গান শুনতে শুনতে অঙ্ক করলে কি মনোযোগ বেশি থাকে
একবার গণিত অলিম্পিয়াডের এক অনুষ্ঠানে এক ছাত্র খুব মজার এক প্রশ্ন করল। মঞ্চে বসে থাকা শিক্ষকেরা প্রশ্নটা শুনে প্রথমে হাসলেন, পরে উত্তর দিলেন। প্রশ্নটা ছিল, গান শুনতে শুনতে অঙ্ক করলে কি মনোযোগ বাড়ে? মঞ্চে বসা এক স্যার উত্তর দিয়েছিলেন, হইচইয়ের মধ্যে পড়াশোনা করলে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন। নিঃশব্দে পড়লে মনোযোগ বেশি দেওয়া যায়। তোমার উচিত চুপচাপ কোনো জায়গায় অঙ্ক করতে বসা।
উত্তরটা একটু বিস্তারিত জানা যাক। কারণ, এখানে কিছু বিষয় বলা বাকি আছে। প্রশ্নটাকেও আরেকটু বড় করতে হবে। তোমার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আমি পড়তে বসে যদি গান শুনি, তাহলে কি পড়া হবে? কানে যদি হেডফোন লাগিয়ে অঙ্ক কষি, ভালোভাবে অঙ্ক করা যাবে?
তুমিই বলো, আমরা কি একই সঙ্গে দুটো কাজ করতে পারি? ধরো, দুই হাতে দুটো কলম নিয়ে দুই বিষয়ে লিখলাম। সম্ভব হবে? হবে না। আমরা দুই কাজ একসঙ্গে করতে পারি না। তুমি দাবি করতে পারো, আমি খেতে খেতে ফোন স্ক্রল করি। আমি দুই কাজ একসঙ্গে করতে পারি। কিন্তু একটু ভেবে দেখো, খাবার মন দিয়ে না খেলে স্বাদ কি পুরোপুরি পাওয়া যায়? খাওয়াকে উপভোগ করা যায়? যায় না। আর ভিডিও দেখা কি কোনো কাজ? নিজে সক্রিয় হয়ে কাজ করার মধ্যে ভিডিও দেখা পড়ে না। ভিডিওতে সবকিছু বিস্তারিত ছবি আকারে দেওয়া থাকে। আমাদের শুধু বসে তাকিয়ে থাকতে হয়। দুটি কাজ একসঙ্গে করতে গেলে গোলমাল লেগে যায়। তাই গান শুনতে শুনতে অঙ্ক করলে নিশ্চিত মন দিয়ে গান শোনা হবে না।
গান শুনতে শুনতে মন দিয়ে অঙ্ক করা সম্ভব। তবে…
এখানে তবে আছে। ধরো, তুমি একান্নবর্তী পরিবারে বাস করো। অথবা কোনো হোস্টেলে থাকো, যেখানে তোমার চারপাশে প্রচুর হইচই। বন্ধুরা সারাক্ষণ আড্ডা দিচ্ছে। খেলাধুলা করছে। মানে এটা–ওটা লেগেই আছে। তুমি পড়তে বসলে মন দিতে পারবে না নিশ্চয়ই। তোমার বাসা যদি বড় রাস্তার পাশে হয়, তাহলেও এ সমস্যা হতে পারে। দেখা যাবে, সারাক্ষণ গাড়ি হর্ন দিচ্ছে।
যৌথ পরিবার তেমন দেখা যায় না। তবে অনেকের বাড়িতে বেড়াতে আসে অন্যরা। যৌথ পরিবার হোক বা বেড়াতে আসুক, পড়তে বসলে যদি ছোট-বড় সবাই কথা বলে, হাসাহাসি করে, রাগারাগি করে, তাহলে তোমার জন্য তা অসুবিধারই বটে। এর জন্য ‘স্টাডি সং’ হতে পারে সমাধান। এটি হলো পড়ার সময় শোনার জন্য গান। নানা রকম শব্দের চেয়ে রিদম বা তালযুক্ত শব্দ তোমার মনোযোগে কম ব্যাঘাত ঘটাবে নিশ্চয়ই।