গত মে মাসের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে অবস্থিত লংলেট সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করে চারটি বিরল বাঘের শাবক। জন্মানোর পর থেকে এদের রাখা হয় বিশেষ পর্যবেক্ষণ কক্ষে। জন্মগ্রহণের প্রায় এক মাস পর চোখ ফোটে শাবকগুলোর। জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত এরা কক্ষের ভেতরেই ছিল। এবার চারটি শাবককে প্রথমবারের মতো বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে। শাবকদের সঙ্গে রয়েছে এদের মা ইয়ানা, যার বয়স নয় বছর। বাইরের জগতের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচিত ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পর গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ শাবকগুলো সাফারি পার্কের মূল বনে তৃণভূমিতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই বিরল বাঘদের ডাকা হয় আমুর বাঘ বা সাইবেরিয়ান বাঘ নামে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা টাইগ্রিস টাইগ্রিস। এরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঘের প্রজাতি। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য, উত্তর-পূর্ব চীন এবং সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার বিস্তীর্ণ জঙ্গল ছিল এই প্রজাতির প্রাণীদের আদি আবাসস্থল। এ ছাড়া এরা বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন প্রাণীদের মধ্যেও অন্যতম। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বন্য প্রাণীদের মধ্যে এদের সংখ্যা খুব কম। মাত্র ৪৫০টির মতো সাইবেরিয়ান বাঘ বেঁচে আছে। ১৯৪০-এর দশকে মানুষের অবাধ শিকার ও নির্বিচার গাছ কাটার কারণে এই প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পড়েছিল। একসময় এদের সংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র ২০ থেকে ৩০টিতে।
লংলেট সাফারি পার্কের প্রধান পরিচারক এলোইস কিলবেন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘এ ধরনের অভিজ্ঞতা হলো আমাদের মতো প্রাণীরক্ষকদের জন্য স্বপ্নের মতো।’ তিনি আরও বলেন, শাবকদের মা ইয়ানা শাবকগুলো নিয়ে তৃণভূমিতে ঘুরতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করে। যেন সে তার নতুন সাম্রাজ্যের সীমানা নির্ধারণ করছিল। শাবকগুলো তাদের মাকে অনুসরণ করে খুব আনন্দিত ছিল। এলোইস কিলবেন আরও বলেন, ‘বাঘগুলো উচ্ছ্বসিত ও সুস্থ অবস্থায় যেভাবে লাফালাফি করছে, তা আমাদের পার্কের প্রজনন কর্মসূচির একটি বড় সাফল্যের প্রমাণ।’
লংলেট সাফারি পার্কের পশু ব্যবস্থাপনার প্রধান ড্যারেন বিসলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই শাবকগুলো যেন ইয়ানার সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়ার সময় নিজেদের জন্য নতুন জগতের সন্ধান করতে পারে। একই সঙ্গে নিজেদের যেন নিরাপদ মনে করে।’ ‘শাবকগুলোকে ধীরে ধীরে এদের পরিচিত পরিবেশ থেকে বের করা হচ্ছে। যেন নতুন পরিবেশে এরা অভ্যস্ত হতে পারে। এ জন্য প্রতিদিন এদের থাকার জায়গার কাছে খোলা জায়গায় বিচরণের সুযোগ দিয়েছি। আমরা আশাবাদী যে এতে এরা উন্মুক্ত পরিবেশের মাটি, ঘাস ও নতুন নতুন গন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সাফারি পার্কের বড় এলাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে।’
সাফারি পার্কের দর্শকেরা পার্কের ওয়েবসাইটের টাইমলাইন ফলো করে শাবকদের বৃদ্ধির প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারবেন। এই টাইমলাইনে শাবকদের খেলাধুলা, ঘুম, খাওয়া ও অন্যান্য কার্যকলাপের ছবি ও ভিডিও নিয়মিত আপলোড করা হচ্ছে। এই চারটি শাবক ইয়ানার দ্বিতীয়বারের সন্তান। এর আগে ২০১৯ সালে ইয়ানার রাস্টি ও ইউকি নামে দুটি শাবকের জন্ম হয়েছিল।
সূত্র: বিবিসি, উইকিপিডিয়া