২৫ জুন পৃথিবীতে ফিরবে চীনের মহাকাশযান চাং’ই-৬

চাং’ই-৬

চাঁদের নমুনা সংগ্রহের মিশনে চীনের চন্দ্রযান চাং’ই-৬ সফলভাবে চাঁদের অন্ধকার অংশে অবতরণ করেছে, যা মহাকাশ অনুসন্ধানে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই অভূতপূর্ব ঘটনা বিজ্ঞানীদের মনে নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে। আশা করা হচ্ছে যে এই অভিযান চাঁদের অন্ধকার অংশের গঠন ও ইতিহাস সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে সাহায্য করবে।

চাং’ই-৬ ২ জুন রোববার বেইজিং সময় সকাল ৬টা ২৩ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর বিশাল অ্যাইটকেন বেসিনে অবস্থিত অ্যাপোলো খাদের ভেতর অবতরণ করে। চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চীনা ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ) ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে ল্যান্ডারটি ধীরে ধীরে চাঁদের পৃষ্ঠে নামছে এবং ধুলা উড়ছে।

আরও পড়ুন

চাং’ই-৬–এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, অ্যাপোলো খাদ থেকে শিলা ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করা। নমুনাগুলো পৃথিবীতে ফেরত আনা হবে এবং বিজ্ঞানীরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে চাঁদের উৎপত্তি, গঠন ও ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য আবিষ্কার করতে পারবেন। মিশনের লক্ষ্য ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই অঞ্চল থেকে মূল্যবান পাথর ও মাটি সংগ্রহ করা। এ ছাড়া ল্যান্ডারটি চাঁদের পৃষ্ঠ ও পরিবেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবে।

চাং’ই-৬ মিশন থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলো বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি করেছে। কারণ, নমুনাগুলো চাঁদের অদৃশ্য দিক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যে অংশ আমরা পৃথিবী থেকে কখনো দেখতে পাই না। চাঁদের দৃশ্যমান দিকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চল রয়েছে, যা ‘মারিয়া’ নামে পরিচিত।

গত ৩ মে এই চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি সিএনএসএর দ্বিতীয় নভোযান যা চাঁদের অন্ধকার অংশে অবতরণ করেছে। এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে চীন চাং’ই-৪ চাঁদের অন্ধকার দিকে ল্যান্ডারযুক্ত রোভার পাঠিয়েছিল। চাং’ই-৬ তিন দিন ধরে ২ কেজি বা ৪ দশমিক ৪ পাউন্ড নমুনা সংগ্রহ করে। এসব নমুনার মধ্যে রয়েছে চাঁদের মাটি, বালি ও পাথর। চীনের চাঁদ গবেষণার মিশনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে চৈনিক চন্দ্রদেবী চাং-ই-এর নামানুসারে।

আরও পড়ুন

প্রায় তিন সপ্তাহ মহাকাশে ভ্রমণের পর, চাং’ই-৬ ২৫ জুন পৃথিবীতে ফিরে আসবে। মঙ্গোলিয়ায় অবতরণের পর চীনা বিজ্ঞানীরা চাঁদ থেকে সংগ্রহ করা মাটি ও পাথরের নমুনা হাতে পাবেন। এই অভিযান সফল হলে চীনের জন্য তা হবে এক বড় সাফল্য। চাঁদ অন্বেষণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মহাকাশ গবেষণার প্রতিযোগিতায় এর মাধ্যমে চীন এগিয়ে যাবে।

চাং’ই-৬ মিশন থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলো বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি করেছে। কারণ, নমুনাগুলো চাঁদের অদৃশ্য দিক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যে অংশ আমরা পৃথিবী থেকে কখনো দেখতে পাই না। চাঁদের দৃশ্যমান দিকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চল রয়েছে, যা ‘মারিয়া’ নামে পরিচিত। প্রাচীন জ্যোতির্বিদেরা ভুল করে এগুলোকে সমুদ্র মনে করেছিলেন। চাঁদের অদৃশ্য দিকে মারিয়া অঞ্চল অনেক কম। এই দুই দিকের মধ্যে এত পার্থক্য কেন, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে নমুনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চাঁদের অন্ধকারপৃষ্ঠে তোলা চাং’ই-৬ এর তোলা ছবি

যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশও চাঁদে আবার যাওয়ার জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নাসার প্রধান বিল নেলসন এই প্রতিযোগিতাকে একটি নতুন মহাকাশ দৌড় বলে অভিহিত করেছেন। চাঁদ থেকে নমুনা আনার মাধ্যমে আমরা সৌরজগতের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে পারব। এটি ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষ পাঠানোর সম্ভাবনা সম্পর্কেও ধারণা দেবে।

ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে মহাকাশ অন্বেষণ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। কিন্তু এখন চীন, জাপান, ভারতসহ আরও অনেক দেশ তাদের নিজস্ব মহাকাশ কর্মসূচি তৈরি করছে।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র ২০২৬ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। চীন ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, চীন তাদের মহাকাশ কর্মসূচি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। তবে চীনা বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে চাঁদের মাটি ও পাথরের নমুনা সৌরজগতের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে।

সূত্র: বিবিসি, দা গার্ডিয়ান, সিএনএন, স্পেস ডটকম

আরও পড়ুন