ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট কমে কেন
শীত এসে গেলেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমছে না। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। মৃত্যুও হচ্ছে নিয়মিত। এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১ হাজার ৪০০–এর বেশি মানুষ। ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবার। এই প্রবণতাও নতুন।
ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া মানুষের প্রায় ৭০ ভাগ শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার একপর্যায়ে রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন শক সিন্ড্রোমে। রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়া, অর্থাৎ প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে।
মানুষের রক্তে তিন ধরনের ক্ষুদ্র রক্তকণিকা থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি প্লাটিলেট। বাংলায় যাকে অণুচক্রিকা বলে। এতে নিউক্লিয়াস থাকে না। আকৃতিতে গোলাকার, ডিম্বাকার বা রড আকৃতির বর্ণহীন সাইটোপ্লাজমীয় চাকতিবিশিষ্ট কোষ প্লাটিলেট। অণুচক্রিকা তৈরি হয় অস্থি বা হাড়ের মজ্জায়।
মূলত রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে কাজ করে প্লাটিলেট। সাহায্য করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে। ডেঙ্গু হলেই সবাই জিজ্ঞেস করে, প্লাটিলেট কত? উত্তরে ১০ হাজার থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত যেকোনো সংখ্যাই পাওয়া যেতে পারে। এই প্লাটিলেট কত বলতে বোঝায় একজন, পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে থাকা প্লাটিলেটের মাত্রা। সাধারণত দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত হতে পারে প্লাটিলেট কাউন্ট। ডেঙ্গুর মতো কিছু রোগ হলে প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে দেখা যায়। দেড় লাখের নিচে নেমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। দেখা দেয় রক্তক্ষরণের ঝুঁকি। প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নেমে গেলে জটিল পরিস্থিতি বলে ধরে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকের মতে, প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনো প্রকার আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে। রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নামা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলে রোগীর রক্তে প্লাটিলেট দেওয়া তথা রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তারেরা।
রক্তের সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষার মাধ্যমে প্লাটিলেটের সংখ্যা জানা যায়। সাধারণত এক ইউনিট প্লাটিলেটের জন্য চারজন দাতার থেকে রক্ত নিতে হয়। প্রতি ইউনিট প্লাটিলেট দিলে ২০ হাজার কাউন্ট প্লাটিলেট বাড়তে পারে। ডেঙ্গু হলে কয়েকটি কারণে প্লাটিলেট কমে। যেমন, প্লাটিলেট উৎপাদনকারী অস্থিমজ্জাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ডেঙ্গু ভাইরাস। তাই প্লাটিলেট কমে যায়। এছাড়া রক্তের কোষ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্লাটিলেট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভাইরাসকে দমন করার জন্য এই সময় শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যা প্লাটিলেটকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে মূল চিন্তা প্লাটিলেট না। একজন আরেকজনের খোঁজখবর নেওয়ার সময় প্লাটিলেটের কথা জিজ্ঞাসা করে ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেন, প্লাটিলেটের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল রোগী শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছেন কি না। কতটুকু স্টেবল বা স্থিতিশীল। তাই কারও ডেঙ্গু হলে স্থিতিশীলতার খোঁজ নেওয়া গেলে পরিস্থিতি সঠিকভাবে বোঝা যাবে। ডেঙ্গু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।