২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। গত ১০ অক্টোবর বুধবার সুইডেনের স্টকহোম থেকে এ বছরের সাহিত্যে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি। হান কাংয়ের লেখায় মানবজীবনের দুঃখ-কষ্টের নানা দিক ও ইতিহাসের সঙ্গে এর সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন ও অনুভূতিগুলোকে খুব তীক্ষ্ণ ও কাব্যিকভাবে বর্ণনা করেছেন তিনি। হান কাং হলেন এশিয়ার প্রথম নারী লেখক, যিনি নোবেল পুরস্কার জিতেছেন।
হান কাংয়ের জন্ম ২৭ নভেম্বর ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় গোয়াংজু শহরে। হান হলেন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক হান সিউং-ওনের মেয়ে। ৫৩ বছর বয়সী এই কথাসাহিত্যিক তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’-এর জন্য ২০১৬ সালে ‘ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ’ জিতেছিলেন।
সাহিত্যে নোবেলজয়ী নির্ধারণ করে সুইডিশ একাডেমি। নোবেল পুরস্কারের উদ্যোক্তা আলফ্রেড নোবেল উইল করে বিষয়টি ঠিক করে গিয়েছিলেন।
১৯০১ সাল থেকে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। হান কাং ১৮তম নারী, যিনি সাহিত্যে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান এ পুরস্কারে জিতেছেন। অন্যান্য বিভাগের নোবেল বিজয়ীদের মতো হান কাং পাবেন একটি সোনার নোবেল মেডেল, একটি সনদ ও মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। বর্তমানে এর বাজারমূল্য ১০ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় হবে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের পর হান হলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রথম নারী। এর আগে ২০২২ সালে ফরাসি লেখিকা অ্যানি এরনো এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।
হান কাং হলেন প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ান, যিনি নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। নোবেল কমিটি তাঁর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তিনি সংগীত ও শিল্পের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘তাঁর কাজ বিভিন্ন ধরনের শৈলীকে একত্র করে নতুন কিছু তৈরি করেছে। এই কাজগুলোয় সহিংসতা, শোক ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মতো জটিল বিষয়গুলোকেও তুলে ধরেছেন তিনি।’
২০১৬ সালে হান কাংয়ের সাহিত্যিক জীবনে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়। যখন তিনি ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ বইটির জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ পান। বইটি যদিও প্রায় এক দশক আগে প্রকাশিত হয়েছিল কিন্তু ডেবোরা স্মিথের ইংরেজি অনুবাদ ২০১৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরই এটি বিশ্বব্যাপী পাঠকদের কাছে পৌঁছে যায়।
হান কাংয়ের নাম ঘোষণার পর তাঁর অনুভূতি জানার জন্য সুইডিশ কমিটি ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সেক্রেটারি ম্যাটস মালম বলেন, ‘তিনি একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যস্ত ছিলেন। মাত্র ছেলের সঙ্গে রাতের খাবার শেষ করেছেন। তিনি এত তাড়াতাড়ি এমন একটি খবর শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। পরে আমরা ডিসেম্বর মাসে নোবেল পদক তাঁর হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে আলোচনা করি।’
ফোনকলে হান কাং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি সত্যিই অবাক হয়েছি ও সম্মানিত বোধ করছি। কোরিয়ান সাহিত্য আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। এই পুরস্কার কোরিয়ান সাহিত্যের পাঠক ও আমার সাহিত্যিক বন্ধুদের জন্যও একটি বিশেষ উপহার।’
১৯৯৩ সালে পাঁচটি কবিতা প্রকাশ করে তিনি সাহিত্যজগতে পা রাখেন। এরপর একটি ছোটগল্পের মাধ্যমে কথাসাহিত্যে তাঁর পথচলা শুরু। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ইনস্টিটিউট অব আর্টসের সৃজনশীল লেখার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যচর্চা করেন। তাঁর লেখা ৩০টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি তাঁর ষষ্ঠ উপন্যাস নিয়ে কাজ করছেন।
গত বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন নরওয়েজিয়ান লেখক ইয়োন ফসে। তিনি উদ্ভাবনী নাটক ও ভাষাহীনের মুখে ভাষা দেওয়া গদ্যের জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান