যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোরে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ বাল্টিমোর সেতুতে ধাক্কা দেয়। ফলে সেতুটি ভেঙে নদীতে পড়ে। ২৬ মার্চ স্থানীয় সময় সোমবার দিবাগত মধ্যরাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বাল্টিমোর সেতুধসের ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন। ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর ওয়াটারবর্ন ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মতে, নৌযানে আঘাত লেগে ১৯৬০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সেতু ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে ৩৫টি। ২০১৮ সালে তাদের প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এই দুর্ঘটনায় মারা গেছে মোট ৩৪২ জন। এর মধ্যে ১৮টি ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে গত ৫২ বছরে সেতু ধসে পড়ার সাতটি ঘটনা পড়ুন এখানে।
আফ্রিকান নেপচুন নামে ১১ হাজার টনের একটি মালবাহী জাহাজ সিডনি ল্যানিয়ার ব্রিজে আঘাত করে। ব্রিজটি উপকূলীয় অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব জর্জিয়ার ব্রান্সউইক নদীর ওপর অবস্থিত। সেতুটি ছিল একটি ড্র সেতু। ড্র সেতু নৌযান চলাচলের সুবিধার জন্য যে ব্রিজের পুরোটা বা আংশিক অংশ ভাঁজ হয়ে পাশের দিকে ওপরে ওঠে বা নিচে নেমে যায়। তখন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। নৌযান চলে গেলে আবারও গাড়ি চলাচল শুরু হয়। আফ্রিকান নেপচুনের ধাক্কায় এই সেতুটির ৪৫০ ফুট ধসে পড়ে। সেতুর ওপরে জাহাজ চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা গাড়িগুলো নদীতে পড়ে যায়। ফলে মারা যান ১০ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের টাম্পায় কুয়াশাচ্ছন্ন এক সকালে সানশাইন স্কাইওয়ে ব্রিজে ধাক্কা মারে ৩৫ হাজার টন ওজনের একটি জাহাজ। জাহাজটির ধাক্কায় ব্রিজের মূল স্প্যানের ৩৯৬ মিটার ধসে পড়ে। ২৬ জন আরোহী নিয়ে একটি বাসসহ সাতটি যানবাহন পানিতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় মারা যান ৩৫ জন।
একটি টাগবোট মাল পরিবহনের একটি বার্জ ঠেলছিল। বোটের ইঞ্জিনে গোলযোগ দেখা দেওয়ায় মেরামতের জন্য বোটটি থামানো হয়। এরপর ঘটে বিপত্তি। সময়মতো টাগবোটের ইঞ্জিন চালু করতে না পারায় বার্জটি চার লেনের একটি সেতুতে আঘাত করে। বিকেলে এই ব্রিজে ট্রাফিক শুরু হয়। তবে বিকেলের আগেই ব্রিজের ২০০ ফুট অংশ পানিতে ছিটকে পড়ে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপক্ষে দুটি গাড়ি ৪০ ফুট নিচে পড়ে যায়। এই দুর্ঘটনায় একজন মারা যান, আহত হন দুজন। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড প্রতিবেদনে লিখেছে, সেতুটি সংঘর্ষের ঝুঁকিতে ছিল। সেতুর পিলারগুলো পুরোপুরি সুরক্ষিত ছিল না। এই সেতুতে এর আগেও ছোটখাটো ধাক্কা লেগেছিল।
ঘন কুয়াশায় একটি বার্জ দিক হারিয়ে আলাবামার মোবাইল নদীর একটি শাখায় প্রবেশ করে। যেখানে ছিল একটি রেলসেতু। বার্জটি গিয়ে সেতুতে আঘাত করে। কয়েক মিনিট পর সেতুতে ওঠে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। ক্ষতিগ্রস্ত সেতু অতিক্রম করার সময় সেতু ধসে ট্রেনটি নদীতে পড়ে যায়। মারা যান ৪৭ জন ট্রেনযাত্রী।
সেন্ট লুইস বন্দর দিয়ে যাওয়ার সময় একটি টো বোট (বার্জ ঠেলার জন্য শক্তিশালী ছোট জাহাজ) ইডস ব্রিজের মাঝখানে আঘাত করে। আটটি বার্জ ছুটে যায়। এর মধ্যে তিনটি বার্জ ব্রিজের কাছে নোঙর করা জাহাজকে ধাক্কা দেয়। ফলে ৫০ জন সামান্য আহত হন।
টেক্সাসের পোর্ট ইসাবেলে ভোরের অন্ধকারে রানি ইসাবেলা কজওয়ে ব্রিজে কয়েকটি বার্জ আঘাত করে। একটি টাগবোট থেকে বার্জগুলো ছুটে গিয়েছিল। ফেডারেল হাইওয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, বার্জের ধাক্কায় ব্রিজের দুটি সাপোর্ট পাইলিং ছিটকে যায়। ফলে সেতুর এক অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। মোটরসাইকেলের চালকেরা ব্রিজের ধসে যাওয়া অংশ দেখতে না পেয়ে নদীতে পড়ে যান। মারা যান আটজন।
দুটি খালি বার্জকে ঠেলে নিচ্ছিল একটি টো বোট। ওকলাহোমার ওয়েবার্স ফলসের উত্তর দিকে যাচ্ছিল বোটটি। বোটটি নিজের পথ থেকে সরে গিয়ে একটি ঘাটে ধাক্কা দেয়। এর প্রভাবে সেতুর ৫০৩ ফুট অংশ ভেঙে নদীতে নিচের বার্জে পড়ে যায়। সেতু ধসে আটটি যাত্রীবাহী গাড়ি ও তিনটি ট্রাক নিচে পড়ে যায়। ফলে ১৪ জন প্রাণ হারান। আহত হন পাঁচজন।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট