দোলনা দেখলেই দোল খেতে ইচ্ছে করে। তালে দোল খেতে সবারই ভালো লাগে। শৈশবে দোলনার পেছন থেকে কেউ একটু ঠেলে দিলে দোলনাটা যখন আপনা–আপনি এদিক–ওদিক দুলত, তখন তোমার নিশ্চয়ই ভালো লাগত। অধিকাংশ শিশুরই ভালো লাগে। এ জন্যই দোলনায় তাদের হইচই করতে দেখা যায়। শুধু শিশু না, দোলনায় চড়তে ভালো লাগে সব বয়সী মানুষের। ছেলে-বুড়ো সবাই দোলনায় চড়ে আনন্দ পান।
প্রশ্ন হলো, কেন দোলনায় দোল খেতে ভালো লাগে? উত্তর হলো, দোল খেলে মস্তিষ্কে অ্যান্ড্রোফিনের মাত্রা বাড়ে। মস্তিষ্ক সচল হয়, শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ে, রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। বড়দের মতো শিশুদেরও উদ্বেগ এবং ক্লান্তি তৈরি হলে টনিকের মতো কাজ করে দোলনা। দূর করে উদ্বেগ ও ক্লান্তি । শিশুদের বড় হওয়ার সময় ইন্দ্রিয়গুলো কাজের মাধ্যমে সুগঠিত হয়। মস্তিষ্ক থেকে ক্রমাগত শরীরের অঙ্গে তরঙ্গ বা সিগন্যাল আসে। এই বিভিন্ন অনুভূতি পায় আমাদের শরীর।
দোল খাওয়ার সুবিধার শেষ নেই। শিশুরা নিজ শরীরের ব্যাপারে সচেতন হয় দোলনায় চড়ে। ভেবে দেখো, দোলনায় চড়ায় তোমার পুরো শরীর নড়ছে। হাত, পা, বাহুসহ পুরো শরীরের ব্যালেন্স রাখতে হচ্ছে। দোলনার দড়ি লম্বা হলে তো কথাই নেই, অনেক উঁচুতে উঠে ফেরত আসা লাগে। আবার বিপরীত দিকে যেতে হয়। শরীর ও মনে শিহরণ জাগে।
স্কুল শুরুর আগে দোলনায় চড়লে শিশুদের মনযোগ বাড়ে! দোলনা শিশুর মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে উদ্দীপ্ত করে। শিশুরা চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হয়। ভারসাম্য রাখতে শেখে। নিজের পেশি নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা অর্জন করে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য দোলনা অনেক সময় ওষুধের মতো কাজ করে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের শিশুরা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে দুলতে পছন্দ করে।
শিশুদের ক্ষেত্রে দোলনা বেশি কাজ করে। মৃদু দোল শিশুদের শান্ত করে। মূল কারণ, দোলনগতি। বারবার দুই বিপরীত দিক থেকে একই জায়গা অতিক্রম করে। একরম রিদম বা তাল তৈরি হয়। এই গতি খুব মসৃণ হয়। কোনো ঝাঁকুনি থাকে না। তাই এই গতি প্রশান্তিদায়ক। এই গতিতে চলতে আমাদের ভালো লাগে। সাধারণ দোলনার পাশাপাশি অনেকে টায়ার ঝুলিয়ে দোলনা বানান। দোল খাওয়ার পাশাপাশি যেখানে ঘূর্ণন গতি পাওয়া যায়। এই দোলনায় ঘুরতে অনেকেই পছন্দ করে।
দোল খাওয়ার সময় শরীরের চারপাশ থেকে তুমি নিশ্চয়ই বাতাসের ঝাপটা অনুভব করো। সামনে থেকে মুখে বাতাস এসে লাগে। মুখে বাতাসের ছোঁয়া লাগায় আমাদের ভালো লাগে।
তবে কখনো দোল খেলে পেটে মোচড় লাগার মতো অনুভূতি হতে পারে। বেশি বেশি দোল খেলে পরে আর খারাপ লাগে না। তাই এমন লাগলেও তুমি দোল খাওয়া চালিয়ে যেতে পার।