৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠন হয় ৮ আগস্ট। এর মাঝখানে দেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বল্প উপস্থিতির কারণে কিছু মানুষ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চেষ্টা করে। গণভবন, সংসদ ভবনসহ বিভিন্ন এলাকায় অরাজকতা তৈরি হয়। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতি সামলাতে দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে কেউ সড়ক সামলায়, কেউ গণভবন ও সংসদ ভবন পরিস্কারে অংশ নেয়। নিরাপত্তা দিতে এলাকায় এলাকায় পাহারার কাজ করে অনেকে। সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কেউ দেয়াললিখন করে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা পরিস্কার করাসহ সড়ক বিভাজকে গাছও লাগিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সব কাজে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে আমরা জানতে চেয়েছি তাদের অভিজ্ঞতা ও অংশগ্রহণ নিয়ে। আজ থাকছে সংসদ ভবন পরিষ্কার করা নিয়ে আজকের লেখা। আসহাবিল ইয়ামিনের গ্রন্থনায় বিস্তারিত।
৫ আগস্ট ২০২৪। স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর শত শত মানুষ জড়ো হন গণভবন আর সংসদ ভবনে। রাষ্ট্রীয় দুটি ভবনই পড়েছিল লুটপাট আর ভাঙচুরের কবলে। রাতে যখন ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সাইটে গণভবন ও সংসদ ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ আর লুটপাটের ভিডিওগুলো সামনে এল, তখন খুব খারাপ লাগছিল। এগুলো তো আমাদেরই জাতীয় সম্পদ। ওই রাতেই অনেক শিক্ষার্থীরা গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে লুট হওয়া নানা জিনিস সংগ্রহ করে সেনাবাহিনীর কাছে বুঝিয়ে দেয়। তখন খুঁজছিলাম কীভাবে আমিও তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। কিছুক্ষণ পর ফেসবুকের একটি গ্রুপে জানতে পারি, গণভবন ও সংসদ ভবন পরিষ্কার করবেন তাঁরা। আমার বন্ধুদের ব্যাপারটি জানালাম। রাষ্ট্রীয় সম্পদ পরিষ্কারের কাজে নামার প্রস্তুতি নিলাম আমরা।
পরদিন অর্থাৎ ৬ তারিখ বেলা দুইটা থেকে কাজ শুরু হলো। আমার সঙ্গে ছিল আমার ছয় বন্ধু। আমি ছিলাম সংসদের বাইরের অংশের পরিষ্কারের কাজে। সেই সঙ্গে সংসদে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণও ছিল আমার দায়িত্বে। কারণ, পরের দিনেও অনেক উৎসুক মানুষ সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু এতে আমাদের কাজে আরও বাধা সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনীও ছিল আমাদের সঙ্গে। কিন্তু মূল দায়িত্বটা আমরাই পালন করছিলাম।
আমরা সবাই এক হয়ে কাজটা শুরু করি। তখন কিছু সাধারণ মানুষ আমাদের ওপর বিরক্ত হয়। কারণ, আমরা তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলাম। তারপরও অধিকাংশ মানুষ আমাদের কথা শুনছিল। কিন্তু কিছু মানুষ জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন আমরা মানববন্ধনের মতো করে তাঁদের বাধা দিই। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিছু মানুষের ব্যবহারে আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আমাদের কঠোর পরিশ্রম দেখে শুকনো খাবার, পানি দিয়ে যাচ্ছিল। অনেকেই সুন্দর কথা বলে কাজে উৎসাহ দেয় আমাদের।
দিনশেষে কাজ শেষে বাসায় ফিরে মা-বাবার সঙ্গে শেয়ার করি আমার অভিজ্ঞতা। আমাকে এই কাজে যুক্ত হতে দেখে খুবই খুশি হন তাঁরা। তাঁদের উৎসাহ আমাকে এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে আরও অনুপ্রাণিত করছে।
নতুন বাংলাদেশ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। চাই যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি, তার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে। এই দেশের প্রতিটি নাগরিক মানবিক হোক, একে অপরের প্রতি সহনশীল ও সহমর্মী হোক, পরস্পরকে সম্মান করতে শিখুক। স্বাধীনতা-সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজে পাশাপাশি অবস্থান করে সবাই সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলুক এই আমার প্রত্যাশা।
লেখক : শিক্ষার্থী, ৩য় বর্ষ, কৃষি অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়