ভূতেদের দিন শেষ
ইনকাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভূত কোথায় থাকে?’ আমার মনে ছোটদের জন্য কোনো প্রশ্ন এলে প্রথমে ইনকাকেই জিজ্ঞেস করি। জেনারেশন-জি বা জেন-জির যত বৈশিষ্ট্য, সব ইনকার ভেতর আছে। এখন কী চলছে, ট্রেন্ড কী, কোনটার কী মানে, ইনকা জানে। একবার ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কিসে ভয় পাও? আমি ভেবেছি ও ভয় পাবে ভূত, পেতনি-শাকচুন্নি এসবে। কিংবা ওর বিছানার নিচে লুকিয়ে থাকা কোনো দৈত্য হবে ভয়ের কারণ। তা না পেলেও অন্তত সাধারণ ভয়ের বস্তু, বিশ্বজুড়ে অনেক কিশোর-কিশোরীর মতো সে অন্ধকার ভয় পাবে। কিন্তু এগুলোর কোনোটি ওর ভয়ের কারণ নয়।
আমাকে অবাক করতে ভুলল না ইনকা। বলল, ‘আমি ভয় পাই “ফেইলিউরকে”।’ আমার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হলো। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, ‘যেমন?’ ও বলে, ‘তুমি জানো, আমি খুব ভালো ছাত্রী। আমার ফেল করা অসম্ভব। তবু তুমি যখন উদাহরণ চাইলে, তখন বোঝার জন্য বলছি। আমি যদি ফেল করি, আমার বন্ধুরা ভাববে আমি বুঝি কিছু পারি না। পড়াশোনা করছি না। ফাঁকি দিচ্ছি। আমার মা খুব আপসেট হবে। মাকে আপসেট করা আমার জন্য অসম্ভব। আমি পারব না। আমার দুনিয়াটাই ভেঙে পড়বে।’
আমি কিছুক্ষণ ভেবেছি। এ কেমন কথা! বিশ বছর আগে আমরা কত কিছু ভয় পেতাম। অন্ধকার ভয় পেতাম, বড় শেওড়াগাছ ভয় পেতাম, রাতে বাথরুমে আলো না থাকলে মাকে ডাকতাম। আঁধারে সাদা কাপড় পরা কাউকে দেখলে আমাদের আত্মা উড়ে যেত। এখন কি আর এসব বস্তু ভয়ের নয়?
আমরা ভাবতাম, পরিত্যক্ত বাড়ি মানেই ভূতের আড্ডা। পানি দেখলে মনে হতো পানির নিচে মটকার মধ্যে আছে এক বুড়ি ভূত। পানিতে নামলে পা টেনে নিয়ে যাবে। নানুবাড়ির পুকুরে তাই কখনো একলা সাঁতার দিতে পারিনি। কখনো একলা পুকুরঘাটে যেতে পারিনি। এখন বুঝি, ওটা ছিল আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা। শহর থেকে গ্রামে যেতাম। খুব ভালো সাঁতার জানতাম না। যেন ডুবে না যাই, তাই আমার মাথায় ভূতের ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
গ্রামে আমার কাজিনরা বলত, বড় গাছে ভূত থাকে। বড় গাছে চড়তে গেলে পড়ে যাব, ব্যথা পাব, এই বুঝি ছিল ভয়। এখন এসব ব্যাখ্যা বা যুক্তি মেনে নিলেও তখন ওসবের বালাই ছিল না। কেউ বোঝালেও বিশ্বাস করতাম না নিশ্চিত। তখন বিশ্বাস ছিল, ভূত চড়ে আছে শেওড়ার ডালে। অন্ধকারে ঘোরাফেরা করে অতৃপ্ত আত্মা। বড় গাছের নিচে গেলেই ভূত লম্বা হাত বাড়িয়ে আমার ঘাড় মটকে দেবে।
তুমি হয় ভূতে বিশ্বাস করো, না হয় করো না। যদি তুমি ভূতে বিশ্বাস করো, যদি কখনো ভূত দেখে থাকো বলে মনে হয়, তার নিশ্চয়ই একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা আছে। যেমন কিছু শিশু অনেক আগে মারা যাওয়া কোনো আত্মীয়কে ভূত হিসেবে দেখে। যে দাদি তার জন্মের আগেই মারা গেছেন, তাকে সে দেখতে পায়। এর ব্যাখ্যা, সে দাদির গল্প শুনেছে মা–বাবা বা অন্য কারও কাছে। আবার বাড়িতে একটি পারিবারিক ছবি দেয়ালে টানানো ছিল। এই দুই মিলিয়ে সে এমনভাবে কল্পনা করেছে, যেটা বাস্তব বলে ওর ভ্রম হয়।
এই শেওড়াগাছ হয় বহুদিন আগে কেটে ফেলা হয়েছে বা কখনো এই শিশু একলা ওই গাছের নিচে যায়নি, যাবেও না। নগরায়ণ এমনভাবে হয়েছে, বিশেষ করে যারা শহরে থাকে, তাদের কালেভদ্রে একবার শেওড়াগাছ দেখা সম্ভব। তা–ও পিকনিক করতে প্রকৃতিতে গেলে।
ইনকার এখন বয়স ১৩। ওর যখন সাত বছর বয়স, তখন আমাকে বলেছিল, আমাদের তো ভূত দেখার কথা না। রাইট? সে সময় থেকে ইনকা ভূত আছে কি নেই, অনেকটা নিশ্চিত ছিল। ওর ভূত নিয়ে মতামত আলাদা কিছু নয়। ওর বয়সীরা এভাবেই ভাবে। তবু খুব ভরসা পেলাম না। একটু খোঁজখবর করলাম। বয়স অনুযায়ী মানুষ কিসে ভয় পায়? বিশেষ করে শিশুরা কিসে ভয় পায়? বড় হতে হতে এই ভয় পরিবর্তন হয়ে যায়। খুঁজে পেলাম, নির্দিষ্ট বয়সে এমন ভয় পাওয়াও সাধারণ।
৮-৯ মাস বয়সী শিশুরা অপরিচিতদের দেখে ভয় পায়। শিশুরা মা–বাবা বা ভাই বোনকে চিনতে পারে। কিছু মানুষ পরিচিত হয়ে ওঠে। এ সময় নতুন মানুষের মুখ এই বয়সীদের কাছে ভীতিকর লাগতে পারে। অনেক সময় দেখবে এ বয়সী শিশুরা অপরিচিত আত্মীয়দের কোলে গিয়ে কাঁদে। এ বয়সীরা নিজেদের নিরাপদ মনে করে মা–বাবার কাছে। তাঁদের কোলে কাঁদতে পারে, অন্যদের ভয়ে তাঁদের আঁকড়ে ধরতে পারে।
১০ মাস থেকে ২ বছর বয়সীরা মা–বাবার কাছ থেকে আলাদা হওয়ার ভয় পায়। তারা চায় না মা–বাবা তাদের ডে–কেয়ারে বা অন্য কারও কাছে রেখে চলে যান। মা–বাবার থেকে আলাদা হলে তারা কাঁদে, আঁকড়ে ধরে আর তাঁদের কাছে থাকার চেষ্টা করে।
সমস্যাটা হয় চার থেকে ছয় বয়সীদের মধ্যে। এ বয়সী শিশুরা কল্পনা করতে পারে বা ভান করে। কোনো শিশুকে দেখা যায় সে গাড়ির চালকের অভিনয় করছে। কেউ আইসক্রিম বিক্রেতা। ইনকা ছোটবেলায় ভান করতো সে পুলিশ। একবার আমাকে গ্রেফতার করে বসল। এ বয়সীরা ভান করতে পারে। কিন্তু সব সময় বুঝতে পারে না, কোনটা আসল আর কোনটা ভান। ও নিজেকে পুলিশ ভাবলে সত্যি সত্যিই পুলিশ ভাবতে পারে।
এ সময় কেউ যদি ওদের ভয়ংকর দৈত্য-দানবের গল্প বলে, এই কাল্পনিক গল্প ওর কাছে বাস্তব বলে মনে হয়। ওরা ভয় পায়। কেউ যদি বলে তোমার বিছানার নিচে বা আলমারিতে ভূত আছে। ওর কাছে খুব সম্ভব এটা বাস্তব মনে হবে। এমন হলে অনেক শিশু অন্ধকারে বা ঘুমানোর সময় ভয় পাবে। কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখবে। সেই স্বপ্ন আবার মনে হবে বাস্তব। ঘুমের মধ্যে ভূতের স্বপ্ন দেখার সময় পায়ে কিছু লাগলে মনে করবে ভূতে পা টেনেছে। এ বয়সে ছোটরা বজ্রপাত বা আতশবাজির মতো উচ্চ শব্দেও ভয় পেতে পারে।
সাত বছর বা এর বেশি বয়সীরা আঘাত পাওয়ার ভয়, বাজে আবহাওয়া বা বিপদ বুঝতে পারে। এগুলো হতে পারে ওদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ। এরা কল্পনা আর বাস্তবের পার্থক্য জানে। এই বয়সে বাস্তব জীবনে ঘটতে পারে, এমন জিনিস নিয়ে ভয় পেতে শুরু করে। যেমন কেউ হয়তো ‘খারাপ’ মানুষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে। কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝোড়ো আবহাওয়া বা খবরে শোনা বিষয় নিয়ে ভয় পায় বা দুশ্চিন্তা করে। পারিবারিক বিচ্ছেদ বা প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার ভয়ও তাদের মনে কাজ করতে পারে।
অন্যদিকে কিশোরদের থাকে সামাজিক ভয়। স্কুল আর বন্ধু তাদের জীবনের বড় অংশ হয়ে ওঠে। হোমওয়ার্ক, পরীক্ষার ফল, স্কুলে ভালো করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে পারে। আমাদের ইনকার যেমন হয়। ব্যর্থতার ভয় পায় ইনকা।
এদের মধ্যে ভূতের ভয় ঢোকার সবচেয়ে সুবিধাজনক সময় চার থেকে ছয় বছর বয়স। শিশুর মনে ভূতের ভয় ঢুকবে, যখন শিশুদের বলা হবে ভূতের গল্প। ভূতের সিনেমা দেখা, গল্প পড়ার পর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে মনের মধ্যে বেড়ে উঠবে ভূতের ভয়। ধরো কেউ শুনল শেওড়াগাছে ভূত থাকে। এই ভূতের ভয় পেতে হলে তাকে শেওড়াতলার অভিজ্ঞতা নিতে হবে। অন্ধকারে শেওড়াগাছের তলায় তাকে যেতে হবে। সে শুধু কল্পনা করে ভয় পাবে না। এমন হবে না, অমুক এলাকায় এক শেওড়াগাছ আছে। যেখানে বাস করে এক ভয়ংকর ভূত।
এই শেওড়াগাছ হয় বহুদিন আগে কেটে ফেলা হয়েছে বা কখনো এই শিশু একলা ওই গাছের নিচে যায়নি, যাবেও না। নগরায়ণ এমনভাবে হয়েছে, বিশেষ করে যারা শহরে থাকে, তাদের কালেভদ্রে একবার শেওড়াগাছ দেখা সম্ভব। তা–ও পিকনিক করতে প্রকৃতিতে গেলে।
যা বুঝলাম, ইনকার জীবনে ভূতের বালাই নেই। তবে ও ভূতের গল্প পড়ে। ও বলেছে, ভূতের গল্প পড়লে ওর মজা লাগে, তাই পড়ে। বুঝলাম, এখন ভূতের গল্প ভয়ের নয়, বিষয়টা ‘ফান’ বা বিনোদন। আমি আলাপটা আরেকটু এগিয়ে নিতে জিজ্ঞেস করলাম, ভূত কোথায় থাকে? ওর ঝটপট উত্তর, আসলে তো ভূত থাকে না কোথাও। তুমি যদি জিজ্ঞেস করো গল্পের ভূত কোথায় থাকে, তবে এর উত্তর আছে। আমি প্রশ্ন শুধরে নিলাম। গল্পের ভূত কোথায় থাকে?
ভূতেদের আবাস নিয়ে আমাকে লেকচার দিয়ে দিল ইনকা। ধরো জাপানে ছড়িয়ে থাকা গল্পে প্রায়ই এমন ভূত পাওয়া যায়, যে থাকে বাথরুমে। বাসার মধ্যে বাথরুম হলো সবচেয়ে সংকীর্ণ জায়গা, যেখানে সবাই একা একা যায়। বাথরুমে সবকিছুই আমরা ফেলে আসি। পাইপ দিয়ে সেগুলো আরেক জগতে চলে যায়। মাটির নিচের সুয়ারেজের লাইনে আরকি। এই জগতে আমরা কখনো উঁকি দিই না। জাপানি সিনেমায় দেখবে, কমোডের ভেতর থেকে কিছু একটা বের হয়ে আসছে। যেখান থেকে কখনো কিছু বের হয় না, সেখান থেকে কিছু বের হলে সেটা ভয়ের হবে। ইনকা বলে, যদি এই ভূতকে ভাবো, তবে এর থেকে নোংরা আর কিছু হয় না। এমন একটা ভূতকে ভয়ের থেকে বেশি লাগবে গা ঘিনঘিন অনুভূতি।
আমি আমার পছন্দের ভূতের কথা বললাম। দেশি ভূতের মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের ভূত হলো মেছো ভূত। এ ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে। মেছো ভূত গ্রামের পুকুরপাড়ে বা জলাশয়ের ধারে বাস করে। বেশি বেশি মাছ পাওয়া যায় এমন জায়গায় বাস করে এরা। মাঝেমধ্যে রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ফিরলে মেছো ভূত পিছু নেয়। নির্জন বাঁশঝাড় বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়। যখন তুমি বেশ কয়েকটি প্রাণীর কথা জানবে, যারা মাছ চুরি করে খায়, যেমন বিড়াল বা মেছো বিড়াল। তখন ধীরে ধীরে তোমার মেছো ভূতের ভয় কমে যেতে থাকবে।
শহরে বাস করে এই ভূতের ভয় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তোমাকে যেতে হবে গ্রামে। রাতের বেলা বাজার থেকে বড় মাছ কিনে মাটির রাস্তা দিয়ে একা একা মাছ হাতে ঝুলিয়ে ফিরতে হবে। আমি কখনো এমন রাস্তা দিয়ে রাতে মাছ নিয়ে যাইনি। তুমি যদি না যাও, তবে এই ভূত কীভাবে তোমার কল্পনায় জায়গা করে নেবে?
ইনকাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি স্কন্ধকাটা ভূত চেনো?’ যে ভূতের মাথা নেই, তাকে বলে স্কন্ধকাটা ভূত। এর মানে যাদের দুর্ঘটনায় মাথা কাটা গেছে, তাদের আত্মা স্কন্ধকাটা ভূতে পরিণত হয়। রেল দুর্ঘটনায় কাটা পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে এই ভূত হওয়ার প্রবণতা বেশি। এই ভূত সব সময় তাদের হারানো মাথা খোঁজে। ইনকাকে এই কথা বলায় ও এমন করে তাকাল, যেন আমার মাথাটা জায়গামতো নেই। ও বলে, এই ভূতের তো তবে একদম বুদ্ধি নেই। যার বুদ্ধি নেই সে ভয় দেখাবে কেমন করে? আমার মুখে কোনো জবাবই এল না। তোমার কাছে কিছু থাকলে কিশোর আলোকে চিঠি লিখে জানাও।
তুমি যদি চার থেকে ছয় বছর বয়সে ভূতের গল্প শুনেও থাকো, তবে বড় হতে হতে সেই ভয় আর থাকবে না। বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে গেলে এই ভয় মোটামুটি চলে যায়। ভূতের গল্প তোমাকে বলার জন্য ভূতের গল্প জানা একজন মানুষ তোমার পাশে থাকা লাগবে। এখন যাঁরা মা–বাবা হচ্ছেন, বিশেষ করে শহরে, তাঁরা ভূতের গল্প জানেন না। জানলেও ভয়ংকর কোনো গল্প তাঁদের প্যারেন্টিং বা সন্তান লালন–পালন পদ্ধতি বা পরিকল্পনায় নেই। বাচ্চাকে ভয় দিয়ে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চান না। আদর আর সহযোগিতা এখন সন্তান বড় করার মূল নিয়ম। যাঁরা এখন মা–বাবা হচ্ছেন, তাঁদের দাদি-নানি বা এ রকম কেউ জানতেন গা হিম করা ভূতের গল্প। তিনি থাকতেনও গ্রামে। যা এখন ইতিহাস। অমন গল্পের আসর বসানোর জন্য এখন পরিবেশ কই? চারদিকে আলো। কোথাও কুপি বাতির নিবু নিবু আলো নেই। নেই কোথাও অন্ধকার।
এখন পৃথিবীতে আট বিলিয়ন মানুষ। বাংলাদেশে আঠারো কোটি মানুষ। একরত্তি জায়গা। পরিত্যক্ত বাড়ি আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। ভূত বাস করতে তো এমন একটা বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। শহরে ডেভেলপারের যন্ত্রণায় এমন এক বাড়ি কে শুধু ভূতের আড্ডার জন্য ছেড়ে দেবে? কতগুলো মানুষ থাকতে পারবে এই বাড়িতে। জমির মালিকের বয়েই গেল বাড়িটা ভূতের আড্ডার জন্য ছেড়ে দিতে!
আর কিশোরদের অবসর কোথায়? ভূতের কল্পনা করার জন্য একটু তো অবসর লাগবে। ইনকাকে দেখে বুঝি, পৃথিবীর সব থেকে ব্যস্ত কিশোরী বুঝি সে। স্কুল, কোচিং, কারাতে, গানের ক্লাস থেকে শুরু করে বাসার হোমওয়ার্ক। একটুও সময় নেই। ওর ভূতের ভয় পাওয়ার অবসরই নেই।
এখন কথা হলো, তবে আমরা ভূত নিয়ে সংখ্যা করছি কেন? কেউ যদি ভূতের ভয় আর না পায়, তবে তো ভূত নিয়ে আলাপ করার মানে নেই। তোমাকে গোপনে বলি, যারা এখন ভূতের গল্প লেখেন, ভূত নিয়ে লেখালেখি করেন, ভূতের ছবি বানান, তাঁদের সবার দাদি-নানি ভূতের গল্প জানতেন। তাঁদের শিশু বয়সে প্রচুর ভয়ের গল্প এসেছে। শিশুদের বড় করার অত নিয়মকানুন তখন ছিল না। খালে–বিলে, বনে-বাদাড়ে তাঁরা ঘোরার সুযোগ পেয়েছেন। ভূতের একটা কল্পনা তাঁদের মনে ঢুকে গেছে। অন্ধকার পেয়েছেন রাতের বেলা। ঘরের বাইরে অন্ধকারে বাথরুমে গেছেন, যেখানে আলো ছিল না। এমন অনেক কিছু মিলে তাঁদের মনে ঢুকে যাওয়া ভয় থেকে তাঁরা কল্পরাজ্য বানিয়েছেন। সেই দিন আর নেই।
এখন সবখানে আলো, বড় নির্জন গাছ আর নেই। চারদিকে শব্দ। এমন শব্দে আর ভূতের ঘুরেফিরে বেড়ানো, মানুষকে ভয় দেখানো সম্ভব নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষ কল্পনার ভূতের চেয়েও ভয়ংকর। তাই ভূতেরা অন্য জগতে চলে গেছে। এখন আর ভূতের গল্প খুব একটা ভয়ের হয় না। ভূত এখন এসে বলে, আমার স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে না, আমার ফোনে গেমস খেলতে ভালো লাগে। এ রকম গল্পের জন্য তো আমাদের মানবশিশুই আছে। এর জন্য আবার ভূতের কী দরকার। তাই আমার কথা হলো, ভূতের দিন শেষ। ভূত এখন আর ভয়ের না। ভূত এখন ফান।