নরডিক দেশ কোনগুলো, কেন তারা পালন করে নরডিক দিবস
প্রতিবছর ২৩ মার্চ পালিত হয় নরডিক দিবস। এটি উত্তর ইউরোপের পাঁচটি দেশ—আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ঐক্য উদ্যাপন করার একটি দিন। এ ছাড়া ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ, গ্রিনল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মধ্যবর্তী বথনিয়া উপসাগরে অবস্থিত আল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে পালিত হয় দিনটি। দেশগুলোতে নানা ধরনের উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় এদিনে। এই অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে নরডিক দেশগুলোর সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, খাবার, সংগীত, নৃত্য, হস্তশিল্প বিশ্বের অন্যান্য দেশের সামনে তুলে ধরে নরডিক করপোরেশন।
১৯৬২ সালের ২৩ মার্চ ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন—এই পাঁচটি দেশ নরডিক সহযোগিতাসংক্রান্ত ‘হেলসিঙ্কি চুক্তি’ স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির মাধ্যমে নরডিক দেশগুলো একে অন্যের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা শুরু করে। চুক্তি অনুসারে, এই দেশগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করে, যেমন অর্থনীতি, শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা প্রভৃতি। স্বাক্ষরিত হেলসিঙ্কি চুক্তি নরডিক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার আইনি কাঠামো হিসেবে কাজ করে।
১৯৬২ সালে নরডিক কাউন্সিল নরডিক সহযোগিতা দিবস হিসেবে ২৩ মার্চ দিনটি নির্ধারণ করে। নরডিক কাউন্সিল হলো নরডিক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য গঠিত একটি আন্তসরকারি সংস্থা। বর্তমানে নরডিক কাউন্সিলের ৮৭ জন সদস্য রয়েছেন। এই সদস্যরা নরডিক জাতীয় সংসদ থেকে নির্বাচিত হন এবং দলীয়ভাবেও মনোনীত হন। নরডিক কাউন্সিলের বর্তমান মহাসচিব হলেন ক্রিস্টিনা হাফোস, যিনি ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জের একজন প্রতিনিধি। নরডিক কাউন্সিলের প্রধান কার্যালয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অবস্থিত। এই কাউন্সিলের নিজস্ব পতাকা, এমনকি জাতীয় সংগীতও রয়েছে।
এই চুক্তি নরডিক দেশগুলোর মধ্যে বসবাস ও কাজের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করে। এর মানে কোনো নরডিক দেশের নাগরিক অন্য কোনো নরডিক দেশে বসবাস করতে পারে এবং সেই দেশের নাগরিকদের মতো একই সুবিধা পেয়ে থাকে। নরডিক কাউন্সিল বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে নিজ দেশগুলোর অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
নরডিক দেশগুলোর মধ্যে উন্মুক্ত সীমান্ত চুক্তি ১৯৫৭ সালে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে, নরডিক দেশগুলোর নাগরিকদের এই দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট বা অন্য কোনো প্রকার ভিসার প্রয়োজন হয় না। উন্মুক্ত সীমান্ত চুক্তি দেশগুলোর মধ্যে মানুষের স্বাধীন চলাচল বৃদ্ধি করেছে। নরডিক দেশগুলোর একটি যৌথ শ্রমবাজারও রয়েছে।
১৯৮৭ সালের নরডিক ভাষা কনভেনশন চুক্তির মাধ্যমে নরডিক দেশগুলোর মানুষ সব ক্ষেত্রে নিজের মাতৃভাষা ব্যবহার করতে পারে। নরডিক ভাষা কনভেনশন নরডিক ভাষাগুলো সংরক্ষণ ও প্রচার করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই দেশগুলোয় নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকার রয়েছে।
নরডিক দেশগুলো প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে পালন করে। বাংলাদেশে সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক দূতাবাস নরডিক ক্লাবে দিবসটি উদ্যাপন করে থাকে।