দ্বিমাত্রিক বিশ্বের এক বর্গের গল্প

তোমরা নিশ্চয়ই থ্রিলার গল্প পছন্দ করো। থ্রিলারে একের পর রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে। কিছক্ষণ পরপর ঘুরে যায় গল্পের মোড়। তবে আজ যে বইয়ের কথা বলব, এর গল্পটা থ্রিলার হলেও একটু অন্য রকম। এই বইয়ে সরাসরি কোনো মানুষের গল্প নেই। পশুপাখির গল্পও নয়। গণিত বইয়ের শেষে জ্যামিতি থাকে। ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গ—এসব নিশ্চয়ই তোমাদের পরিচিত। এই বইয়ে আছে একটি বর্গের গল্প, যে দ্বিমাত্রিক বা দুই মাত্রার বিশ্বের বাসিন্দা। সেই বিশ্বে বর্গের সঙ্গে আছে ত্রিভুজ, বৃত্ত, ষড়ভুজ, বহুভুজ ইত্যাদি। এই গল্পে যার ভুজ (বাহু) যত বেশি, সে তত ক্ষমতাবান। ভুজ বাড়তে বাড়তে একসময় পরিণত হয় বৃত্তে। এরাই সমাজের সর্বেসর্বা। সবচেয়ে কমদামি হলো সরলরেখা। সরলেখা এই জগতের সবচেয়ে নিম্নশ্রেণির বাসিন্দা। এরা চাইলেও কোনো দিন বৃত্ত হতে পারবে না। সারা জীবন থাকতে হবে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ হিসেবে। তবে সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ হলেও এরা দেখতে খুব ছোট। তাই এদের দেখতে সরলরেখার মতো লাগে।

একনজরে

ফ্ল্যাটল্যান্ড: বহুমাত্রিক জগতের খোঁজে | লেখক: এডুইন এ. অ্যাবট | অনুবাদক: উচ্ছ্বাস তৌসিফ| প্রকাশক: আফসার ব্রাদার্স | প্রচ্ছদ: আবরার আবীর | প্রথম প্রকাশ: ২০২৪ | পৃষ্ঠা: ১৩৬ | দাম: ২৭৫ টাকা

এই সমাজেরই এক বাসিন্দা হলো বর্গ। সে একজন গণিতবিদ। সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। একদিন তার সঙ্গে দেখা হয় তৃমাত্রিক বিশ্ব থেকে আসা এক অদ্ভুত আকৃতির সঙ্গে। এলিয়েন বলতে পারো আকৃতিটিকে। ত্রিমাত্রিক বিশ্বের সেই এলিয়েনের কাছে ভিন্ন এক জগৎ সম্পর্কে জানতে পারে গণিতবিদ বর্গ। বদলে যায় তার (বর্গের) পুরো জগৎ। বিভিন্ন মাত্রার জগতে ঘুরতে বের হয় বর্গ। মাত্রাহীন থেকে শুরু করে একমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক হয়ে চতুর্মাত্রিক বিশ্বে। তবে গণিতবিদ কিন্তু একা ঘুরবে না। তার সঙ্গী হবে তুমিও। সে তোমাকে ঘুরিয়ে দেখাবে বিভিন্ন মাত্রার বিশ্ব।

আরও পড়ুন

থ্রিলার গল্প হলেও বইটি আসলে বিদ্রূপাত্মক ঘরানার। ওপরের কথা শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ যে বিশেষ এক শ্রেণিকে সমাজের নিচু শ্রেণি হিসেবে অসম্মান করা হয়েছে এ গল্পে। বিদ্রূপটা এখানেই। ১৮ শতকের সমাজে মানুষকে শ্রেণিবদ্ধ করে নিচু শ্রেণিকে যেভাবে ভাবা হতো, এই বইয়ে সেটাই উঠে এসেছে। সে সময় মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হতো; যেমন উচ্চ শ্রেণি, নিম্ন শ্রেণি, দাস ইত্যাদি। এসব বিষয়কেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে বইটিতে।

শুধু জ্যামিতির বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে গোটা পৃথিবীকে যে এভাবে বর্ণনা করা যায়, তা এ বই পড়লে বোঝা সম্ভব। পড়তে পড়তে একসময় মনে হবে, আসলেই কি এ কারণে সমবাহু ত্রিভুজ এমন, বর্গও কি এমন? এখানেই লেখকের সার্থকতা। গাণিতিক এই অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলারে তোমাদের স্বাগতম।

আরও পড়ুন

বইটি প্রায় ১৫০ বছর আগে লিখেছেন এডুইন অ্যাবট অ্যাবট। যিনি লেখকের জায়গায় নিজের নাম লিখেছেন ‘বর্গ’। আসলেই তিনি একটা বর্গ। একাধারে পাদরি, শিক্ষক ও শেক্‌সপিয়ার গবেষক ছিলেন। অনেক বই লিখলেও ‘ফ্ল্যাটল্যান্ড’ তাঁর সবচেয়ে কীর্তিমান কাজ। আর বইটি অনুবাদ করেছেন এক সমবাহু ত্রিভুজ। এই নামের আড়ালে লুকিয়ে আছেন অনুবাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ। বর্তমানে বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে অনুবাদ করেছেন বেশ কয়েকটি বই।

বইটি প্রকাশ করেছে আফসার ব্রাদার্স। ১৩৬ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ২৭৫ টাকা। দেশের বিভিন্ন অফলাইন-অনলাইন বইয়ের দোকানে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।