শৈত্যপ্রবাহ কী, কেন এ সময় বেশি শীত পড়ে

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। রাজধানী ঢাকায়ও কুয়াশা বেড়েছে। শনিবার সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনেছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কিছুদিন আগেও শীতের কাপড় ছাড়া দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এখন আবার দেখছি এত শীত, শীতের কাপড় পরে কাজ তো হচ্ছেই না, বরং ঠান্ডার জন্য লেপের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। টেলিভিশন, পত্রিকা খুলে দেখলাম শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাসের কথা। সব শীতেই দেখি এমন শৈত্যপ্রবাহ হয়। কিন্তু এই শৈত্যপ্রবাহ আসলে কী? শৈত্যপ্রবাহেই কেন শীত এত বেশি পড়ে?

অনেকের ধারনা, খুব বেশি কুয়াশা হয়তো শৈত্যপ্রবাহের লক্ষণ। এই ধারণা সঠিক নয়। কুয়াশার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের সরাসরি সম্পর্ক নেই, বরং বিপরীত।

বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বরের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শীতের স্থায়িত্বকাল। এই শীত বাংলাদেশে নিয়ে আসে উত্তরের হিমেল হাওয়া। এ সময় হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ঠান্ডা বাতাস ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে যায়। ফলে আমাদের শীত লাগে। তাপমাত্রা যদি ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে নির্দিষ্ট মাত্রা অর্থাৎ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়, তবে তাকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

তাপমাত্রা অনুযায়ী শৈত্যপ্রবাহ চার ধরনের হয়। শীতকালে যদি তাপমাত্রা কমে ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তখন সেটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা আরও কমে ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা কমে যদি ৪-৬ ডিগ্রিতে নেমে আসে, তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আবার তাপমাত্রা যদি ৪ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়, সেটা হয় অতি শৈত্যপ্রবাহ।

তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলেই তাকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে সেটা সর্বনিম্ন ৩ দিন স্থায়ী হতে হবে, তা না হলে সেটা শৈত্যপ্রবাহ হবে না। সেটা তাপমাত্রার স্বাভাবিক ওঠানামা।

আরও পড়ুন
তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার মধ্যে সড়কে স্কেটিং করছে দুই কিশোর
ছবি: মঈনুল ইসলাম

শীতকালের একটি লক্ষণ কুয়াশা পড়া। অনেকের ধারনা, খুব বেশি কুয়াশা হয়তো শৈত্যপ্রবাহের লক্ষণ। এই ধারণা সঠিক নয়। কুয়াশার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের সরাসরি সম্পর্ক নেই, বরং বিপরীত। কুয়াশা পড়লে তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রির ওপরে। আবহাওয়াবিদদের মতে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসলে কুয়াশা সৃষ্টি হয়। কুয়াশা বৃষ্টিরই এক রূপ। সূর্যের তাপে কুয়াশা কমে যায়। অনেক সময় সকালে কুয়াশা দেখা যায়, কিন্তু বাতাস বইলে কুয়াশা সরে যায়। এটা শৈত্যপ্রবাহ নয়।

আরও পড়ুন

শৈত্যপ্রবাহ কখন হয়, এর নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই। তবে বাংলাদেশের শীতের স্থায়িত্বকাল অনুযায়ী সাধারণত ডিসেম্বর মাসে এক থেকে দুটি, জানুয়ারি মাসে দুই থেকে তিনটি আর ফেব্রুয়ারিতে একটি শৈত্যপ্রবাহ হয় বলে ধারণা করা হয়। একটি শৈত্যপ্রবাহ সর্বনিম্ন ৩ দিন থেকে ১০ বা ১৫ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহের সময় শীতল বাতাস শরীর থেকে অনবরত তাপ শুষে নেয়। ফলে এই সময় শীতের অনুভূতি তীব্র হয়। তাই শৈত্যপ্রবাহ হলে ইচ্ছে করে কাজকর্ম ফেলে রেখে সারা দিন লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা যাবে না। সে যতই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়ুক!

আরও পড়ুন