ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো - ৪
কলিং বেল–রহস্য
এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন কাজী আকাশ।
খুব উত্তেজিত ছিলাম আমি। অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরছিল মাথায়। প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলাম মাকে।
‘ছবিটা থেকে বেগুনি আলো বের হচ্ছিল কেন? জাদুর কারণে? আর আগে কেন আমি জাদুকরি প্রাণী দেখিনি? ওরা নিশ্চয়ই এখানে আসে, তাই না? তাহলে থাকে কোথায়? এখন কি এখানে কোনো জাদুকরি প্রাণী আছে?’
মা হাসল। ‘উফ! অনেক প্রশ্ন। চলো একটা একটা করে বলি। প্রথম প্রশ্নের উত্তর—হ্যাঁ, জাদুর কারণে ছবিটা জ্বলজ্বল করছিল। জাদুকরি প্রাণীর ছবি তুললে কিছুটা জাদু ছবিতে থেকে যায়। কোনো জাদুকরি প্রাণীর সাহায্য আমার লাগলে আমি ওদের শস্যাগারে রাখি। আর শেষ প্রশ্নের উত্তর—এই মূহূর্তে এখানে কোনো জাদুকরি প্রাণী নেই। মাঝেমধ্যে টানা এক সপ্তাহেও ওদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। তোমাকে শস্যাগারটি দেখালে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে। চলো।’
মা আর আমি শস্যাগারের দিকে যাচ্ছি। আপন মনেই হেসে ফেললাম। আমি কখনো শস্যাগারের কাছে খেলিনি। আমি ভেবেছিলাম, জায়গাটা খুব বিরক্তিকর। কিন্তু এখন দেখছি, ভুল করেছিলাম।
মা আমাকে শস্যাগারের পেছনে নিয়ে বলল, ‘জঙ্গলে যাওয়ার আগে পিপ শস্যাগারের দরজায় একটা বিশেষ কলিং বেল লাগিয়ে দিয়েছিল। ভেবেছিলাম পরিবারের মধ্যে এটা শুধু আমিই দেখতে পারি। তবে আমার ধারণা, তুমিও এটা দেখতে পারবে।’
সাসাফ্রাস মিউ মিউ করতে করতে এগিয়ে গেল। যেন মায়ের কথায় বাধা দিতে চাইছে।
মা হাসল। সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘ওহ হ্যাঁ, সাসাফ্রাসের মতো চালাক প্রাণীরাও এটা দেখতে পারে।’
হাঁটু গেড়ে বসে শস্যাগারের পেছনের দেয়ালের দিকে তাকালাম আমি। কিন্তু কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।
‘পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ো। এবার একটু বাঁ দিকে তাকাও। দেখতে পাচ্ছ?’
ঘাস যেন সুড়সুড়ি দিল আমার ঘাড়ে। মাথাটা আরেকটু নিচু করতেই গোল বোতামটা দেখতে পেলাম। সাধারণ কলিং বেলের মতোই দেখতে। তবে বেলটার চারপাশ থেকে যেন নানা রঙের তরঙ্গ বের হচ্ছে। মাথাটা একটু জাগাতেই তা অদৃশ্য হয়ে গেল। ওয়াও! আগে কখনো এমন জিনিস দেখিনি আমি।
যদিও কলিং বেলটা নিয়ে এখন ভাবছি আমি। আগেও আমি এটার শব্দ শুনেছি। মা বলত, এটা তার মোবাইলের অ্যালার্ম। কিন্তু এটা যে অন্য কিছু হতে পারে, তা কল্পনাও করিনি আমি।
‘মাঝেমধ্যে ঘরে যে অ্যালার্মের শব্দ শুনতাম, সেটা কি এই কলিং বেলের শব্দ?’
‘হ্যাঁ, ঠিক তাই। কখন অ্যালার্ম বাজবে, তা আমি জানতাম না। তবে যখনই বাসায় থাকতাম, অ্যালার্মের শব্দ পেতাম।’
‘তুমি চলে গেলে কী হবে? তখন যদি অ্যালার্ম বাজে?’
‘এখানে থাকা অবস্থায় অ্যালার্ম বাজলেই শুধু আমি ওদের সাহায্য করতে পারব।’
হঠাৎ মনে পড়ল, হাতে একটা ছবি নিয়ে মা জানালা দিয়ে শস্যাগারের দিকে তাকিয়ে ছিল। হয়তো এটা ভেবে চিন্তিত ছিল, সে সাত দিনের জন্য চলে গেলে জাদুকরি প্রাণীদের কী হবে! হয়তো...হয়তো আমি সাহায্য করতে পারি!
‘এক সপ্তাহের জন্য চলে যাবে তুমি। অনেক দিন। চলে যাওয়ার পরে যদি অ্যালার্ম বাজে? আমি কি ওদের সাহায্য করতে পারি?’ পায়ের আঙুল দিয়ে মাটিতে খোঁচাতে লাগলাম। ‘আমি জানি, আমি একটা শিশু মাত্র। তবে আমি চেষ্টা করতে পারি।’
মা হাসল। ‘আমি আশা করেছিলাম তুমি এটাই বলবে। কিন্তু তুমি কি বুঝে বলছ? অনেক কিছু সামলাতে হতে পারে। যদিও নিজের সাহায্যের জন্য সব সময় আমাকে কল করো।’
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম আমি। মা আমার কাঁধে হাত রেখে কপালে চুমু খেল।
‘এখন থেকে আমি চলে গেলে আর ওদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ধন্যবাদ সোনা।’
হঠাৎ পেট মোচড় দিয়ে উঠল আমার। জাদুকরি প্রাণীগুলোর সঙ্গে দেখা করতে আর তর সইছিল না। মনে মনে খুব উত্তেজিত ছিলাম। ওদের সাহায্য করতে চাই আমি। কিন্তু কীভাবে সাহায্য করব, তা-ই বুঝতে পারছিলাম না। কোনো গণ্ডগোল পাকাতে চাই না আমি।
পরক্ষণেই ভাবলাম, আমার বয়সী থাকতেই মা পিপকে সাহায্য করেছিল। অর্থাৎ আগেও একজন একা এ কাজ করেছে। আমিও পারব।
তাই না?
চলবে…
মূল: এশিয়া সিট্রো
রূপান্তর: কাজী আকাশ
ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে
*এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন একজন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্টু বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।