বিল গেটসের নামে প্রচলিত ১১টি উপদেশ, যেগুলো বিল গেটস আসলে বলেননি
বিল গেটসের নামে প্রচলিত গল্পটি বেশ অনুপ্রেরণাদায়ক। তবে গল্পটি বিল গেটসের নামে প্রচলিত হলেও এর মূলে বিল গেটস নেই। মূল গল্পকারকে অনুসন্ধান করার আগে গল্পটি জেনে নাও। সঙ্গে অনুপ্রেরণাদায়ক ১১টি উপদেশ।
বিল গেটসকে একটি হাইস্কুলে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি হেলিকপ্টারে করে স্কুলটিতে যান। সেখানে পকেট থেকে একটি কাগজ বের করেন, যেখানে ১১টি উপদেশ লিখে রেখেছিলেন। পাঁচ মিনিটের কম সময়ে উপদেশগুলো শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান গেটস। একনাগাড়ে ১০ মিনিটের বেশি হাততালি পান। এরপর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে ফিরে যান।
ওই ১১টি উপদেশ বিল গেটসের নামে ছড়িয়ে পড়ে, যা জীবনে কাজে লাগবে। কোনো স্কুল তোমাকে এই উপদেশ শেখাবে না। অনুপ্রেরণামূলক লেখায় এই ১১ উপদেশ অনেকেই উল্লেখ করেন। এই উপদেশ জেনে তুমি জীবনে কাজে লাগাতে পারো। উপদেশগুলো বলার পর আমরা জানব আসলে উপদেশগুলো কার।
১. জীবন সবাইকে সমান সুযোগ দেয় না—বিষয়টি মেনে নাও।
২. দুনিয়া তোমার আত্মসম্মানবোধ নিয়ে কেয়ার করে না। দুনিয়া চায় নিজেকে নিয়ে খুশি হওয়ার আগে তুমি কিছু একটা অর্জন করো।
৩. এই হাইস্কুলের বাইরে গেলেই মাসে ৪০ হাজার ডলার উপার্জন করতে পারবে না। তুমি ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবে না, যার একটি গাড়ি থাকবে, টেলিফোন লাইন থাকবে। এই দুটিই তোমাকে অর্জন করে নিতে হবে। ৪. যদি তুমি মনে করো তোমার শিক্ষক তোমার সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করেন, তবে একজন বস পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো। এই কঠোর ব্যবহারের কোনো শেষ নেই।
৫. ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মী হওয়া তোমার জন্য অমর্যাদার বিষয় নয়। এ কাজকে তোমার দাদা-দাদি অন্য শব্দে ডাকতেন, যাকে বলে ‘সুযোগ’।
৬. যদি তোমার জীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, তবে এটি তোমার মা–বাবার দোষ নয়। তোমার ভুলের কারণে মা–বাবাকে দোষ দেবে না। তাঁদের কাছ থেকে শেখো।
৭. তোমার জন্মের আগে তোমার মা–বাবা এখনকার মতো এত বিরক্তিকর ছিলেন না। তোমার জন্য খরচ করতে করতে, তোমার কাপড়চোপড় পরিষ্কার করতে করতে, তোমার বাজে ব্যবহার আর কথা শুনতে শুনতে তাঁরা এ রকম হয়েছেন।
৮. স্কুল তোমার ভালো–খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে তোমাকে বের করে দিতে পারে, কিন্তু জীবন তা করে না।
৯. জীবন সেমিস্টারে বিভক্ত নয়। এখানে গ্রীষ্মকালে ছুটি নেই। চাকরি দেবে, এমন নিয়োগকর্তা খুব কম আছেন, যিনি তোমাকে খুঁজে বের করবেন।
১০. টেলিভিশন আর বাস্তব জীবন এক নয়। বাস্তব জীবনে মানুষকে কফি শপ বাদ দিয়ে কাজে যেতে হয়।
১১. নার্ডদের সঙ্গে ভালো আচরণ করো। সম্ভাবনা আছে একসময় এমন এক নার্ডের অধীন তোমাকে কাজ করতে হবে।
এই তালিকাকে মাঝেমধ্যেই বিল গেটসের ‘বিজনেস @ দ্য স্পিড অব থট’ বই থেকে নাকি নেওয়া হয়েছে। তবে বইটিতে উপদেশগুলো নেই। কেউ কেউ বলেন, এই উপদেশগুলো বিল গেটস ক্যালিফোর্নিয়ার ভিসালিয়ার মাউন্ট হুইটনি হাইস্কুলের একটি বক্তৃতায় ব্যবহার করেছেন। তবে স্কুলের প্রশাসকেরা বলছেন, এটি সত্য নয়।
স্নুপস ডটকম শহুরে গুজবের সত্যতা যাচাই করে। তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে কেমন করে গেটসের নাম এই নিয়মগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তা জানা যায়নি। এই ওয়েবসাইটের অনুমান, নার্ডদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের ১১তম উপদেশটি সম্ভবত এসেছে কোনো একজন নার্ডের কাছ থেকে। গেটসকে সর্বকালের সেরা সফল নার্ড হিসেবে ধরা হয়।
কখনো কখনো বলা হয়, এই উপদেশের তালিকাটি আসলে বিখ্যাত মার্কিন ঔপন্যাসিক কুর্ট ভনেগাটের লেখা। তবে তিনিও এগুলো লেখেননি।
আসলে তালিকাটি শিক্ষা সংস্কারক চার্লস জে সাইকসের একটি কলাম বা মতামতের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। ১৯৯৬ সালে বের হওয়া বই ‘ডাম্বিং ডাউন আওয়ার কিডস: হোয়াই আমেরিকান চিলড্রেন ফিল গুডস অ্যাবাউট দেমসেলভস, বাট ক্যান্ট রিড, রাইট অর অ্যাড’-এর লেখক তিনি। কলামটি মূলত ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে সান ডিয়েগো ইউনিয়ন-ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়েছিল। এই লেখা থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপদেশগুলো নেওয়া হয়েছে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে বিল গেটসের নাম লেখক হিসেবে এই উপদেশের সঙ্গে ছড়াতে শুরু করে। কলাম লেখক সাইকস এই কলামের ওপর ভিত্তি করে একটি বই লিখেছেন—‘ফিফটি রুলস কিডস ওন্ট লার্ন ইন স্কুল: রিয়েল ওয়ার্ল্ড অ্যান্টিডটস টু ফিল-গুড এডুকেশন’।
তাই উপদেশগুলো কাজের হলেও এটির দাতা বিল গেটস নন।
সূত্র: জ্যাকসনভিল ডটকম