বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘ সময় ধরে এ দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকার কারণ, এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করেন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে, সৎভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সব নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি। দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে, হাতে গোনা কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে, যেখানে ফলাফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যে নির্বাচনগুলোয় ঝামেলা হয়েছিল।
১৮৭৬ : ব্যাপকভাবে বিভক্ত স্টেট
আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় এক দশক পরেও আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ব্যাপক বিভক্তি ছিল। ১৮৭৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন স্যামুয়েল টিলডেন। রিপাবলিকান দলে ছিলেন রাদারফোর্ড বি হেইস। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে সেবার ফলাফল বিতর্কিত হয়েছিল। এই তিন রাজ্য ছাড়া অন্য কোথাও প্রার্থীদের ইলেকটোরাল কলেজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। সুতরাং কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি কমিটি নিয়োগ করেছিল, চুক্তি হয়েছিল হেইস প্রেসিডেন্ট হবেন। তবে বিনিময়ে ফেডারেল সরকার দক্ষিণের রাজ্যগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ সহজ করবে।
২০০০: ৫৩৭ ভোটের জয়
২০০০ সালের নির্বাচনের ফলাফলে পার্থক্য ছিল খুব কম। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী আল গোর প্রতিদ্বন্দ্বী জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন; কিন্তু ইলেকটোরাল কলেজে তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। ফ্লোরিডায় বুশের সঙ্গে আল গোরের খুব সামান্য ব্যবধান ছিল। গোর সেখানকার বেশ কয়েকটি কাউন্টিতে ভোট গণনাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আদালতে গিয়েছিলেন; কিন্তু ৩৬ দিনের আইনি লড়াইয়ের পর সুপ্রিম কোর্ট বুশ ৫ গোর ৪ ইলেকটোরাল ভোট গণনা করেন। ফলে ফ্লোরিডায় বুশ মাত্র ৫৩৭ ভোট বেশি পেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে যান। শুধু ফ্লোরিডায় এত অল্প ভোটের ব্যবধানের কারণে তিনি ইলেকটোরাল কলেজ এবং প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন। এরপর বিষয়টি মেনে নেন গোর। তিনি বলেন, ‘আমি এই চূড়ান্ত ফল মেনে নিচ্ছি।’
২০২০: ক্যাপিটলে দাঙ্গা
২০২০ সালে জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সারা দেশে ৭০ লাখ ভোটে পরাজিত করে ইলেকটোরাল কলেজ জিতেছিলেন; কিন্তু ট্রাম্প এই পরাজয় মেনে নেননি। তিনি অনেকগুলো মামলা করেন। রাজ্য কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ এবং নিজের ভাইস প্রেসিডেন্টকে ফলাফল নিজের দিকে নিতে সহায়তা করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এতে কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প–সমর্থকেরা ক্যাপিটলে হামলা করেন। ক্যাপিটলে কংগ্রেস সদস্যরা ইলেকটোরাল কলেজের ভোট গণনা করছিলেন। সমর্থকেরা ক্যাপিটলে ঢুকে পড়েন এবং সংঘর্ষে বহু মানুষ আহত হন। শেষে পুলিশ মানুষকে সরিয়ে দেয়। কংগ্রেস বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস