ইন্টারন্যাশনাল লাইটনিং ডিটেকশন কনফারেন্সের দেওয়া হিসাব অনুসারে বজ্রপাতে প্রতিবছর ২৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। ২০১৭ সালের জুন মাসে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ২২ জন মানুষ প্রাণ হারায় আমাদের দেশে। তার আগের বছর মে মাসে এক দিনেই মারা যায় ৮২ জন মানুষ।
বজ্রপাত কেন হয়?
বজ্রপাত আসলে বিদ্যুতের প্রবাহ ছাড়া কিছুই নয়। সাধারণত পুঞ্জ-জলদ মেঘ (Cumulonimbus cloud) থেকে এর সৃষ্টি। বায়ুর মধ্য দিয়ে মেঘের এগিয়ে যাওয়ার সময় এর বরফ কণাগুলো (হিমায়িত বৃষ্টিকণা) একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেতে থাকে। এই ধাক্কার ফলে তৈরি হয় বৈদ্যুতিক চার্জ বা আধান। একটু পরই পুরো মেঘ আধানে ছেয়ে যায়। ধনাত্মক আধান বা প্রোটন কণা স্থান নেয় মেঘের ওপরের দিকে। আর ইলেকট্রন বা ঋণাত্মক আধান অবস্থান নেয় নিচের দিকে। এই ঋণাত্মক আধান ভূমির ধনাত্মক আধানকে আকর্ষণ করে। ভূমির উঁচু হয়ে থাকা কোনো অংশ যেমন গাছ, মানুষ বা পাহাড়ে এই ধনাত্মক আধানরা এসে জড়ো হয়। মেঘের ঋণাত্মক আধানের সঙ্গে একসময় এর সংযোগ তৈরি হয়। আর তাতেই ঘটে বজ্রপাত।
বজ্রপাতের তাপমাত্রা ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। বজ্রপাতের একটু পরই শোনা যায় গুড়ুম! এটা হওয়ার কারণ হলো ওপর থেকে নিচের দিকে বিদ্যুৎ আসার সময় বায়ু সরে গিয়ে ওপর থেকে নিচের দিকে একটি ফাঁকা সুড়ঙ্গের মতো অঞ্চল তৈরি হয়। বজ্রপাতের পর আবার বায়ু নিজের জায়গায় ফিরে আসে। এ সময় তৈরি হয় শক ওয়েভ। এটাকেই আমরা বজ্রধ্বনি হিসেবে শুনি। বজ্রধ্বনি বিদ্যুচ্চমকের পর দেখার কারণ হলো আলোর তুলনায় শব্দের বেগ অনেক কম।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে
ঘর থেকে বেরোনোর আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নাও। বর্তমানে অনলাইনে ওয়েদার ডটকমসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস থাকে।
আগে থেকেই বাইরে থাকলে ঝোড়ো মেঘের আনাগোনা দেখলে ও মেঘের গুড়ুম গুড়ুম শুনলে গাড়ি (জানালা আটকে দিয়ে) বা কোনো ভবনে দ্রুত আশ্রয় নাও। বৃষ্টি শুরু হলে নিরাপদ জায়গায় যাব, এমনটি না ভেবে আগেই আশ্রয় নাও। বৃষ্টির আগেই বজ্রপাত হতে পারে।
আশপাশে আশ্রয় নেওয়ার মতো কিছু না পেলে পানি, ধাতব জিনিস ও গাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকো। কোনো স্থানের সবচেয়ে উঁচু জায়গাটিতেই বজ্রপাত হয়। ফলে গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
হয়তো শুনে থাকবে, মাটিতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লে গল্পের ভালুকের মতো বজ্রপাতও কিছু করে না। এতে বরং ভূমির বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে তুুলা না হোক, অন্তত কানে আঙুল দিয়ে রাখতে পারো।
বাসায় থাকলে কম্পিউটার, টেলিভিশন, টেলিফোনসহ ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্টগুলো ব্যবহার কোরো না। তারযুক্ত দেয়াল থেকেও দূরে থাকো।
বারান্দা, জানালা ও দরজা থেকে একটু দূরে থাকো।
সর্বশেষ বজ্রপাত চোখে পড়ার অন্তত ৩০ মিনিট পার হওয়ার আগে বের না হওয়াই উত্তম।