আজ ১৮ জানুয়ারি। এক বছর আগে এই দিনে আমরা হারিয়েছি কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবক ও বন্ধু সারাহ ইসলামকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সারাহই প্রথম ব্যক্তি, ‘ব্রেন ডেড’ অবস্থায় যাঁর অঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে অন্য মানুষের শরীরে। সারাহ মাকে বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেন দান করে দেওয়া হয়। সারাহ চাইতেন, তাঁর মস্তিষ্ক নিয়ে যেন গবেষণা করা হয়। তাঁর মা শবনম সুলতানাও এতে সম্মতি দিয়েছিলেন।
সারাহ ইসলামের কিডনি গত বছরের ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে দুই নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর শরীরে সারাহর একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বাকি কিডনিটি হাসিনা আক্তার নামের অন্য এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল বেসরকারি কিডনি ফাউন্ডেশনে। তবে পরবর্তীকালে কিডনি সংক্রমণে হাসিনা আক্তার মারা যান।
সারাহর কর্নিয়া দিয়ে দুজন মানুষ এখন পৃথিবীর আলো দেখছেন। তাঁদের একজন ছিলেন জন্মান্ধ। বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করার পর বলেছিলেন, ‘প্রথম অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নাম চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর এ ত্যাগের মাধ্যমে মানুষের ভেতর সচেতনতা তৈরি হবে। অনেক মানুষ নতুন জীবন পাবে।’
সারাহর লড়াই শুরু হয়েছিল মাত্র ১০ মাস বয়স থেকে, যখন তাঁর ছোট্ট শরীরে ধরা পড়ে টিউবেরাস স্ক্লেরোসিস নামক দুরারোগ্য এক ব্যাধি। সারাহর ভীষণ মাথব্যথা করত। তিনি জানতেন, তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অসহ্য ব্যথা নিয়ে স্কুলে যেতেন, ছবি আঁকতেন, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন। এভাবে স্কুল-কলেজ পার হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউডার চারুকলা বিভাগে।
কিশোর আলোয় নিয়মিত আসতেন সারাহ। ১৩ বছর বয়স থেকেই কিশোর আলোর কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিতেন। মাসিক সভাগুলোয় সারাহ ছিলেন নিয়মিত। বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দভরে অনেক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত সারাহকে। ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন সারাহ। ছবি এঁকে নিয়ে আসতেন সভায়।
সারাহর স্কুলের বন্ধু, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত সুরাইয়া সেতু জানান, ‘শেষ দিকে ছয় মাস ধরে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে সারাহকে। একটানা এত দিন হাসপাতালে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিল সে। সুযোগ পেলে একটু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে ঘুরে আসতে চাইত। আমাদের বাসা ছিল পাশাপাশি। হাসপাতালে ওর সঙ্গে দেখা হওয়ায় বলেছিল, বাসায় যেতে চায়। হাসপাতালে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। এর দুদিন পরই দেখি ও হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছে।’
বিএসএমএমইউ সারাহর নামে ‘সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’ চালু করেছে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি। বিএসএমএমইউ কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষই সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল।
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিশোর আলো মমতা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছে সারাহ ইসলামকে।