পৃথিবীতে আছে পাঁচটি মহাসাগর। আছে পঞ্চাশটার মতো সাগর ও হাজারো নদী। এই বিশাল জলজগতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার প্রজাতির মাছ রয়েছে। এসব তথ্যও জোড় দিয়ে বলার উপায় নেই। কারণ, এখন পর্যন্ত আমরা বিশাল সমুদ্রের অল্প অংশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানি। সমুদ্রের অনেক গভীর অঞ্চল সম্পর্কে এখনো আমাদের অজানা, হয়তো ভবিষ্যতে প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে সেসব জানা যাবে। এই জানা ৫ শতাংশের মধ্যে আছে নানা রহস্যময় মাছ। সেগুলোর ব্যাপারে জানলে প্রথমে অদ্ভুত লাগবে, কিন্তু সেগুলো সত্যি। এ রকম বাছাই করা ১০টি তথ্য জানাচ্ছি তোমাদের। মিলিয়ে দেখ তো, এখান থেকে কয়টি সম্পর্কে তুমি জানতে!
স্টারফিশ ও জেলিফিশ কোনো মাছ নয়, এরা সামুদ্রিক প্রাণী। উভয়েরই মস্তিষ্ক ও কঙ্কাল নেই। এরা সরল স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে শরীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ পরিচালনা করে।
সোর্ডফিশ মাছ বছরে প্রায় ৩ কোটি ডিম পাড়ে। এই মাছ বাংলাদেশে তরোয়াল মাছ নামেও পরিচিত। কিন্তু সানফিশ মাছ বছরে সোর্ডফিশের চেয়েও ১০ গুণ বেশি ডিম পাড়তে পারে, বছরে প্রায় ৩০ কোটি!
হাঙর পৃথিবীতে আছে গাছের চেয়েও আগে থেকে। জীবাশ্ম থেকে বিজ্ঞানীরা জেনেছেন, প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে হাঙর ছিল। আর গাছ এসেছে তার ৫ কোটি বছর পরে, অর্থাৎ ৩৫ কোটি বছর আগে। পৃথিবীর অনেক পরিবর্তনের পরেও সমুদ্রে এখনো হাঙর টিকে আছে।
ইউরোপের কিছু প্রজাতির ইল মাছ বাচ্চা জন্মাতে নদী থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে সরগাসো সাগরে পৌঁছায়। এ সময় এদের প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। নির্দিষ্ট নদীতে গিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে আবার ফিরে আসের আগের জায়গায়।
হাড়ের পরিবর্তে হাঙরের দেহ কার্টিলেজ দিয়ে তৈরি। এটি নমনীয় ও মজবুত টিস্যু। আমাদের নাক ও কানের ভেতরেও হাড়ের পরিবর্তে কার্টিলেজ থাকে। এ কারণেই হাঙরের দেহ হালকা এবং দ্রুত ছুটতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীতে ৫০০ প্রজাতির বেশি হাঙর রয়েছে।
বোম্বে ডাক (Bombay Duck) নামটা শুনলেই মনে হয় হাঁসের কোনো প্রজাতি। কিন্তু এটা আসলে মাছের নাম। আরও মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে এই মাছ বেশ জনপ্রিয়। বাংলায় একে বলে লইট্টা। ব্রিটিশ আমলে ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে লইট্টা শুটকি মালগাড়ি মেইল ট্রেনে বোম্বে (মুম্বাই) আসত। ব্রিটিশেরা এই লইট্টা শুটকির চালানকে বলত ‘মেইল’ বা ‘ডাক’। সেই থেকে এ মাছের নাম হয় ‘বোম্বে ডাক’।
বৈদ্যুতিক ইল মাছ সত্যিই একটা ঘোড়া মেরে ফেলার মতো যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। প্রায় ৬০০ ভোল্ট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে ইল মাছ। আগে আমাজন বনে ইল মাছের শকে অনেক ঘোড়া মারা গেছে। মানুষের জন্যও বিপজ্জনক ইল মাছ। সঙ্গে সঙ্গে হার্ট ফেল হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
উড়ন্ত মাছ (flying fish) প্রকৃতির বিস্ময়কর ও আকর্ষণীয় এক প্রাণী। মাছ হয়েও এরা উড়তে পারে। হঠাৎ পানি থেকে লাফিয়ে উড়ে যেতে পারে প্রায় ১৬৪ ফুট বা ৫০ মিটার পর্যন্ত। এ জন্য এরা বিশেষায়িত পেক্টোরাল পাখনা ব্যবহার করে। শিকারের হাত থেকে বাঁচতে এরা উড়ে যায়।
টুনা মাছের কিছু প্রজাতি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে। ব্লুফিন টুনা ৫০ বছরের বেশি বাঁচতে পারে। এরা লম্বায় হয় প্রায় ৬ ফুট। কিছু আবার ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ওজন হতে পারে প্রায় ৬৮০ কেজি।
পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির মাছ সেলফিশ। এরা ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। এদের পাখনা বড় ও নরম হওয়ায় দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে।