গিজা পিরামিডগুলো মিসর তথা পৃথিবীর সব পিরামিডের মধ্যে বিখ্যাত। হাজার হাজার বছর ধরে মিসরীয়রা তৈরি করেছে এই পিরামিড। আজও আমাদের কৌতূহলী এবং অনুপ্রাণিত করে পিরামিডগুলো।
প্রধান কাঠামো
ফারাও (শাসক) কুফুর সম্মানে নির্মিত প্রধান পিরামিডগুলোর মধ্যে প্রথমটি ছিল গ্রেট পিরামিড। এটিই গিজার সবচেয়ে বড় পিরামিড। ধারণা করা হয়, এই পিরামিডের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এই পিরামিডের পূর্ব দিকে আছে আরও তিনটি ছোট পিরামিড। এগুলোকে বলা হয় রানির পিরামিড। ফারাও কুফুর স্ত্রীর সম্মানে এগুলো বানানো হয়েছিল। পরবর্তী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল ফারাও কাফ্রের সম্মানে। ফারাও কাফ্রে ছিল ফারাও কুফুর সন্তান। প্রায় ২ হাজার ৫৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই পিরামিডের কাজ শেষ হয়েছিল। কাফ্রের পিরামিডের কাছে অবস্থিত গ্রেট স্ফিংস। এটি একটি পৌরাণিক প্রাণীর মূর্তি। ধারণা করা হয়, ফারাও কাফ্রের রাজত্বকালে এই পিরামিড নির্মাণ করা হয়। সবচেয়ে ছোট এবং সবশেষে নির্মিত পিরামিডটি ফারাও মেনকাউরের। এটির নির্মাণকাজ সম্ভবত ২ হাজার ৫১০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে শেষ হয়েছিল।
কীভাবে নির্মিত হয়েছিল পিরামিড?
পিরামিড কীভাবে তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে আছে রহস্য। তবে পিরামিড তৈরি নিয়ে কয়েকটি থিওরি বা তত্ত্ব আছে। কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক (অনেক আগে নির্মিত বস্তু নিয়ে যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন) বিশ্বাস করেন, পিরামিড তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত পাথরগুলো হয়তো বালুর ওপর দিয়ে টেনে আনা হয়েছিল। পাথরখণ্ডের নিচে দেওয়া হয়েছিল বড় র্যাম্প। (আমাদের দেশে বড় গাছের গুঁড়িকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার সময় যেমন নিচে গাছের ছোট গুঁড়ি দেওয়া হয়, অনেকটা ও রকম)। গ্রেট পিরামিডটি সম্পূর্ণ তৈরি হতে ২০ বছর লেগেছিল। এটি ২ কোটি ৩০ লাখ পাথরখণ্ড দিয়ে নির্মিত। এর মধ্যে কোনো কোনো পাথরখণ্ডের ভর ছিল ১৫ টনের বেশি। পাথরগুলো ছিল সাদা চুনাপাথর, যা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে পারত। ফলে দূর থেকে দেখা যেত এই পিরামিড। স্ফিংসও একটি বড় চুনাপাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিল।
পিরামিডের ভেতরে কী ছিল
পিরামিডগুলো ফারাও এবং তাঁদের রানিদের সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সমাধিগুলো শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো ছিল। এগুলো দেখে ঐতিহাসিকেরা বুঝতে পেরেছিলেন, মিসরীয়দের জীবনযাপন কেমন ছিল। গ্রেট পিরামিডে অন্তত তিনটি পরিচিত কক্ষ ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল রাজার চেম্বার কক্ষ। লাল গ্রানাইট দিয়ে কক্ষটি নির্মিত। এই কক্ষে ছিল একটি রাজকীয় সারকোফ্যাগাস (পাথরের কফিন)। যদিও এটি এখন খালি। কাফ্রের পিরামিডেও একটি সারকোফ্যাগাসসহ একটি সমাধিকক্ষ ছিল। যদিও ওই কফিনের মমিটি অনেক আগেই চুরি হয়ে গিয়েছিল। গ্রেট পিরামিডের কাছাকাছি কিছু গর্ত পাওয়া গেছে, যেখানে নৌকাগুলো কবর দেওয়া হয়েছিল। কিছু ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন, ফারাওদের মৃত্যুর পরে এই নৌকায় করে নীল নদ পাড়ি দিয়েছিলেন। পরে এগুলো কবর দেওয়া হয়, যাতে ফারাওরা নৌকাগুলো পরকালে নিয়ে যেতে পারে। ফারাওরা পরকালে বিশ্বাস করত।
পিরামিডের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে গিজা পিরামিডগুলো জাতিসংঘের ইউনেসকো দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা পেয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিরামিডগুলো জীর্ণ হয়ে গেছে। ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোকে সুরক্ষা দেয়। গ্রেট পিরামিড এখন ৪৫১ ফুট উঁচু। পিরামিডটির চূড়া থেকে ৩০ ফুট ক্ষয়ে গেছে। আগে ৪৮১ ফুট উঁচু ছিল। স্থাপনাগুলো মানুষকে আকৃষ্ট করে। প্রতিবছর লাখ লাখ দর্শক মিসরে পিরামিড দেখতে আসেন। আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে মিসরীয় সরকার ‘নিউ গ্র্যান্ড মিসরীয় জাদুঘর’ উদ্বোধন করবেন। এটি পিরামিডের কাছেই স্থাপন করা হবে। সেখানে থাকবে প্রাচীন মিসরের হাজার হাজার নিদর্শন।
অন্যান্য জাতির পিরামিড
বড়বুদ্ধোর মন্দির (জাভা, ইন্দোনেশিয়া)
বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধমন্দির। এখানে পাঁচ শতাধিক বৌদ্ধমূর্তি আছে। এটি ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের একটি পাহাড়ে অবস্থিত।
সেসটিয়াসের পিরামিড (রোম, ইতালি)
এই পিরামিড মিসরের পিরামিড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এটি ১২০ ফুট উঁচু। সম্ভবত ১৮ থেকে ১২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই পিরামিড নির্মিত হয়েছিল। এটি জিউস সেসটিয়াস নামের একজন রোমান জেনারেলের সমাধি।
প্রথম টিকাল মন্দির (টিকাল, গুয়েতেমালা)
এটি টেম্পেল অব দ্য গ্রেট জাগুয়ার নামেও পরিচিত। প্রাচীন মায়ান সভ্যতা টিকাল শহরে এই মন্দির অবস্থিত। এটি ১৫০ ফুটের বেশি লম্বা। আহ কাকাও নামে পরিচিত এক টিকাল শাসককে এখানে সমাহিত করা হয়েছে।
মেরোর পিরামিড (মেরো, সুদান)
কুশাইট রাজ্যের শেষ রাজধানী মেরোতে ২০০টির বেশি পিরামিড পাওয়া গেছে। নুবিয়া নামের একটি অঞ্চলকে শাসন করত এই রাজ্য। কুশাইটের নেতাদের সমাহিত করা হয়েছে এই পিরামিডে।