টক খেলে দাঁত টক হয় কেন?

পাহাড়ি অঞ্চলের তেঁতুল বিক্রির জন্য বসেছেন জুয়েল মিয়া। রানীর দিঘিরপাড়, কুমিল্লা, ৩০ জানুয়ারিছবি: এম সাদেক

কাঁচা কচকচে তেঁতুল, আর একপাশে ঝালমসলা—খাওয়ার দরকার নেই, তোমার সামনে এনে রাখলে মুখে এমনিতেই পানি চলে আসার কথা। এমন কোনো লোভনীয় খাবার নয়, তারপরও তুমি যদি আস্ত একটা তেঁতুল খেয়ে ফেলো, তাহলেই বিপদ। না, টক খাওয়া অন্যায় কিছু নয়। টক খাওয়ার পর দাঁতের যে অবস্থা হয়, সেটাই হলো বিপদ। আমরা বলি, দাঁত টক হয়ে গেছে। আসলে দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। ফলে দাঁতে কোনো কিছু স্পর্শ করলেই শিরশির করে। ভারি অস্বস্তিকর অনুভূতি। কিন্তু এটুকুতেই কি শেষ? দাঁতের সংবেদনশীলতা কেন বাড়ে টক খেলে? এটা কি শুধুই অনুভূতি, নাকি ক্ষতিও আছে?

টক খাবারে সাধারণত সাইট্রিক অ্যাসিড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড বা ফসফরিক অ্যাসিড থাকে। তবে তেঁতুলে থাকে টারটারিক অ্যাসিড। আর আমাদের দাঁতের বাইরের অংশ গঠিত হয় এনামেল (Ca10(PO4)6(OH)2) নামের যৌগ দিয়ে। দাঁতের শক্ত সাদা রঙের অংশটাই মূলত এনামেল। টক খেলে আমাদের দাঁতে যে অনুভূতি হয়, তাঁর জন্য দায়ী এনামেল আর অ্যাসিডের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া। অ্যাসিডের সংস্পর্শে এলে দাঁতের এনামেল সাময়িকভাবে নরম হয়ে যায়। ক্ষয় হতে শুরু করে। দাঁতে তখন একধরনের অমসৃণ এবং টক অনুভূতি হয়।

আরও পড়ুন

এই অনুভূতি অবশ্য স্থায়ী নয়। আমাদের মুখের লালা (স্যালাইভা) তখনই কাজ শুরু করে। এটি অ্যাসিডকে ধুয়ে ফেলে এবং এনামেলের নরম স্তরকে শক্ত করতে সাহায্য করে। তবে যদি নিয়মিত বেশি পরিমাণ টক খাবার খাওয়া হয়, কিংবা সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া না হয়, তাহলে এই ক্ষত স্থায়ী হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে দাঁতের এনামেল স্বাভাবিকভাবেই পাতলা হতে থাকে। ফলে বেশি বয়সে অতিরিক্ত টক খাবারের সংস্পর্শ দাঁতের জন্য আরও ক্ষতিকর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আরও পড়ুন

এখন প্রশ্ন হলো, এই সমস্যার সমাধান কী? সমাধান খুবই সহজ। টক খাবার খাওয়ার পর পানি দিয়ে কুলি করতে হবে। দাঁতের ওপর জমে থাকা অ্যাসিড ধুয়ে যাবে এতে। তবে টক খাওয়ার পরপরই দাঁত ব্রাশ করা যাবে না। তাতে দাঁতের নরম এনামেল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্তত আধঘণ্টা অপেক্ষা করে ব্রাশ করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যাসিডিক খাবার থেকে দাঁত রক্ষার জন্য ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট উপকারী। এটি দাঁতের এনামেলের শক্তি বাড়ায় এবং ক্ষয় প্রতিরোধ করে। মূল কথা হলো, টক খাওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই, তবে সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ, দাঁতের যত্ন নিলে এর সুরক্ষা থাকে দীর্ঘদিন। আর আপনার হাসিও থেকে যায় প্রাণবন্ত।

আরও পড়ুন