবে আজ থেকে অনেক বছর পর হয়তো জোর দিয়ে এ সংখ্যা আর বলা যাবে না। কারণ, এভারেস্টের উচ্চতা তখন আরও বেড়ে যাবে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ। এভারেস্টের উচ্চতা এখনো বাড়ছে। প্রতিবছর ২ থেকে ৫ মিলিমিটার করে বাড়ে। এ হারে বাড়তে থাকলে আগামী ২০০ থেকে ৫০০ বছরের মধ্যে এভারেস্টের উচ্চতা আরও ১ মিটার বেড়ে ৮ হাজার ৮৫০ মিটার হতে পারে। উচ্চতা বাড়ার হার হয়তো খুব কম, কিন্তু তবু বাড়ে। হাজার হাজার বছর পর এই সামান্য উচ্চতাও অনেক পার্থক্য তৈরি করবে। প্রশ্ন হলো, কেন মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বাড়ে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পেছনে আছে এক নদীর কারসাজি! প্রশ্ন করতে পারো, নদী কি পাহাড় বড় করতে পারে? ব্যাপারটা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটা সত্যি। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জেনেছেন, এভারেস্টের কাছে থাকা অরুণ নদীর জন্য এভারেস্টের উচ্চতা প্রতিবছর বাড়ে।

আজ থেকে অনেক বছর আগে অরুণ নদী গতিপথ বদলেছিল। নতুন পথ তৈরি করার সময় এটি বিশাল এক গিরিখাত তৈরি করে। নদী যখন কাদামাটি, পাথর ও মাটি সরিয়ে নেয়, তখন আশপাশের পাহাড়গুলো চাপতে থাকে। এ কারণেই এভারেস্টের মতো পাহাড়গুলোর একটু একটু করে উচ্চতা বাড়ে। এ প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড’। সহজ করে বললে, যখন কোনো জায়গা থেকে প্রচুর মাটি বা পাথর সরে যায়, তখন সেই জায়গায় চাপ কমে যায়। আর পৃথিবীর ভেতরের শক্তি সেটিকে ধীরে ধীরে ওপরে ঠেলে দেয়।

বিষয়টা আরেকটু সহজ উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি। ধরো, তুমি একটা স্প্রিংয়ের টেবিল বানালে। সেই টেবিলে ২০ কেজি চাল রাখলে। এতে টেবিল একদম নিচে মাটির কাছাকাছি নেমে গেল। এখন তুমি যদি টেবিল থেকে ৫ কেজি চাল সরিয়ে নাও, তাহলে টেবিলটা একটু ওপরে উঠবে। যদি আরও এক কেজি চাল সরাও, তাহলে আরেকটু ওপরে উঠবে। এভাবে তুমি যত চাল সরাবে, টেবিল তত ওপরে উঠতে থাকবে। এই বিষয়টাকেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলে আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড। মাউন্ট এভারেস্টের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৮৯ হাজার বছরে এভারেস্ট প্রায় ১৫ থেকে ৫০ মিটার উঁচু হয়েছে! শুধু এভারেস্টই নয়, এর আশপাশের লোৎসে আর মাকালু পাহাড়ও একইভাবে বাড়ছে। এর মধ্যে মাকালু পাহাড় সবচেয়ে বেশি উঁচু হয়েছে। কারণ, এটি অরুণ নদীর সবচেয়ে কাছাকাছি। অদ্ভুত এই প্রাকৃতিক ঘটনার একটা নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, ড্রেনেজ পাইরেসি। প্রায় ৮৯ হাজার বছর আগে অরুণ নদী কোশি নদীর সঙ্গে মিশে যায়। ফলে বিশাল পরিমাণ পানি নতুন পথে প্রবাহিত হতে থাকে। এই অতিরিক্ত পানি অনেক বেশি শক্তি নিয়ে আশপাশের মাটি ও পাথর ধুয়ে নিয়ে যায়। আর এর ফলে ওই এলাকা হালকা হয়ে যায়। তখন পৃথিবীর অভ্যন্তরের চাপ এই জায়গাগুলোকে আরও ওপরে তুলে দেয়। অনেকটা ওপরে বলা স্প্রিংয়ের মতো।

বিজ্ঞানীরা এই পরিবর্তন পরিমাপ করতে জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তাতে দেখা গেছে, প্রতিবছর এভারেস্ট এবং এর আশপাশের পাহাড়গুলো একটু একটু করে বাড়ছে। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ন্যাচার জিওসায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে এভারেস্টের উচ্চতা যেমন বাড়ে, তেমনি কমেও। এ জন্য অবশ্য ভূমিকম্প দায়ী। ২০১৫ সালে নেপালের বড় ভূমিকম্পে এভারেস্টের উচ্চতা সামান্য কমেছিল। এরপর আবার নিজ গতিতে বাড়তে শুরু করেছে এর উচ্চতা। প্রকৃতি যেন নিজের মতো করে এক অদ্ভুত খেলা খেলছে। আর বিজ্ঞানীরা সেই খেলা বুঝতে গবেষণা করে চলেছেন দিনরাত। কে জানে, হয়তো অনেক বছর পর এভারেস্টের উচ্চতা আরও বেড়ে যাবে। আর তখন নতুন অভিযাত্রীরা এভারেস্টের চূড়ায় উঠে মুখোমুখি হবে আরও নতুন বিস্ময়ের!

সূত্র: পপ সায়েন্স, স্কাই নিউজ ও নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন