ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো - ১০
একটি কলের অপেক্ষা
এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে রূপান্তর করছেন কাজী আকাশ।
দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেলাম। প্রথমে গেলাম বাবার কাছে, কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল, তিনি তো সাহায্য করতে পারবেন না। গলাটা কেমন ভারী হয়ে এল। হয়তো কেঁদে ফেলব আমি। তারপর মুঠোফোনটা হাতে নিলাম এবং মাকে ফোন করলাম।
রিং হচ্ছে। কান্না না করার প্রাণপণ চেষ্টা করলাম আমি। কলটা ভয়েস মেইলে গেল। আর সহ্য করতে পারলাম না। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। ছোট্ট ড্রাগনটা মারা যাচ্ছিল এবং সব দোষ আমার।
বাবা ছুটে এলেন। ‘জোয়ি? কী হলো? ব্যথা পেয়েছ?’
বুঝতে পারছিলাম না বাবাকে কী বলব! অবশেষে প্রায় দম বন্ধ করে বললাম, ‘মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই, কিন্তু মা ফোন ধরছে না।’
বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর কাছে বসিয়ে বললেন, ‘তুমি সত্যিই তোমার মাকে মিস করছ, তা–ই না?’
ডানে-বাঁয়ে মাথা নেড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলাম আমি।
‘তোমার মা এখন সম্মেলনে উপস্থাপনা করছে। তাই তাকে ফোন বন্ধ রাখতে হবে। তুমি মাকে একটা মেসেজ দিচ্ছ না কেন? আমি নিশ্চিত, সম্মেলন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে তোমাকে ফোন করবে।’
ওহ, না! মায়ের কথা শুনলাম! ফোনটা আবার চালু করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আরও জোরে কেঁদে ফেললাম আমি।
‘আমি জানি যে আমি তোমার মায়ের মতো নই। কিন্তু আমি কি তোমাকে সাহায্য করতে পারি না? তুমি কী নিয়ে চিন্তিত, তা আমাকে বলা যায় না?’
বাবাকে মার্শমেলোর কথা বললে তিনি কিছুই বুঝতে পারবেন না। কিন্তু তিনি কি আমাকে এই বিপদে সাহায্য করতে পারবেন?
‘একটা ছোট্ট পরীক্ষা করছি আমি। শস্যাগারে একটা প্রাণী পেয়েছি। ওটাকে খাবার দিয়েছিলাম গতকাল। তখন ঠিকই খেয়েছিল। বেশ ভালো ছিল কাল। কিন্তু আজ সকাল থেকে ওকে বেশ অসুস্থ মনে হচ্ছে। একটু নড়াচড়া করেছে শুধু। কোনো ভুল করেছি কি না, বুঝতে পারছি না।’
বাবা একটু ভুরু কোঁচকালেন। ‘ওটা কোনো বন্য প্রাণী নয়, তা–ই না? তোমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে ওটা। হয়তো আমারই একটু দেখে আসা উচিত।’
‘না, ওটা কোনো বন্য প্রাণী নয়। আহ্…উম…মানে তার চেয়ে বেশি কিছু। মা দেখেছেন। তিনি বলেছেন যে ওটাকে আমি খাওয়াতে পারি। আর আহ্…আমার মনে হয়, তুমি ওটাকে দেখতে পারবে না।’
বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল বাবাকে। ‘এটা কি তোমার আরেকটি পোকামাকড় পরীক্ষা? আশা করি, ওটা মাকড়সা নয়। আসলে মাকড়সা পছন্দ করি না আমি।’
মাথা নেড়ে বললাম, না।
‘তুমি যে প্রথমে প্রাণীটা তোমার মাকে দেখিয়ে নিয়েছ, এতে আমি খুশি হয়েছি। আচ্ছা, তোমার দেওয়া খাবার কি একটু বেশি শক্ত ছিল? মনে আছে, গত গ্রীষ্মে ক্যাম্পিংয়ে গিয়ে অনেক সামোর (চকলেট ও মার্শমেলোর সমন্বয়ে তৈরি স্যান্ডউইচ) খেয়ে তোমার পেট খারাপ হয়েছিল?’
সামোর! মার্শমেলো! অনেক মার্শমেলো! হয়তো এখানে সমস্যা হয়েছে। আমি পরীক্ষা করে দেখেছি, ছোট্ট ড্রাগনটা কী খেতে পছন্দ করে। তবে আসলেই ওগুলো খাওয়া উচিত কি না, তা তো পরীক্ষা করিনি।
গত গ্রীষ্মে সুস্থ হওয়ার জন্য মা–বাবা আমাকে কী খাইয়েছিলেন? ওটা ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ পেটব্যথাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেশি চিনি খাওয়ার কারণে মা আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলেন আর প্রচুর পানি পান করতে বলেছিলেন। আর চিনি নেই এমন একটা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বলেছিলেন।
এখনই কিছু পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার দরকার আমার! লাফিয়ে উঠে দরজার দিকে দৌড়ালাম। হঠাৎ থেমে গেলাম। পেছনে ফিরে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম বাবাকে। ‘ধন্যবাদ বাবা! আমি সম্ভবত বুঝতে পেরেছি, এখন কী করতে হবে!’
চলবে…
মূল: এশিয়া সিট্রো
রূপান্তর: কাজী আকাশ
ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে
*এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্টু বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’ এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।