পৃথিবী থেকে ডাইনোসর হারিয়ে গেল কীভাবে
আজ থেকে ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে বাস করত ডাইনোসর। পৃথিবী ছিল বিশালাকার সব ডাইনোসরের দখলে। সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীও ছিল। একদিন বিশালাকার এক গ্রহাণু আঘাত করল পৃথিবীকে। গ্রহাণুটা ব্যাস ছিল প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার। এত বড় গ্রহাণুর আঘাত মানে পৃথিবীতে একসঙ্গে এক হাজার কোটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের সমান। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে দুইবার পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। অবশ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে অনেকবার। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র দুইবার—জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে। এতে প্রায় ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ মারা গেছে। এখন নিজেই চিন্তা করে দেখ, ১ হাজার কোটি পারমাণবিক বোমা একসঙ্গে পৃথিবীতে বিস্ফোরণ করলে, পৃথিবীর আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে?
সে যুগেও হয়েছিল এই অবস্থা। প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রাণী এই গ্রহাণুর আঘাতেই মারা গিয়েছিল। তারপরেও যে ২৫ শতাংশ বেঁচে ছিল, সেগুলোও অল্পদিনের মধ্যে মারা যায়। কারণ, গ্রহাণুর আঘাত ১৫০ কোটি টন ধোঁয়া তৈরি হয়েছিল। এত ধোঁয়ার কারণে পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে পারছিল না। আলো না থাকলে গাছপালা খাদ্য তৈরি করবে কীভাবে? সালোকসংশ্লেষণ ছাড়া তো গাছ নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আর গাছ যদি না থাকে, তাহলে প্রাণীরা খাবার কোথায় পাবে?
আগেই বলেছি, ডাইনোসরগুলো তৃণভোজী ও মাংসাশী ছিল। যেগুলো তৃণভোজী সেগুলো গাছ না থাকার কারণে না খেতে পেয়ে ধীরে ধীরে মারা গিয়েছিল। ব্রাচিওসরাস ডাইনোসররা প্রতিদিন গড়ে ৪০০ কেজি পাতা খেত। হঠাৎ গাছ না থাকলে এদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। তৃণভোজী প্রাণী মারা যাওয়ায় মাংসাশী প্রাণীগুলোরও খাবার কমতে শুরু করল। কারণ, তৃণভোজী প্রাণী না থাকলে ওরা খাবে কী! পুরো খাদ্যশৃংখল গেল নষ্ট হয়ে। তাছাড়া সূর্যের আলো পৃথিবীতে না পৌঁছানোর কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছিল। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল প্রায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন ঢাকার তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হঠাৎ করে যদি তাপমাত্রা মাইনাস ৮ ডিগ্রিতে চলে যায়, তাহলে বেঁচে থাকাই মুশকিল হবে। সবকিছু জমে বরফ হয়ে যাবে। এই তাপমাত্রায় আমরা অভ্যস্ত নই। তাই আমাদের সমস্যা আরও বেশি হবে। ডাইনোসরদেরও হয়েছিল সেই অবস্থা। প্রচণ্ড শীতে মারা গেছে অনেক ডাইনোসর। এরা আকারে বড় হওয়ার কারণে বেঁচে থাকা আরও মুশকিল হয়ে পড়েছিল।
এতকিছুর পরেও হয়ত কিছু ডাইনোসর পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে বেঁচে ছিল। কিন্তু সেগুলোও বেশিদিন বাঁচতে পারেনি। এমন বড় আকারের একটা গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করলে সুনামি, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার কথা। আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসার কথা লাভা। প্রায় ১১ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার কথা। আর মহাশূন্য থেকে গ্রহাণু এসে পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে তা এক জায়গায় থাকার কথা না। আছড়ে যাবে অনেকটা দূর। আশপাশের সবকিছু ছিটকে ওপরে উঠে যাবে। কিছু কিছু জিনিস এত ওপরে উঠবে যে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যাবে। বাকিগুলো আবার পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে। সেগুলো আর তখন মাটি বা গাছ থাকবে না। জ্বলন্ত আগুন হয়ে যাবে সবকিছু। সে যুগেও হয়েছিল এমনটাই। তাই ডাইনোসররা এসবের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় ছিল না।
তবে হ্যাঁ, একটা উপায় হতে পারত। তাতে আবার যদি কিন্তু আছে। গ্রহাণুটা যখন পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল, তারচেয়ে আর এক ঘণ্টা আগে বা পরে পড়লে হয়তো বিষয়টা অন্যরকম হতে পারত। বুঝিয়ে বলছি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, গ্রহাণুটা এসে পড়েছিল মেক্সিকান উপত্যকায়। সেখানে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত ও ১৯ কিলোমিটার গভীর খাদ তৈরি হয়েছে। এখন সেটির নাম চিক্সালাব খাঁদ। যদি আর এক ঘণ্টা আগে ওটা পৃথিবীতে আঘাত করত, তাহলে এখানে পড়ত না। সেক্ষেত্রে গ্রহাণুটি পড়ত গভীর সমুদ্রে। তাতে ধ্বংসযজ্ঞ হয়তো কিছুটা হলেও কমত। হয়তো বেঁচে যেত কিছু ডাইনোসর। কিন্তু সেরকম যদি কিন্তু হয়নি। তাই আজ পৃথিবীতে নেই কোনো ডাইনোসর।
আচ্ছা, তুমি কী কখনো ভেবে দেখেছ, পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্তি না হলে কী হতো? ওরা কি আমাদের ওপর খবরদারি করত নাকি আমরা ওদের ওপর? এ প্রশ্নের উত্তর দেব পরের লেখায়।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন, হাউ স্টাফ ওয়ার্কস ও পিকাবো কিডস