কিছু মানুষ ভূমিকম্প অনুভব করে না কেন

আইসল্যান্ডের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে রেকানেস উপত্যকায় ভূমিকম্পে রাস্তায় ফাটলছবি: আইসল্যান্ড মনিটর

ভূমিকম্প টের পাওয়ার সব থেকে সাধারণ উপায় হলো, হঠাৎ যখন আমাদের মাথার ওপরের ফ্যান দুলে ওঠে, তখন বোঝা যায় ভূমিকম্প হচ্ছে। ছাদের সঙ্গে ঝোলানো সবকিছু এ সময় দুলতে থাকে। টেবিলের ওপর পানির গ্লাস কাঁপতে থাকে। ভূমিকম্পের সময় বাসায় বিড়াল থাকলে বিড়ালগুলো হঠাৎ সতর্ক হয়ে যায়। আশপাশে কুকুর থাকলে ঘেউ ঘেউ করে। কুকুরগুলো একটু আগেই টের পায় ভূমিকম্প আসছে। বড় ভূমিকম্প হলে আবদ্ধ পানিতে ঢেউ ওঠে। ছোট ভূমিকম্পগুলোর জন্য আমরা ফেসবুক বা ব্রেকিং নিউজের মাধ্যমে জানতে পারি, ভূমিকম্প হয়েছে।

ভূমিকম্প হলে ফেসবুকে সবাই স্ট্যাটাস দেয়, ‘ভূমিকম্প’ লিখে। এ সময় কিছু মানুষ লেখে, ‘ভূমিকম্প হলো নাকি?’ আরেকদল পাওয়া যায়, যারা লেখে, ‘ভূমিকম্প হয়েছে নাকি? ঘুমিয়ে ছিলাম, টের পাইনি।’ মানে কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পায়। কিছু মানুষ সন্দেহে থাকে হয়তো ভূমিকম্প হয়েছে। আর কিছু মানুষ একদমই টের পায় না। এই লেখায় আমরা জানব, কেন কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পায় না।

তুমি কোথায় আছো, কী করছো, তোমার আগের অভিজ্ঞতা ভূমিকম্প অনুভবের ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ভূমিকম্প টের পেতে সবচেয়ে ভালো উপায় একজন ভূমিকম্পবিজ্ঞানী হয়ে যাওয়া।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা ৪০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ১। এটি মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরই এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল। ফলে বেশি প্রভাব পড়েছে উপকূলের জেলাগুলোতে। বাংলাদেশ থেকে উৎপত্তিস্থল ছিল ৫০১ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশে এটি অনুভূত হয়েছে খুব কম মাত্রায়। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার উপকূলীয় এলাকায় বেশি অনুভূত হয়েছে।’

এর মানে উৎপত্তিস্থলের থেকে দূরত্ব ভূমিকম্প অনুভবের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, নরথরিজ-এর ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুলিয়ান লোজোস বলেছেন, কিছু মানুষ কেন ভূমিকম্প অনুভব করে, আর অন্যরা কেন করে না, এর পেছনে শক্তিশালী ভূমিকম্পবিজ্ঞান রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত কেউ যদি স্থির হয়ে বসে থাকে, নড়াচড়া না করে, তাহলে ভূমিকম্প অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি। যদি কেউ জেগে থাকে, তখন ঘুমিয়ে থাকার চেয়ে ভূমিকম্প অনুভবের সম্ভাবনা বেশি। তবে এটি নির্ভর করে কে কোথায় আছে তার ওপর।’ যেমন, তুমি আজ সকালে মোংলায় থাকলে যতটুকু কাঁপুনি টের পেতে, ঢাকায় বা কুড়িগ্রামে থাকলে তার থেকে কম অনুভব করতে।

এ ছাড়া তুমি কোথায় থাকো, তার ওপরও এটি নির্ভর করে। যদি তুমি এমন জায়গায় থাকো, যেখানে সবসময় শব্দ হয় বা কম্পন হয়, তাহলে ভূমিকম্প অনুভব করার সম্ভাবনা কম। যেমন, একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে সারাক্ষণ কিছু না কিছু চলছে। এর মধ্যে কম্পন হলে তোমার কাছে এটাকে স্বাভাবিক মনে হতে পারে। দীর্ঘদিন এমন কোথায় বাস করলে ভূমিকম্পের কম্পন উপেক্ষা করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে তোমার মস্তিষ্ক।

আবার যে শহরে ঘনঘন ভূমিকম্প হয়, ধরো জাপানের কোনো শহর, তাহলে সেখানকার বাসিন্দারা ছোট ভূমিকম্পে এত অভ্যস্ত হবেন যে টেরই পাবেন না। আবার যারা সারাক্ষণ ভূমিকম্পের আশঙ্কায় থাকে বা ভূমিকম্প নিয়ে বেশি ভাবে, পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিকম্প নিয়ে আলাপ করে, তাদের ভূমিকম্প টের পাওয়ার হার বেশি।

অধ্যাপক লোজোস ব্যাখ্যা করেছেন, একই ভবনের ভেতরে অবস্থানের পার্থক্যের কারণে ভূমিকম্প অনুভব করার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। একটি ১৮ তলা ভবনের চতুর্থ তলায় কেউ থাকলে সে যতটুকু কম্পন অনুভব করবে, ১৮তম তলায় যিনি থাকবেন, তিনি অনেক বেশি দুলুনি অনুভব করবেন।

অনেকে ধারণা করেন, তাদের শরীর ভূমিকম্পের দুলুনি অনুভব করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হতে পারে শারীরিক অবস্থার কারণে বা আগের ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার কারণে। কেউ কেউ নিজেদের বেড়ে ওঠার পরিবেশের কারণকেও দায়ী করেছেন।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের জরিপের তথ্য অনুসারে, মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঘরের বাইরে বা চলতে থাকা অবস্থায় ভূমিকম্প হলে ১০ শতাংশের কম মানুষ দুলুনি অনুভব করেন। অপরদিকে যদি কেউ বিশ্রামে থাকে বা বিছানায় শুয়ে থাকে, এবং ভবনের উঁচুতলায় বাস করে, তবে ৮৫ শতাংশ মানুষ ভূমিকম্প অনুভব করেন।

তুমি কোথায় আছো, কী করছো, তোমার আগের অভিজ্ঞতা ভূমিকম্প অনুভবের ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ভূমিকম্প টের পেতে সবচেয়ে ভালো উপায় একজন ভূমিকম্পবিজ্ঞানী হয়ে যাওয়া। রাতারাতি যেহেতু কেউ এটি হতে পারবে না, তার জন্য এই লেখার শুরুতে যে উপায়গুলো বলা হয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করতে পারো। মানে ফ্যান বা ঝাড়বাতির দিকে খেয়াল করো। কুকুর-বিড়ালের আচরণের পরিবর্তন খেয়াল করো। আর ভূমিকম্পের সময় নিরাপদে থাকো।

আরও পড়ুন