মানচিত্রের দিকে যদি তাকানো হয়, তাহলে ইসরায়েলকে পাওয়া যায় মধ্যপ্রাচ্যের মাঝে। এর সীমান্ত আছে ফিলিস্তিন, মিসর, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবানন। এদের কোনোটিই ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত না। সীমারেখার হিসাবেও এরা পড়েছে এশিয়ার মধ্যে। তবু ফুটবলে ইসরায়েল প্রতিযোগিতা করে ইউরোপের অংশ হয়ে। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর তীব্র বিরোধিতা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে দেশ বা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো রকম খেলাধুলা করতেও রাজি হয়নি তারা। অনেক দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৫৪ সালে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন বা এএফসির সদস্যপদ লাভ করে ইসরায়েল।
১৯৫৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ইসরায়েল অদ্ভুতভাবে জয়লাভ করে। কোনো মুসলিম দেশ তাদের সঙ্গে খেলতে সম্মত না হওয়ায় কোনো ম্যাচ না খেলেই তারা সব ম্যাচ জিতে যায়। পরে প্লে-অফ খেলায় ওয়েলসের কাছে ২-০ গোলে হারায় মূল পর্বে যেতে পারেনি তারা।
ছয় বছর পর ১৯৬৪ সালে এএফসি এশিয়ান কাপ জেতে ইসরায়েল। কিন্তু এবারও ইসরায়েল থাকায় ১৬ দলের টুর্নামেন্টে ১১টি দল নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়ের বিপক্ষে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলে নিজেদের একমাত্র আন্তর্জাতিক ট্রফিটি জেতে তারা।
১৯৭০ সালে এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নেয় ইসরায়েল। এটাই ছিল তাদের শেষবারের মতো এশিয়ার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ চরম আকার ধারণ করার কারণে ১৯৭৪ সালে এএফসি টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাদের। তারপর ২০ বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজেদের কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল না তাদের। কখনো তারা ইউরোপ থেকে বাছাইপর্ব খেলে তো কখনো আবার ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে অংশ নেয়।
এ রকম এক পরিস্থিতি থেকে ১৯৯৪ সালে উয়েফার পূর্ণ সদস্যপদ পায় ইসরায়েল। এর পেছনে ১৯৯৩ সালে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ফ্রান্সের বিপক্ষে জয় বড় ভূমিকা রেখেছিল। তবে আরও আগেই অর্থাৎ ১৯৯১ সাল থেকে ইসরায়েলের ক্লাবগুলো নিয়মিত ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করে। তারপর আর কোনো ফিরে তাকানো নেই। এখন পর্যন্ত উয়েফার সব ধরনের ফুটবলে নিয়মিত দেখা যায় তাদের। মূলত ইতিহাসের জটিল অধ্যায়ের কারণেই এশিয়ার অংশ হয়েও ইউরোপের ফুটবলে অংশ নেয় ইসরায়েল।