পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের জনপ্রিয়তা হাজার বছর ধরে। এদের সুন্দর চেহারা আর স্বাধীন চরিত্র মানুষকে বারবার আকৃষ্ট করেছে। অনেক দিন ধরে বিড়াল পালন করেন, তাঁরা এদের উদ্ভট আচরণের সঙ্গে নিশ্চয়ই পরিচিত। যেমন বাসায় ফিরলে বিড়াল দৌড়ে কাছে আসে। সবার সঙ্গে খেলা করে। আবার কখনো আলসেমি করে বসে থাকে। কোলে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। মোটকথা, মানুষের সঙ্গে বিড়ালের সম্পর্ক বেশ গভীর। তবে মাঝেমধ্যে বিড়ালের আচরণ দেখে বিভ্রান্ত হতেই হয়। ‘বিড়াল কি সত্যিই আমাকে চেনে?’
বিড়াল কি তার মালিকের দেওয়া নিজের নাম জানে? এই প্রশ্নটিও অনেক পোষা প্রাণীর মালিকদের মনে জাগে। প্রায়ই দেখি, আমরা যখন আমাদের বিড়ালের নাম ধরে ডাকি, তখন সে আমাদের দিকে তাকায়। কাছে আসে বা সাড়া দেয়। কিন্তু বিড়াল সত্যিই নিজের নাম বুঝতে পারে কি না? বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনেক গবেষণা করেছেন। ২০১৯ সালে সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল নিজের নাম বোঝে ও মনে রাখে। গবেষণাটি করেন জাপানের টোকিওর সোফিয়া ইউনিভার্সিটির একদল মনোবিজ্ঞানী। এ গবেষণায় বিড়াল নিয়ে অনেক অজানা তথ্য জানা যায়।
জার্নাল অব ভিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১২টি বিড়াল নিয়ে করা পরীক্ষায় মাত্র ৫৪ শতাংশ বিড়াল নিজের মালিককে একা দেখে চিনতে পেরেছে। এর মানে দাঁড়ায়, বিড়াল শুধু মুখ দেখে মানুষকে চিনতে পারে না।
বিড়াল খুব স্বাধীনচেতা প্রাণী। এরা মালিকের দেওয়া নামকে নিজের নাম বলে মেনে নিলে সে নামে সাড়া দেয়। আর নিজের নাম মেনে না নিলে ওই নামে যতই ডাকা হবে, সাড়া দেবে না। এমনকি অপরিচিত কেউ এদের নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দিতে দেখা গেছে। তবে বিড়াল কি সত্যিই মানুষের চেহারা মনে রাখতে পারে? জার্নাল অব ভিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১২টি বিড়াল নিয়ে করা পরীক্ষায় মাত্র ৫৪ শতাংশ বিড়াল নিজের মালিককে একা দেখে চিনতে পেরেছে। এর মানে দাঁড়ায়, বিড়াল শুধু মুখ দেখে মানুষকে চিনতে পারে না। এরা গন্ধ, আওয়াজ ও অন্যান্য সংকেতের সাহায্যে মানুষ চিনতে পারে।
বিড়ালের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। বিড়ালের নাকে গন্ধ টের পাওয়ার রিসেপ্টর থাকে ৮০ মিলিয়ন, যা মানুষের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই অসাধারণ ঘ্রাণশক্তির কারণে বিড়াল এদের পরিবেশকে মানুষের চেয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারে। প্রাণী আচরণবিজ্ঞান অনুসারে ঘ্রাণশক্তি বিড়ালের দৈনন্দিন জীবন ও বুদ্ধিমত্তার মূল ভিত্তি। প্রত্যেক মানুষের একটি অনন্য গন্ধ থাকে, যা বিড়াল নাকের সাহায্যে সহজে চিনতে পারে। শ্যাম্পু, পারফিউম ইত্যাদি ব্যবহার করে মানুষ গন্ধ কিছুটা পরিবর্তন করলেও বিড়ালের তীক্ষ্ণ ঘ্রাণশক্তি মানুষের মূল গন্ধ সহজেই শনাক্ত করতে পারে।
এমনকি অনেক দূর থেকেও বিড়াল মালিকের পায়ের আওয়াজ শনাক্ত করতে পারে। বিড়ালের শ্রবণশক্তি এতই তীক্ষ্ণ যে এরা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ পর্যন্ত বুঝতে পারে। সকালে যখন বিড়ালের মালিক ঘুম থেকে জেগে উঠে, তখন দেখে বিড়াল হয়তো তার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিড়ালেরা মালিকের গন্ধ মনে রাখে, এমন নয়। এরা মালিকের কণ্ঠস্বর, চলাফেরার শব্দ, শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরন, এমনকি চলাচলের ধরনও মনে রাখে। যখন কেউ বাসায় ফিরে আসে, তখন বিড়াল দরজায় অপেক্ষা করে। কারণ, এটি পরিচিত পায়ের শব্দ পায়। এমনকি অনেক দূর থেকেও বিড়াল মালিকের পায়ের আওয়াজ শনাক্ত করতে পারে। বিড়ালের শ্রবণশক্তি এতই তীক্ষ্ণ যে এরা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ পর্যন্ত বুঝতে পারে। সকালে যখন বিড়ালের মালিক ঘুম থেকে জেগে উঠে, তখন দেখে বিড়াল হয়তো তার দিকে তাকিয়ে আছে। এর কারণ বিড়াল শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিবর্তন লক্ষ করে।
চেহারা পরিবর্তন করলেও বিড়াল গন্ধ ও কণ্ঠস্বর চিনতে পারবে। অর্থাৎ কেউ যদি মুখোশ পরে বা ভিন্ন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে, তবু বিড়াল তাকে চিনতে পারবে। এ থেকে বোঝা যায়, বিড়াল অনেক প্রাণীর চেয়ে বেশি তীক্ষ্ণ গন্ধ ও শ্রবণশক্তিসম্পন্ন।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, রইস কর্নার, নেচার।