হোয়েল শার্ক স্বভাবে খুব নম্র। এ বিশালাকৃতির এই শার্ক বা হাঙর সমুদ্রে বেছে বেছে খাবার খায়। যাকে বলে ‘ফিল্টার ফিডার’। ফিল্টার ফিডার হলো এমন প্রাণীদের খাবার গ্রহণ পদ্ধতি, যারা পানি থেকে ক্ষুদ্র খাদ্য কণাগুলো ফিল্টার বা ছেঁকে খায়। এদের খাদ্য তালিকায় আছে প্ল্যাঙ্কটন, ক্ষুদ্র মাছ, বা অন্যান্য ক্ষুদ্র পোকার দল। হোয়েল শার্ক, ব্লু হোয়েল এবং মান্তা রে—এই বিশালাকৃতির প্রাণীগুলো মুখ হাঁ করে পানি মুখে নেয়। এরপর মুখের বিশেষ ছাঁকনি দিয়ে পানি বের করে দেয়, সঙ্গে খাবার ছেঁকে নেয়। এটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব খাবার গ্রহণের পদ্ধতি। এই খাদ্যাভ্যাসের কারণে এদের বড় প্রাণী শিকারের প্রয়োজন হয় না।
এবার মেক্সিকোর সমুদ্রে হোয়েল শার্ককে আক্রমণ করেছে কিলার হোয়েল বা কিলার তিমি। আক্রমণ করে হোয়েল শার্কের লিভার খেয়েছে কিলার তিমি। মেক্সিকোর বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্রে একটি কিলার হোয়েলের নামকরণ করা হয়েছিল অ্যাজটেক সম্রাটের নামে। এই কিলার তিমিটি একটি তিমি পড বা দলের নেতৃত্ব দেয়। তিমি পড বলে তিমির একটি ছোট দলকে। এরা একসঙ্গে বসবাস করে, শিকার করে, একসঙ্গে চলাচল করে। এটি সাধারণত একই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়। যেখানে মা-তিমি সাধারণত দলের নেতৃত্ব দেয়। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এরা বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যবহার করে। শিকার ধরতে, নিজেদের রক্ষা করতে বা বংশবৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করে। এই কিলার তিমি নিয়মিতভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাছ হোয়েল শার্ক শিকার করছে।
আগেও কিলার তিমিরা (যারা অর্কা নামেও পরিচিত) হোয়েল শার্ককে আক্রমণ করেছে বলে বিচ্ছিন্নভাবে খবর পাওয়া গেছে। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গত শুক্রবার ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হওয়া গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ৫০ বছর বয়সী মকতেজুমার নেতৃত্বে একটি পড অন্তত চারবার এই কাজটি করেছে। গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, এই প্রাণীরা সম্ভবত হোয়েল শার্কদের বেছে বেছে শিকার করছে। আক্রমণের নতুন পদ্ধতি শিখছে এরা।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ঘটেছে চারটি ঘটনা। এর মধ্যে মকতেজুমা তিনটিতে উপস্থিত ছিল। চতুর্থ ঘটনাটি এমন কিলার তিমিদের দ্বারা ঘটেছে, যারা মকতেজুমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বা মকতেজুমার পরিচিত।
হোয়েল শার্ক সাধারণত শান্ত প্রকৃতির বিশালাকার মাছ। বিজ্ঞানীরা জানান, মকতেজুমা ও এর পডের আক্রমণ পরিকল্পিত এবং নির্মম। অর্কাগুলো নিচ থেকে এসে বিশালাকারের তিমির পেটে আঘাত করে। ফলে এরা উল্টে যায়। এরা হোয়েল শার্কের নিম্নাঙ্গের কাছাকাছি কামড়ায়। ফলে এদের রক্তক্ষরণ ঘটে এবং শেষে এরা মারা গিয়ে গভীর সমুদ্রে ডুবে যায়।
এদের খাদ্য তালিকায় আছে প্ল্যাঙ্কটন, ক্ষুদ্র মাছ, বা অন্যান্য ক্ষুদ্র পোকার দল। হোয়েল শার্ক, ব্লু হোয়েল এবং মান্তা রে—এই বিশালাকৃতির প্রাণীগুলো মুখ হাঁ করে পানি মুখে নেয়। এরপর মুখের বিশেষ ছাঁকনি দিয়ে পানি বের করে দেয়, সঙ্গে খাবার ছেঁকে নেয়।
কিলার তিমি পৃথিবীর প্রতিটি মহাসাগরেই বাস করে। কিলার তিমি আসলে ডলফিন পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্য। তবে ডলফিন হলো তিমি বর্গের একটি শাখা। একইভাবে হোয়েল শার্ক কোনো তিমি নয়, বরং শার্ক বা হাঙর। যদিও কিছু তিমির মতো এরাও ফিল্টার ফিডার বা বেছে খাবার খায়।
কিলার তিমির মাত্র একটি প্রজাতি (Orcinus orca) রয়েছে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, অনেক অর্কা দল নির্দিষ্ট বাসস্থান অনুযায়ী পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি জনগোষ্ঠী নির্দিষ্ট প্রাণীদের শিকার করে। যার মধ্যে রয়েছে তিমির বাচ্চা, সিল, স্যামন মাছ, স্টিং রে এবং গ্রেট হোয়াইট শার্ক।