স্নাতক পাস করতে লাগাতে হবে গাছ

ধরো, তুমি স্কুল বা কলেজের শিক্ষার্থী। তোমার স্বপ্ন স্নাতক পাস করে উজ্জ্বল করবে মা–বাবার মুখ। নিজেকে পরিণত করবে দেশের সম্পদে। এ অবস্থায় তোমাকে যদি বলা হয়, স্নাতক পাস করতে হলে তোমাকে গাছ লাগাতে হবে। এটা যদি বাংলাদেশের সংবিধানে আইন করা হয়, তুমি কীভাবে দেখবে ব্যাপারটিকে?

তোমার চোখে বিষয়টি যেমনই হোক না কেন, এটাই একটি দেশের আইনে পরিণত হয়েছে। স্নাতক পাস করতে হলে মোট ১০টি গাছ লাগাতে হবে একজন শিক্ষার্থীকে। অভিনব এই আইন প্রণয়ন করেছে ফিলিপাইন।

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে সাত হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র ফিলিপাইন। মোট আয়তন ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৬৪ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যাও প্রায় ১০ কোটি। ফিলিপাইনে বন উজাড় একটি প্রাথমিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বন উজাড়কারী দেশের তালিকার ওপরের দিকে আছে ফিলিপাইনের নাম। বিংশ শতাব্দীতে দেশটিতে মোট ভূমির ৭০ শতাংশ ছিল বন। সেই হার এখন নেমে এসেছে মাত্র ২০ শতাংশে। বিষয়টি ফিলিপাইন সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে নতুন এই আইনের ফলে দেশটিতে আবার বনাঞ্চল তৈরি হবে।

২০১৯ সালের ১৫ মে ফিলিপাইনের কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে পাস করা হয় এ বিল। পরিবেশ রক্ষার কথা চিন্তা করে বিলটি পেশ করেছিলেন গ্যারি আলেজানো। বিলটির নাম ছিল ‘গ্র্যাজুয়েশন লিগ্যাসি ফর দ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যাক্ট ২০১৬’। বিলে বলা হয়, মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের শিক্ষার্থীদের স্নাতক পাস করতে হলে প্রত্যেককে মোট ১০টি গাছ লাগাতে হবে। স্নাতক পাস করার আগে যেকোনো সময়ে শিক্ষার্থীরা গাছ লাগাতে পারবেন। তবে প্রমাণস্বরূপ গাছ লাগানোর দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে হবে। আর সম্পূর্ণ বিষয়টি দেখভাল করবেন শিক্ষকেরা।

কোথায় কোথায় গাছ লাগাতে হবে, সে বিষয়েও বিলে বলা হয়েছে। গাছগুলো লাগাতে হবে বনে, সংরক্ষিত এলাকায়, শহুরে এলাকায়, পরিত্যক্ত খনিতে বা আদিবাসী অঞ্চলে। তবে গাছগুলো হতে হবে স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে মানানসই।

ফিলিপাইনে প্রতিবছর ১ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থী প্রাথমিক, ৫০ লাখ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক ও ৫০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে। আইনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে প্রতিবছর ১৭ কোটি ৫০ লাখ গাছ লাগানো সম্ভব হবে। ফলে এই প্রজন্মের হাত ধরেই প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ কোটি গাছ লাগানো সম্ভব।

গ্যারি আলিজানো বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকর বাস্তুসংস্থানের কথা মাথায় রেখেই এই আইনটি প্রণয়ন করেছি। বিষয়টি যখন শিক্ষার্থীদের, তখন এ বিষয়ে তাদের অবদান না রাখার কোনো কারণ নেই। এই গাছগুলো পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শিক্ষার্থীদের জীবন্ত উত্তরাধিকার হয়ে উঠবে।’

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার ও বিবিসি