মিথেন: ধরা–ছোঁয়া যায় না, তবে মানুষের পরম বন্ধু

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাত্র ০.০০০১৭ শতাংশ হলো মিথেনছবি: ইউসিএস ইউএসএ

তোমরা যারা হাই স্কুলে পড়ো, তারা মিথেনের নাম শুনে থাকবে। মিথেন একটা গ্যাস। তবে এ গ্যাসের গন্ধ নেই। ধরা-ছোঁয়া যায় না, অদৃশ্য। কিন্তু তারপরেও ঘর গরম করা বলো আর রান্নার কথা বলো, মিথেন আমাদের পরম বন্ধু। বন্ধুত্বের কথায় একটু পরে আসি। আগে এই বন্ধুটির সঙ্গে একটু ভালো করে পরিচয় করিয়ে দিই।

বন্ধুটির নামটা সহজ হলেও একে পরিচয় করানো একটু জটিলই বটে। প্রথমেই বুঝতে হবে পরমাণু কী? তুমি এখন এই লেখাটা যে মোবাইলে (ট্যাব, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারও হতে পারে) পড়ছ, তা কোটি কোটি ক্ষুদ্র পরমাণু দিয়ে তৈরি। আচ্ছা তুমি কি এখন কোনো চেয়ারে বসে বা খাটে শুয়ে আছো? এই চেয়ার, খাট এমনকি তুমি নিজেও কোটি কোটি পরমাণু দিয়ে তৈরি। এক বা একাধিক পরমাণু মিলে আবার তৈরি করে অণু। আমাদের বন্ধু মিথেন এমন দুটি পরমাণু নিয়ে গঠিত। একটা হলো হাইড্রোজেন, অন্যটা কার্বন। দুটিই গ্যাস। কার্বন পরমাণু থাকে ১টি কিন্তু হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে মোট ৪টি। এই পাঁচটি পরমাণু একত্রে মিলে তৈরি করে মিথেন। যৌগটির সংকেত হয় CH4

আরও পড়ুন

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অতি সামান্য মিথেন থাকে। কিন্তু এই গ্যাস পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ, এটি একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস অনেকটা কম্বলের মতো কাজ করে। শীতের সময় আমরা কেন কম্বল গায়ে দিই জানো তো? কম্বলে থাকে উল, যা গরম আটকে রাখতে পারে। আমাদের নিশ্বাস ও শরীরের তাপে কম্বলের ভেতরে গরম হয়। কিন্তু সেই গরম উল আটকে রাখে, বাইরে বের হতে দেয় না। তাই শীতকালে আমরা কম্বল গায়ে দিয়ে থাকি। খেয়াল করলে দেখবে, বেশি শীত লাগলে আমরা মাথাসহ সম্পূর্ণ মুখ কম্বলে ঢেকে দিই। তখন একটু কম শীত করে। তখন আমাদের নিশ্বাসও কম্বলের ভেতরে আটকা পড়ার কারণে দ্রুত গরম হয়।

আরেকটা তথ্য দিই তোমাদের। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাত্র ০.০০০১৭ শতাংশ হলো মিথেন। খুব সামান্যই মনে হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে জলবায়ু উষ্ণায়নের জন্য প্রায় ৩০ ভাগ দায়ী এই মিথেন।

যা-ই হোক, প্রসঙ্গে ফিরি। বলছিলাম গ্রিনহাউস গ্যাসটিও অনেকটা এই কাজ করে। সূর্য থেকে যে আলো পৃথিবীতে আসে, তা গ্রিনহাউস গ্যাস আটকে রাখে। ফলে পৃথিবী থাকে উষ্ণ। তবে অতিরিক্ত গরম আবার ভালো নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।

মিথেন

এখন ভাবতে পারো, মিথেন আসে কোত্থেকে। কিছু মিথেন প্রাকৃতিকভাবে বায়ুমণ্ডলে চলে যায়। এগুলো থামানোর উপায় নেই। যেমন অনেক ব্যাকটেরিয়া আছে, যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিথেন তৈরি করে। এই ব্যাকটেরিয়া জলাভূমি ও প্রাণীদের অন্ত্রে বাস করে। এ ছাড়া মানুষের কিছু কাজের জন্য বায়ুমণ্ডলে মিথেন নির্গত হচ্ছে। যেমন ধরো প্রাকৃতিক গ্যাস। এটি একটি জীবাশ্ম জ্বালানি কিন্তু বেশির ভাগই মিথেন দিয়ে তৈরি। অনেকেই এই গ্যাস রান্না করতে কিংবা ঘর গরম করতে ব্যবহার করে। ফলে দিনদিন বাতাসে আরও বেশি মিথেন মিশে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

এখন বলি অতিরিক্ত মিথেন কেন আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কম্বলের উদাহরণে আবার একটু যাওয়া যাক। রোদ উঠলে কিন্তু আমরা আর কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকি না। কিন্তু ভাবো রোদ উঠেছে এবং তুমি জোর করে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছো। দেখবে কিছুক্ষণ পর তোমার প্রচণ্ড গরম লাগবে। তখন ছুড়ে ফেলবে গায়ের কম্বল। তেমনি অতিরিক্ত মিথেন নিসরণ করা হলে আমাদের বায়ুমণ্ডল ফুটো হয়ে যেতে পারে।

আচ্ছা বায়ুমণ্ডল ফুটো হয়ে গেলে আমাদের কী ক্ষতি হবে? সূর্য থেকে যে আলো পৃথিবিতে আসে, সেই আলোর সঙ্গে কিন্তু আরও অনেক রশ্মি আসে, যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি সূর্যের আলোই যদি সরাসরি আমাদের শরীরে লাগতো, তাহলে কিন্তু শরীরে ফোস্কা পড়ত, ধীরে ধীরে শরীর পুড়ে যেত। এই বিপদ থেকে আমাদের বাঁচাচ্ছে বায়ুমণ্ডল। এখন অতিরিক্ত মিথেন নিসরণের কারণে যদি বায়ুমণ্ডল ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে আমাদের বন্ধু মিথেন কিন্তু শত্রুতে পরিণত হবে। তাই এখনই আমাদের সতর্ক হওয়ার সময়। অতিরিক্ত প্রাকৃতিক গ্যাস তথা মিথেন ব্যবহার কমাতে হবে। তাহলেই ভালো থাকবে বায়ুমণ্ডল, টিকে থাকবে মানবজাতি।

আরও পড়ুন

আরেকটা তথ্য দিই তোমাদের। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাত্র ০.০০০১৭ শতাংশ হলো মিথেন। খুব সামান্যই মনে হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে জলবায়ু উষ্ণায়নের জন্য প্রায় ৩০ ভাগ দায়ী এই মিথেন।

টীকা

১. পরমাণু: যেকোনো রাসায়নিক উপাদানের মৌলিক একক হলো এই পরমাণু। প্রতিটি পরমাণুতে থাকে আবার নিউক্লিয়াস। এই নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন। আর নিউক্লিয়াসের বাইরে থাকে ইলেকট্রন।

২. হাইড্রোজেন: মহাবিশ্বের সবচেয়ে হালকা মৌল এটি। পর্যায় সারণির সবার শুরুতে হাইড্রোজেনের স্থান। এই গ্যাসও গন্ধহীন, বর্ণহীন ও অত্যন্ত দাহ্য। এর নিউক্লিয়াসে রয়েছে একটি প্রোটন ও বাইরে একটি ইলেকট্রন।

৩. কার্বন: পৃথিবীর সব জীবের শরীরে রয়েছে কার্বন। এটি একটা মৌলিক পদার্থ। একে C দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

৪. বায়ুমণ্ডল: পৃথিবীর চারপাশে থাকা একটা গ্যাসের স্তরই হচ্ছে বায়ুমণ্ডল। মহাকাশের নানা ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বায়ুমণ্ডল আমাদের রক্ষা করে। পাশাপাশি পৃথিবীকে উষ্ণ রাখতেও বায়ুমণ্ডলের ভূমিকা অপরিসীম।

আরও পড়ুন