বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘মিজো রেইন’ সাপের সন্ধান

মিজো রেইন সাপছবি: সৌরভ মন্ডল

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের ভান্ডারে যুক্ত হয়েছে আরেকটি প্রজাতি। প্রথমবারের মতো দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বান্দরবানের পাহাড়ি জঙ্গলে ‘মিজো রেইন সাপ’ (বৈজ্ঞানিক নাম: Smithophis atemporalis) শনাক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সাপের প্রজাতির সংখ্যায় যোগ হলো আরো একটি নাম।  

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর, রুমা উপজেলার কেওক্রাডং এলাকার দার্জিলিং পাড়া থেকে বগা লেক যাওয়ার পথে গবেষকরা এই সাপটির ছবি তোলেন। এর রং, দেহের বৈশিষ্ট্য ও ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হন এটি ‘মিজো রেইন সাপ’। এর আগে, এই প্রজাতিটি শুধু ভারতের মিজোরাম রাজ্যে রেকর্ড করা হয়েছিল। সাধারণত বৃষ্টির পরে পরেই এই সাপের দেখা মেলে। সেখান থেকেই এর ইংরেজি নাম Mizo Rain Snake.  

এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রেকর্ড হওয়া মিজো রেইন সাপ। ভারতের মিজোরাম প্রদেশে এই সাপটি প্রায় ৬০টি স্থানে রেকর্ড করা হয়েছে। ভৌগোলিক এই বিস্তৃতি, শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা কাজে ছিলেন ইফতেখার মাহমুদ, আশিকুর রহমান, মো  ফজলে রাব্বী, ড. মনিরুল এইচ খান, আদনান আজাদ, সৌরভ মন্ডল এবং মাহফুজুর রহমান। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ হার্পেটোলজিকাল সোসাইটি প্রকাশিত দ্য হার্পেটোলজিকাল বুলেটিন জার্নাল থেকে।   

আরও পড়ুন

মিজো রেইন সাপের রং সাধারণত কালো-সাদা ব্যান্ডের মত, কিছুটা হলুদাভ ও দেখা যায়। পিঠের দিকের অংশ কালো এবং পেটের অংশ সাদা। সাপটির মাথার আকৃতি, দেহের রং এবং প্যাটার্ন অন্য প্রজাতির থেকে আলাদা। দেহের প্রথম অংশে কালো এবং সাদা চিহ্নের সংমিশ্রণ ঢেউয়ের মতো দেখা যায়, যা লেজের দিকে জিগজ্যাগ প্যাটার্নে রূপ নেয়। পিঠের দিকের কালো অংশ এবং বৃষ্টির পরে এর উপস্থিতির জন্য এর বাংলা নাম দেওয়া যায় ‘কালমেঘা সাপ’।

মিজো রেইন সাপ
ছবি: সৌরভ মন্ডল

বর্ষাকালে এদের সাধারণত পাহাড়ি ঝরনা ও জলাশয়ের আশপাশে দেখা যায়। সাপটির খাদ্যতালিকায় মূলত কেঁচো এবং ছোট টিকটিকি জাতীয় প্রাণী আছে। মিজো রেইন সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে খাদ্য শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তবে এই প্রজাতি সম্পর্কে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য জানা নেই। এ প্রজাতির সাপের বিস্তার, বাসস্থান এবং পরিবেশগত ভূমিকা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। 

মিজো রেইন সাপের উপস্থিতি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় নতুন প্রাণী শনাক্তের এবং জীববৈচিত্র্যের গবেষণায় ব্যাপক সম্ভাবনার প্রকাশ। এই সাপের উপস্থিতি বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এই প্রজাতির সাপসহ অন্যান্য সকল সাপ বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর মাধ্যমে সংরক্ষিত। 

সূত্র: ব্রিটিশ হারপিটোলজিক্যাল সোসাইটি

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

আরও পড়ুন