মাত্র আট দিনের মহাকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। সেটা ৫ জুনের কথা। কিন্তু আট দিনের জায়গায় প্রায় তিন মাস পরেও পৃথিবীতে ফিরতে পারেননি। কারণ, তাঁরা যে নভোযানে মহাকাশে গেছেন, তাতে ত্রুটি দেখা গেছে। নভোযানটিতে ফুটো হয়ে হিলিয়াম গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল। তা ছাড়া ইঞ্জিনেও কিছু সমস্যা দেখা গেছে। তাই ঝুঁকি নিয়ে ওই নভোযানে আর রাখা হয়নি নভোচারীদের। তাঁদের পাঠানো হয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে।
এরপর ২৪ আগস্ট মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর আর পৃথিবীতে ফেরা হবে না তাঁদের। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা পৃথিবীতে ফিরবেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেই আছেন এই দুই নভোচারী। সেখানে কী করছেন তাঁরা? কীভাবে কাটছে তাঁদের দিন?
তাঁরা দুজনে এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আরও নয়জন নভোচারীর সঙ্গে বাস করছেন। তাঁরা অন্য নভোচারীদের মতো স্লিপিং ব্যাগে ঘুমান। এ ছাড়া বাকি সময়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও ব্যায়াম করেন। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হয় সব নভোচারীকে। তাঁরা দুজনও এই কাজ করেন নিয়মিত। পাশাপাশি নিয়মিত ঘুরে ঘুরে দেখেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি। কয়েকবার স্পেস ওয়াকও (মহাকাশে নভোযানের বাইরে থাকা) করেছেন তাঁরা। মোটকথা, মহাকাশে অবস্থান করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তাঁদের।
তবে আশার কথা হলো, এই দুই নভোচারীকে পৃথিবীতে ফেরাতে ইতিমধ্যে নভোযান পাঠানো হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ড্রাগন ক্যাপসুল। এতে মোট দুজন নভোচারী আছেন। যদিও চারজন নভোচারী যাওয়ার কথা ছিল। যেহেতু সুনিতা ও উইলমোরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে হবে, তাই দুই সিট ফাঁকা রাখা হয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ড্রাগন ক্যাপসুলে ফিরে আসবেন দুই নভোচারী।
মহাকাশযান উৎক্ষেপণ হয়ে গেলেও কেন আরও পাঁচ মাস পরে পৃথিবীতে ফিরবেন তাঁরা? আসলে ক্রু মিশনগুলো সাধারণত প্রায় ছয় মাস দীর্ঘ হয়। এসব মিশনে কোনো বাড়তি ঝুঁকি নেয় না নাসা। তাই একটু বেশি সময় নিয়েই এসব মিশনের কার্যক্রম চলে। তবে এই দুই নভোচারীকে পৃথিবীতে ফেরাতে একটু বাড়তি সতর্কতাই অবলম্বন করছে নাসা। কারণ, ১৯৮৬ সালে চ্যালেঞ্জার মিশন ও ২০০৩ সালের কলম্বিয়া মিশনে ১৪ জন নভোচারী মারা গিয়েছিলেন। সে জন্য আর কোনো মিশনে ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
তবে এত দিন মহাকাশে থাকতে তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না বলেই জানিয়েছেন স্বয়ং সুনিতা। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের দুজনেরই। এর আগে টানা ৩২২ দিন মহাকাশে থেকে সবচেয়ে বেশি দিন মহাকাশে থাকা নারীর রেকর্ড গড়েছিলেন ৫৮ বছর বয়সী সুনিতা উইলিয়ামস। আগেও তিনবার মহাকাশে গেছেন তিনি। আর ৬১ বছরের বুচ উইলমোরেরও এর আগে তিনবার মহাকাশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সূত্র: দ্য উইক জুনিয়র ও স্পেস ডট কম