ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো - ৫
শস্যাগারের ইতিহাস
এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন কাজী আকাশ।
মা দরজা খুলতেই ভেতরে ঢুকলাম আমরা। শস্যাগারটা অন্য রকম লাগছিল আজ। ম্যাজিক্যাল। যেন আগে কখনো দেখিনি। কিন্তু এখন আমি জানি, মা এটা আমাদের কাছে গোপন করেছিল।
‘ওদের চিকিৎসার সব জিনিসপত্র বছরের পর বছর আমি এই ক্যাবিনেটে সংগ্রহ করেছি।’ মা বলেছিল। ‘এখানে কিছু বই আছে, যা তোমাকে সাহায্য করতে পারে। যদিও জাদুকরি প্রাণী সম্পর্কে এখানে কোনো বই নেই। তবে ওসব প্রাণী আর সাধারণ প্রাণী প্রায় একই রকম। একবার আমার কাছে একটা অসুস্থ ডানাওয়ালা শিয়াল এসেছিল। ওটার চিকিৎসার সঙ্গে পাখির চিকিৎসার মিল ছিল। প্রাণীর জন্য কোন চিকিৎসা সবচেয়ে ভালো, তা নির্ধারণ করতে মাঝেমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়। আমার পুরোনো বিজ্ঞান জার্নালগুলো পড়লে বুঝতে পারবে, তোমাকে কী বোঝাতে চাইছি আমি।’
হার্টবিট দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে আমার। মায়ের কথা শেষ হতেই দ্রুত জার্নালগুলোর দিকে ছুটলাম। যেন নিশ্বাস আটকে যাবে। ওই জার্নালগুলোতে নিশ্চয়ই আরও জাদুকরি প্রাণীর ছবি আছে! ওদের দেখার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না।
মাকে উদ্দেশ করে আবার জিজ্ঞাস করলাম, ‘কলিং বেল শুনলেই ওখানে ছুটে যাব? প্রাণীটা কি দরজার পেছনেই দাঁড়িয়ে থাকবে? আর ভেতরে ঢুকে কি বোঝার চেষ্টা করব কী হয়েছে?’
মা মাথা নাড়ল। ‘কিছু প্রাণী কথা বলতে পারে, যেমন পিপ। কিন্তু বেশির ভাগই কথা বলতে পারে না। মনে রাখবে, আমার বই ও পুরোনো জার্নালগুলো তোমাকে সাহায্য করবে। নিশ্চয়ই দায়িত্বটা অনেক বড়। কিন্তু আমি জানি, তুমি তোমার সেরাটা দেবে। আর কোনো জিজ্ঞাসা আছে তোমার?’
মাথার মধ্যে প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। কিন্তু আমি ডানে-বাঁয়ে মাথা নেড়ে বোঝালাম, আর কোনো প্রশ্ন নেই আমার। কারণ, মায়ের যদি আমার ওপর বিশ্বাস থাকে, তাহলে পারব আমি। আশায় বুক বাঁধলাম।
আর যদি সবকিছু সামলাতে হিমিশিম খাই, তাহলে বাবার সাহায্য চাইব। কথা ভাবতেই মনে পড়ল, মা একবারও বাবার কথা বলেনি। বিষয়টা নিশ্চয়ই অদ্ভুত।
‘বাবা কি জানে? সে কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?’
‘তোমার বাবা কোনো জাদুকরি প্রাণী দেখতে পায় না। তুমি পিপের ছবি দেখার আগে ভেবেছিলাম, আমিই একমাত্র মানুষ যে ওদের দেখতে পাই।’ মায়ের মুখটা মলিন হয়ে গেল। মাথা নেড়ে বলল, ‘একবার পিপকে তোমার বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু সে ওকে দেখতে বা শুনতে পায়নি।’
ওয়াও। তাহলে এই সবকিছু শুধু তোমার ও আমার মধ্যে আছে।
আমার মাথায় চুমু খেল মা। ‘আমাকে যেতেই হবে। কিন্তু এক সপ্তাহ পর আবার দেখা হবে! যাওয়ার আগে তোমার বাবাকে জানিয়ে যাব, তুমি এখানে আছ।’
‘দাঁড়াও! যদি কোনো জাদুকরি প্রাণী আসে, আমি কি ওটার ছবি তুলতে পারব?’ আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে এই পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জাদুকরি প্রাণীদের ছবি তুলে রাখা।
মা হেসে টেবিলের একটা ড্রয়ার খুলল। ‘এই যে আমার ক্যামেরা। তুমি এটা ব্যবহার করতে পারো। ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে তা বের করে দেবে। এ জন্য এই ক্যামেরা দিয়ে খুব বেশি ছবি তুলতে পারবে না। তাই হিসাব করে ছবি তুলতে হবে তোমাকে। তা ছাড়া এটা ব্যয়বহুলও। প্রতিটি প্রাণীর একটা করে ছবি তুলবে, ঠিক আছে? আর হ্যাঁ, এখানে…।’ ড্রয়ার খুঁজে একটা জার্নাল বের করে বলল, ‘একদম নতুন সায়েন্স জার্নাল, শুধু তোমার জন্য।’
মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমি। চিকিৎসার ক্যাবিনেট, ক্যামেরা ও জার্নালগুলো পেয়ে আমি খুব খুশি। মাকে সহজে বিদায় বলার জন্য এগুলোই যথেষ্ট ছিল।
আমার থিঙ্কিং গগলসটা শস্যাগার টেবিলে রেখে বিজ্ঞান জার্নালগুলো হাতে নিলাম। সাসাফ্রাসকে কোলে নিয়ে পরের কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে দিলাম জার্নালগুলো পড়ে। ছবিগুলো ছিল অবিশ্বাস্য। একটা পৃষ্ঠা ওল্টাতেই ফুলের মতো একটা পোকা দেখলাম। ভালোভাবে দেখার জন্য ঝুঁকে পড়লাম, নাকে ভেসে এল গোলাপের গন্ধ।
আরও কয়েক পৃষ্ঠা ওল্টানোর পরে একটা প্রাণীর ছবি দেখলাম। প্রাণীটা নীল রঙের। শরীরটা যেন তুলতুলে। দেখতে অনেকটা সাপের মতো। ছবির ওপর আঙুল বোলাতে বোলাতে ওটার নরম পালক অনুভব করতে পারলাম। ভাবতেই খুব মজা লাগছিল! কোনো প্রাণীর সঙ্গে প্রথম দেখা হবে আমার, তা দেখার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না আমি।