আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই যেমন দেখতে পায়, বিল্ডিংয়ে শিশু থাকলেও তেমনি সবাই জানে। পুরো বিল্ডিং মাতিয়ে রাখে শিশুরা। কখনো কান্না করে, কখনো হাসে। হইচই, দৌড়াদৌড়ি চলে সব সময়ই। রাতবিরাতে হই হই শব্দ। ওপরের তলায় শব্দ শুনে বোঝা যায় শিশু ঘুমায়নি। শিশুরা এমনই। এমন কাণ্ড করা ওদের জন্য স্বাভাবিক। যে শিশু এমন হইচই করে না, তাকে নিয়েই বরং দুশ্চিন্তা করা উচিত। হইচই করা শিশুই স্বাভাবিক।
শিশুরা স্বভাবতই চঞ্চল। প্রচুর এনার্জি শিশুকে চঞ্চল করে। চাঞ্চল্য প্রকাশ ঘটানোই শিশুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বিষয়। প্রি–প্রাইমারি স্কুলের শিশুদের খেয়াল করলে দেখবে, ওরা খুব সক্রিয়। প্রায়ই দেখা যায়, এ মুহূর্তে এটা করছে তো পরমুহূর্তে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রাইমারি স্কুলের শিশু বা এর চেয়ে বড়দের মধ্যেও এমন চাঞ্চল্য দেখা যায়।
তোমার চারপাশে কি কোনো দুই বছর বয়সী শিশু আছে? খেয়াল করে দেখো, ও কি চারপাশে দৌড়াদৌড়ি করে? একটু ভেবে দেখো, কেন ও দৌড়াতে পছন্দ করে? কেন কিছু শিশু বেশি চঞ্চল?
শিশুরা চারপাশ থেকে সব সময় নতুন কিছু শেখে। বড়রা যেমন ঝুঁকি বুঝতে পারে, শিশুরা তেমনভাবে পারে না। যেমন খাট থেকে পড়ে গেলে ব্যথা পাবে, বড়রা অভিজ্ঞতা থেকে এই তথ্য জানে। কিন্তু শিশুর খাট থেকে পড়ে ব্যথা পাওয়ার অভিজ্ঞতা ও এর পরে কী হবে, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। তাই শিশু খাটে বাধাহীনভাবে লাফালাফি করে।
শিশুর চাঞ্চল্যের মূল কারণ, শিশুর শরীরের ‘এনার্জি’। বড়দের শরীরের এনার্জি বা শক্তি ক্ষয় করার অনেক পদ্ধতি আছে। কাজ করলে এনার্জি ক্ষয় হয়। যেকোনো শারীরিক কাজ করতে শক্তির প্রয়োজন হয়। কেউ জিম করে, কেউ হেঁটে হেঁটে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়। কেউ মাটি কাটে। যে কাজই করুক, শরীরের শক্তি ক্ষয় করার একটা না একটা পদ্ধতি আছে বড়দের। শিশুর ক্ষেত্রে বিষয়টি হলো, ওর কোনো চাকরিবাকরি নেই। কোথাও কোনো কাজে শিশু যুক্ত থাকে না। শিশুর শরীরের এনার্জি কীভাবে ক্ষয় হবে? এনার্জি ক্ষয় করার জন্যই শিশু দৌড়াদৌড়ি করে, ছোটাছুটি করে।
কখনো কখনো এই চাঞ্চল্য বা দৌড়াদৌড়ি সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন যে শিশু সব সময় চারপাশে দৌড়াচ্ছে, বড়দের কাছ থেকে সে যদি হারিয়ে যায়? দৌড়ে যদি দূরে চলে যায়? যদি নিরাপত্তা উদ্বেগ থাকে, তবে শিশুর জন্য সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া জরুরি। বুঝিয়ে বলে দিতে হবে, শিশু কোন পর্যন্ত যেতে পারবে, কী করতে পারবে। বিশেষ করে শহরে বাস করে যারা, তাদের জন্য সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি। যদি বাড়ির সামনে রাস্তা থাকে, তবে রাস্তায় একা একা যাওয়া তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল করে।
কিন্তু শিশুকে বললেই কি শিশু কথা শোনে? অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায় যেটা করতে নিষেধ করা হয়, সেটাই বেশি বেশি করে। অনেক সময় তার দৌড়াদৌড়ি অন্যের বিরক্তি বা ক্ষতির কারণও হয়। এই সমস্যা এড়াতে শিশুর অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। অনেক অভিভাবক মনে করেন, ‘বাচ্চারা বোঝে না, তাই তারা তো এমন করবেই।’ এমনটা ভেবে দায় এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। অনেকে আবার বাচ্চাকে থামাতে বা কথা শোনাতে মারধরও করেন। এতে ফল হয় না, বরং এই মারধর শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই কোনো অবস্থাতেই শিশুর গায়ে হাত তোলা যাবে না। বরং শিশুকে আচরণগত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভালো ‘প্যারেন্টিং’ বা বাবা–মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ইতিবাচক শিক্ষা শিশুর নিরাপত্তার জন্য যেমন সহায়ক হতে পারে, তেমনি পারে অন্যের বিরক্তিতে পরিণত হওয়া রোধ করতেও।
শিশুদের দৌড়াদৌড়ি করা যেহেতু খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়, তাই তাদের চাঞ্চল্য দেখে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। তবে শিশুর এই চাঞ্চল্য অন্যের জন্য যেন ক্ষতিকারক বা বিরক্তিকর না হয়, সে জন্য অভিভাবকদেরই সচেতন হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে।