মহাকাশচারীদের আশ্রয় হতে পারে চাঁদে খুঁজে পাওয়া নতুন গুহা

গুহাটি চাঁদের ‘সি অব ট্র্যাঙ্কুইলিটি’ বা ট্র্যাঙ্কুইলিটি খাদ অঞ্চলে অবস্থিত।

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। অনেককাল ধরে চাঁদ মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় উপগ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করছেন। এর গঠন, ইতিহাস এবং সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন। এবার বিজ্ঞানীরা চাঁদের বুকে একটি বিশাল গুহা আবিষ্কার করেছেন। যা মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই গুহা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, এর ভেতরে কী রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে মানুষের কীভাবে কাজে লাগতে পারে—তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। চাঁদের এই নতুন আবিষ্কার মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দিনের বেলায় তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে আবার রাতে মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এ ছাড়া চাঁদে সৌর বিকিরণের মাত্রা পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫০ গুণ।

এই অভূতপূর্ব আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে ইতালীয় বিজ্ঞানীদের একটি দল। তাঁদের পরিচালিত গবেষণার ফলাফল নেচার অ্যাস্ট্রনমি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, চাঁদের এই গুহা ভবিষ্যতে মানুষের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করতে পারে এবং চাঁদে বসতি স্থাপনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন

গুহাটি চাঁদের ‘সি অব ট্র্যাঙ্কুইলিটি’ বা ট্র্যাঙ্কুইলিটি খাদ অঞ্চলে অবস্থিত। এই গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে ঐতিহাসিক অ্যাপোলো ১১ মহাকাশযানের অবতরণস্থল থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার দূরে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গুহাটি প্রায় ৪০ মিটার চওড়া, ৯ মিটার লম্বা এবং অন্তত ১০০ মিটার গভীর। ইতালির ইউনিভার্সিটি অব ট্রেন্টোর অধ্যাপক লরেঞ্জো ব্রুজজোন জানিয়েছেন, ‘এই গুহাগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা অনুমান করে আসছিলেন। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো আমরা এদের আসল অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছি। এর আগে আমরা শুধু গুহা সম্পর্কে তাত্ত্বিকভাবেই জানতাম।’

আরও পড়ুন

চাঁদ নিয়ে আরও জানতে নাসার যে মহাকাশযান চাঁদের চারপাশে ঘুরছে, সেটি হলো লুনার রিকনেইস্যান্স অরবিটার (এলআরও)। এই মহাকাশযানে একটি ছোট্ট রেডিও যন্ত্র আছে, যাকে মিনি-আরএফ বলা হয়। এই যন্ত্রটি ২০১০ সাল থেকে চাঁদের বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। বিজ্ঞানীরা সেই সংগ্রহ করা তথ্যগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। বিজ্ঞানীরা এই তথ্যগুলোকে একটি নতুন পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, চাঁদের ভূপৃষ্ঠের নিচে একটি গুহা লুকিয়ে আছে। এই গুহার অস্তিত্বের প্রমাণ তাঁরা রাডারের প্রতিফলন থেকে পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণা গুহার অস্তিত্ব প্রমাণে সফল হয়েছে। যদিও এটি চাঁদে আবিষ্কৃত প্রথম গুহা, তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, চাঁদের ভূপৃষ্ঠের নিচে এ ধরনের আরও অনেক গুহা লুকিয়ে থাকতে পারে।

চাঁদের এই গুহা আবিষ্কার চাঁদে মানুষের বসতি স্থাপনের দরজাও খুলে দিতে পারে। আমরা জানি, চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং বিকিরণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। দিনের বেলায় তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে আবার রাতে মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এ ছাড়া চাঁদে সৌর বিকিরণের মাত্রা পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫০ গুণ।

এই গুহাগুলো মহাকাশচারীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করতে পারে। যেখানে তাঁরা চাঁদের বিরূপ পরিবেশ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন। এই আবিষ্কার চাঁদে বসতি স্থাপনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে।

সূত্র: স্পেস ডট কম

আরও পড়ুন