কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে গরমের তীব্রতা ছিল প্রচণ্ড। ঘর থেকে বাইরে বের হলে যেন গরমে গা পুড়ে যায়। বৃষ্টি নামায় এখন অবশ্য এই গরম থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। তখন দেশে তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৩ থেকে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। কিন্তু এরচেয়ে গরম বা উষ্ণ স্থান রয়েছে পৃথিবীতে। সেটা কোথায় এবং পৃথিবীর উষ্ণ স্থান আসলে কতটা উষ্ণ, তা জানার চেষ্টা করব এই লেখায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ স্থানের নাম ডেথ ভ্যালি। এই স্থানটির অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই। তখন তাপমাত্রা ছিল ৫৬.৭ ডিগ্রি। তবে গ্রীষ্মের সময় এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। তবে এই তাপমাত্রা হলো ওই অঞ্চলের বাতাসের তাপমাত্রা। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এরচেয়ে অনেক বেশি থাকে। বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার।
ডেথ ভ্যালি হলো একটা মরুভূমি। এখানে শুধু বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ। সেখানে কয়েক শ মানুষও বাস করে। তারা কীভাবে এই উষ্ণস্থানে বাস করে, তা অন্য দিন লিখব। আজ বরং জানা যাক, এই স্থানের নাম কেন ডেথ ভ্যেলি হলো।
কিছুদিন আগে যখন দেশে প্রচণ্ড গরম পড়েছিল, তখন আমরা দুই ধরনের তাপমাত্রা টের পেয়েছি। খালি পায়ে হাটলে কিংবা স্বাভাবিকভাবে ঘরে বসে থাকলে যে তাপমাত্রা টের পাই, সেটা হলো পৃষ্ঠের তাপমাত্রা। অথবা তোমার যদি সাইকেল কিংবা গাড়ি থাকে, দেখবে সেটা রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখলে এর আসন গরম হয়ে যায়। সেটা হোক সাইকেল কিংবা গাড়ি। এই তাপমাত্রাটা হলো পৃষ্ঠের তাপমাত্রা। আর হাঁটার সময় গায়ে যে বাতাস লাগে, সেই বাতাসের যে তাপমাত্রা, তা–ই হলো বাতাসের তাপমাত্রা। ডেথ ভেলির বাতাসের গড় তাপমাত্রাই থাকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।
আর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কিন্তু আরও বেশি। ১৯৭২ সালের ১৫ জুলাই, ডেথ ভ্যালির পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গরমের চেয়ে তিনগুণ বেশি গরম। আর মাত্র কয়েক ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ালে পানি ফুটে বাষ্প হয়ে যাবে। এরপর বিভিন্ন সময় এরচেয়ে বেশি তাপমাত্রার দাবি করা হয়েছে ডেথ ভ্যালিতে, কিন্তু সে তাপমাত্রা কেউ পরীক্ষা বা যাচাই করে দেখেনি। তাই তা আর এখানে বলছি না। তবে লিবিয়ায় ১৯২২ সালে তাপমাত্রা বেড়ে ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। তবে ২০১২ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে লিবিয়ার তাপমাত্রা ঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। এই তাপমাত্রা আরও কম ছিল।
ডেথ ভ্যালি হলো একটা মরুভূমি। এখানে শুধু বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ। সেখানে কয়েক শ মানুষও বাস করে। তারা কীভাবে এই উষ্ণস্থানে বাস করে, তা অন্য দিন লিখব। আজ বরং জানা যাক, এই স্থানের নাম কেন ডেথ ভ্যেলি হলো।
১৮৫০ সালের দিকে এখানে একদল মানুষ এসে বাস করতে শুরু করে। তখন অবশ্য শীতকাল ছিল। কিন্তু শীতকালেও সেখানে প্রচণ্ড গরম থাকে। এই গরমের কারণে দলের অনেকে মারাও গেছেন। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে হয়ত বাকিদেরও এখানেই মরতে হবে। এই যখন ভাবছেন তারা, ঠিক তখন তাঁদের কাছে দূত হয়ে আসে দুজন যুবক। উইলিয়াম ও রজার্স নামে ওই দুই ব্যক্তি তাঁদের সেখান থেকে উদ্ধার করেন। তারা আসলে হেলিকপ্টারা নিয়ে ওই অঞ্চল দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তাঁদের দেখতে পান। ফলে প্রাণে বেঁচে যায় বেড়াতে যাওয়া কিছু মানুষ। হেলিকপ্টারে উঠে তারা নিচের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘বিদায় ডেথ ভ্যালি’। এর পর থেকে ওই স্থানের নাম হয়ে যায় ডেথ ভ্যালি।
ডেথ ভ্যেলিতে সব সময় মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকলেও মানুষের কিন্তু সেখানে যাওয়া বন্ধ হয়নি। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে যায়। দেখার মতো বেশ কিছু জায়গা আছে সেখানে। যেমন টেলিস্কোপ পিক হলো ডেথ ভ্যালির সর্বোচ্চ উচ্চ স্থান। সেখান থেকে দেখা যায় রঙবেরঙের পাথরের পাহাড়। আবার প্রচলিত আছে, এখানকার পাথর নাকি নিজেই চলেফেরা করতে পারে। একটা নির্দিষ্ট পাথরকে কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা হলে দেখা যাবে, সেটা জায়গা পরিবর্তন করে আঁকাবাঁকা পথ করে এগিয়ে গেছে সামনে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটা বাতাসের কারণে হয়। তবে এটাও একটা রহস্য বটে। কারণ, পাথরগুলোর ওজনও তো কম নয়। কয়েক শ টন হতে পারে একেকটা পাথর। আরেকটা তথ্য জানিয়ে রাখি। তুমি যদি পৃথিবীর সবেচেয় উষ্ণতম এই স্থানে ঘুরতে যেতে চাও, তাহলে ফেব্রুয়ারিতে যাওয়া ভালো। তখন ওখানকার তাপামাত্রা সবচেয়ে কম থাকে!
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ও সায়েন্স ডট অর্গ