বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিশোর বই কোনটা?

প্রশ্নটা এইভাবে করলে ভালো হতো, বাংলাদেশের কিশোরদের সবচেয়ে প্রিয় কিশোরপাঠ্য বই কোনটা? কিন্তু এ প্রশ্ন ফেসবুকের দুটো পেজ এবং একটা অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করার পর উত্তর দিয়েছেন সব বয়সের পাঠকেরাই। কাজেই শিরোনামটা এ রকমই করতে হলো, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিশোরগ্রন্থ কোনটা।

এটা একটা চকিত জরিপ। এই জরিপ শতভাগ নির্ভুল নয়; কারণ, যাঁরা উত্তর দিয়েছেন, তাঁরা ফেসবুকে আছেন, এবং তাঁরা কিশোর আলো এবং আনিসুল হকের পেজ ও অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার। কাজেই তাঁরা সব স্তরের বা সব শ্রেণির পাঠককে প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

এখন প্রশ্নের উত্তর যা পাওয়া গেল, তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের কিশোরসাহিত্যে জনপ্রিয়তার সিংহাসন অলংকৃত করছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মন্তব্যকারীরা সবচেয়ে বেশিবার মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম নিয়েছেন বা তাঁর বইগুলোর নাম দিয়েছেন। কিশোরদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তার কোনো তুলনা নেই।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা অনেকগুলো বইয়ের নামই বারবার এসেছে।

সবচেয়ে বেশি এসেছে ‘দীপু নম্বর টু’, ‘আমি তপু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’–এর নাম।

‘আমি তপু’ বিষয়ে একজন লিখেছেন: ‘আমি তপু’, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বইটা পড়লেই কান্না আসে। আমার জীবনটাও এমন। তবে আমার বেলায় মায়ের জায়গায় ভাই ছিল। তপুর মা অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু আমার ভাই সুস্থ ছিল।

আরও পড়ুন

আমার বন্ধু রাশেদ বইটি ভালো লাগার কারণ নিয়ে একজন পাঠকের মন্তব্য: ‘মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে, মানুষ যখন ভয়ে বাড়িঘর ফেলে ভারতমুখী, তখন অনেক কিছুই ছিন্ন করতে হয়েছে। বিশেষ করে বন্ধুর বিদায়ের দৃশ্যটা পড়তে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলাম। কান্না ধরে রাখতে পারিনি। খুবই বেদনাদায়ক ছিল।’

মুহম্মদ জাফর ইকবালের বৃষ্টির ঠিকানার কথাও কেউ কেউ বলেছেন। একজন লিখেছেন: প্রধানত উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র টুম্পার জন্যই উপন্যাসটা আমার পছন্দের। টুম্পার বাবা বুলবুল রায়হানের প্রতিও আমার একপ্রকার শ্রদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে কেন যেন।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের পর সবচেয়ে বেশিবার এসেছে রকিব হাসানের ‘তিন গোয়েন্দা’র নাম। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘অপরাজিত’, ‘পথের পাঁচালী’র নামও এসেছে। যেমন এসেছে সত্যজিৎরায়ের ‘ফেলুদা’র নাম। শাহরিয়ার কবিরের ‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’সহ তাঁর লেখা একাধিক বইয়ের নাম উল্লেখ করেছেন মন্তব্যকারীরা। যেমন ‘পাথারিয়ার খনি–রহস্য’, ‘হানাবাড়ির রহস্য’।

আরও পড়ুন

হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজের কথা বলেছেন কেউ কেউ। একজন বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের ‘সূর্যের দিন’, ‘পুতুল’, ‘বোতলভূত’, ‘অন্যভুবন’, ‘নুহাশ এবং আলাদীনের আশ্চর্য চেরাগ’, ‘পিপলী বেগম’, ‘একি কান্ড’, ‘ভয়ংকর ভুতুড়ে’, ‘ছেলেটা রাক্ষস খোক্কস এবং ভোক্কস’—এ বইগুলোর কথা।

হুমায়ূন আজাদের কিশোরপাঠ্য বইগুলোর নাম এসেছে, যেমন ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’, ‘আব্বুকে মনে পড়ে’, ‘কতো নদী সরোবর’, ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত।’

আরও কতগুলো বইয়ের কথা কেউ কেউ বলেছেন—

  • মামার বিয়ের বরযাত্রী– খান মোহাম্মদ ফারাবী

  • দিলুর গল্প– রাহাত খান

  • ছানার নানাবাড়ি– আনোয়ারা সৈয়দ হক

  • রায়হানের রাজহাঁস– আবু কায়সার

  • পাগলাটে এক গাছবুড়ো– নাসরীন জাহান

  • লাল ঘোড়া আমি– হাসান আজিজুল হক

  • নীল পাহাড়ের গান– শওকত আলী

  • চিক্কোর কাবুক– মাহমুদুল হক  

  • দিলুর গল্প– রাহাত খান

  • উটকো– বুলবন ওসমান

  • বনমোরগের বাসা–হাবীবুর রহমান

  • ঋতু – সুচরিত চৌধুরী

  • সীমান্তের সিংহাসন– সৈয়দ শামসুল হক

  • ঝন্টু পন্টু দের গোয়েন্দাগিরি - লুৎফর রহমান রিটন

  • বাঙালির হাসির গল্প – জসীমউদ্‌দীন

  • টেনিদা সমগ্র– নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

  • জন্মদিনের ক্যামেরা–আমজাদ হোসেন

  • কং পাহাড়ে শয়তান– মাহফুজ রহমান

এ চকিত জরিপ থেকে আমরা কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারব না। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ‘আমি তপু’ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শিশুকিশোরদের প্রিয়তম বই। তবে বইবাজারের হিসেবে ‘দীপু নম্বর টু’ কিন্তু ১ নম্বরেই আছে।

এখন তোমরা দেখো, এই বইগুলোর মধ্যে কোনো কোনটা তুমি পড়েছ, কোনটা পড়োনি। না পড়লে জোগাড় করে নাও। তবে এই কথাও মনে করিয়ে দিই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কথা এসেছে। এসেছে ‘বিষাদসিন্ধু’র কথা। আর আমি তোমাদের ছড়া-কবিতাও পড়তে বলব। সে ক্ষেত্রে সুকুমার রায় থেকে শামসুর রাহমান আল মাহমুদ পড়তে ভুলো না। এর বাইরে অসংখ্য বাংলা বই আছে, যা তোমাদের পড়া উচিত। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের তালিকা দেখেও তোমরা বই বাছাই করতে পারো। এই আলোচনাকে চূড়ান্ত ভেবো না। তুমি তোমার প্রিয় বইয়ের তালিকা করে ফেলো বরং।