হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে কী করল তাঁর শিশু চরিত্রেরা

আজ হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন। তাঁর লেখা শিশু চরিত্রেরা যদি দিনটি উদ্‌যাপন করত, তাহলে কেমন হতো?
হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮—১৯ জুলাই ২০১২)

‘একি কাণ্ড!’ গল্পের টুকুন কোথায় যাচ্ছে

নিজের জন্মদিনে ঠিক আটটি মোমবাতি এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দিয়েছিল টুকুন। সে ভেবে রেখেছিল, জন্মদিনের কেক আর ৭৫টি মোমবাতিসমেত রওনা হবে তার গন্তব্যে। কিন্তু সব জোগাড় করা আর হলো কই? অগত্যা টুকুন তার ঝেং-এর বাচ্চাকে উপহার হিসেবে নিয়ে যাত্রা শুরু করল। টুকুনের জন্য মা-বাবাকে ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া মোটেও সহজ ছিল না। টুকুনকে কাক সাহায্য করেছে। ভোরে কাক এসে ডেকে দিয়েছে টুকুনকে। এরপর সে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এখনো কাক টুকুনের সঙ্গে উড়ছে আর ঝেং-এর বাচ্চাকে সামলাচ্ছে। কিন্তু টুকুন যাচ্ছে কোথায়?

আরও পড়ুন

‘পুতুল’ গল্পের পুতুল আবার বাড়ি ছাড়ল কেন

হুমায়ূন আহমেদ (৩ নভেম্বর ১৯৪৮—১৯ জুলাই ২০১২)
ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম

পুতুল আর অন্তু দুই বন্ধু। তাদের প্রথম দেখা কাকতালীয়ভাবে। পুতুল অভিমান করে নিজের বাড়ি, মা-বাবাকে ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল। পথে দেখা হয় অন্তুর সঙ্গে। বলাই বাহুল্য, বন্ধু হলেও দুজনের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা। পুতুলের বাড়ি দেখে অন্তুর প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘তোমরা কি দেশের রাজা?’ আজকে আবার পুতুল বাড়ি থেকে চুপিসারে বের হয়ে এসেছে। অবশ্য পুতুল এক বিশেষ কারণে বের হয়েছে। একা পুতুলের পক্ষে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা মোটেও সম্ভব হতো না। অন্তু পথ দেখিয়ে পুতুলকে নিয়ে যাচ্ছে। খালি হাতে তো আর জন্মদিনে যাওয়া যায় না! পথের ধারে পড়ে থাকা কিছু পাথরকুচি ফুল কুড়িয়ে নেয় পুতুল।

আরও পড়ুন

‘ছেলেটা’ গল্পের রনি এখন দেশে কী করে

অনেক দিন পর দেশে ফিরেছে রনি। ছোট রনি এখন মস্ত বড় শিল্পী। ছোটবেলায় রনি এলিয়েনদের ছবি আঁকত। বড় হয়ে বাচ্চাদের বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করে। রনির সঙ্গে এসেছে তার স্ত্রী লুতপাইন এবং তাদের একমাত্র মেয়ে লীলাবতী। রনি যাচ্ছে তার খুব প্রিয় এক জায়গায়। নিজের ইলাস্ট্রেশন করা একটি বই এনেছে উপহার হিসেবে। আজকে লীলাবতীর একজন বিশেষ মানুষের সঙ্গে দেখা হবে। মানুষটি তার এত সুন্দর একটি নাম রেখেছে! লীলাবতী প্রতিদিন রাতে এই বিশেষ মানুষটির লেখা গল্প পড়ে। জন্মদিনের উপহার হিসেবে লীলা নিজের হাতে ছোট্ট ক্যানভাসে একগুচ্ছ কদম ফুল এঁকে এনেছে।

আরও পড়ুন

নুহাশপল্লীতে

কাকের সঙ্গে টুকুন পৌঁছে গেছে নুহাশপল্লীতে। পুতুল আর অন্তুও চলে এসেছে। লুতপাইন আর লীলার হাত ধরে হেঁটে এসেছে রনি। তাদের মতো আরও অনেকে উপহার হাতে এসেছে জাদুকরের খোঁজে। নুহাশপল্লী যেন সবার অপেক্ষায় ছিল। জোছনা রাত উপহার দিয়ে সবাইকে চমকে দেয় নুহাশপল্লী!

গাছের সঙ্গে টুকুন আর কাক কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। ঝেং-এর বাচ্চা গেছে পাণ্ডুলিপির কাগজের খোঁজে। অনেকক্ষণ হয়েছে ঝেং-এর বাচ্চা কাগজ খায় না। পুতুল আর অন্তু তাদের কুড়িয়ে আনা ফুলগুলো একটি লিচুগাছের নিচে রেখে এল। রনিরা এসেছে নুহাশপল্লীর দীঘি লীলাবতীর কাছে। লীলা মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখছে।

হুমায়ূন আহমেদ
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

১৩ নভেম্বর, নিজের জন্মদিনে নিরিবিলি পরিবেশে গাছগাছালির ছায়ায় দীঘি লীলাবতীর সামনে জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ যেন হাজির হলেন। উপস্থিত সবার মুখে তখন এক কথা, ‘শুভ জন্মদিন, জাদুকর!’ এই বিশেষ দিনে তাঁর শিশু চরিত্রেরা নুহাশপল্লীতে চলে আসে মিছিলের মতো, অগণিত সংখ্যায়। টুকুন, পুতুল, অন্তু, লীলাবতীর মতো ছোটরা উপহার আনে প্রিয় লেখকের জন্য। নিজের লেখা চরিত্রদের দেখতে পেয়ে হাসেন গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। সবার সঙ্গে নীরবে জোছনা রাত উপভোগ করছেন তিনি।