রক্তচোষা ভয়ংকর পাঁচ প্রাণী
রক্ত চুষে খাওয়ার বিষয়টি অদ্ভুত মনে হলেও কিছু প্রাণীর জন্য খুব স্বাভাবিক। জীবন বাঁচিয়ে রাখা ও টিকে থাকার জন্য কিছু প্রাণী অন্য প্রাণীর রক্ত খায়। এই অভ্যাস রক্ত খাওয়া প্রাণীর জন্য বেশ উপকারী। কারণ, রক্তে আছে প্রোটিন ও লিপিড। তাই কিছু প্রাণীর খাওয়ার জন্য রক্ত খুব শক্তিশালী পানীয়। এ রকম পাঁচ প্রাণী নিয়ে জানা যাক।
মশা
রক্ত খাওয়া প্রাণীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত মশা। পৃথিবীর ভয়ংকরতম প্রাণীও এটি। খুব কম মানুষই মশার হাত থেকে নিস্তার পায়। অনেক বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য এই মশা দায়ী। ক্ষুধা পেলে মশা রক্ত শুষে নেয়, এমন না। স্ত্রী মশার ডিমের বিকাশের জন্য প্রয়োজন হয় রক্তের। রক্ত পেলে একটি মশা প্রচুর ডিম পাড়ে। না পেলে সামান্য কয়েকটি ডিম পাড়ে। বংশবিস্তারের জন্য রক্ত খায় মশা। মানুষের হাতে–পায়ে বসে হুল ফুটিয়ে ঘন তরল ত্বকের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। ব্যথানাশক এই তরল ত্বকের কিছু অংশ কিছুক্ষণের জন্য অবশ করে রাখে। রক্ত পানের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ছড়ায় মশা। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় লাখ লাখ মানুষ। প্রতিবছর ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবস পালিত হয়।
বেড বাগ বা ছারপোকা
ছোট্ট ডানাবিহীন কীটপতঙ্গের অন্যতম ছারপোকা। ছারপোকার আকার ১ থেকে ৭ মিলিমিটারের মধ্যে হয়। ছোট্ট এই পোকা সাধারণত বিছানায় পাওয়া যায়। রাতে ঘুমানোর সময় সুযোগ বুঝে মানুষের রক্ত চুষে নেয় এগুলো। উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীর রক্ত খায় ছারপোকা। এগুলো সাধারণত বসার গদি ও বিছানায় থাকে। পোকাগুলো মানুষের ঘুমানোর অপেক্ষা করে। মানুষ ঘুমিয়ে গেলে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়। কামড় দিয়ে রক্ত চুষে নেয়। তবে ছারপোকা না খেয়ে ৭০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এ কারণেই একবার কোথাও ছারপোকা ছড়িয়ে গেলে দূর করা খুব কষ্টকর হয়।
টিক্স বা এঁটুলি
ছোট্ট রক্তখেকো এঁটুলি। গবাদিপশুর গায়ে বেশি দেখা যায় এই পোকা। ৩ থেকে ৫ মিলিমিটার লম্বা আকৃতির এঁটুলি শরীরের বাইরে লেগে থাকে। স্তন্যপায়ী, পাখী, সরীসৃপ, এমনকি উভচর প্রাণীর রক্ত খেয়ে জীবন পার করে। এঁটুলির জীবাশ্ম থেকে জানা গেছে, পৃথিবীতে এগুলো টিকে আছে প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে। এই পোকা বিশ্বের সবখানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর অঞ্চলে এই পোকার ছড়াছড়ি।
প্রাপ্তবয়স্ক এঁটুলির দেহ ডিম্বাকৃতির। এটি আবার রক্ত খাওয়ার পর ফুলে ওঠে। আটটি পা নিয়ে চলা এঁটুলির শরীরের ওপরে শক্ত বর্ম থাকে। চোষকের মতো মুখ থাকে দেহের নিচে। চারপাশের ঘ্রাণ, দেহের তাপ, আর্দ্রতা আর কম্পন অনুভব করে পোষক প্রাণীকে শনাক্ত করে এঁটুলি।
ভ্যাম্পায়ার বাদুড়
হরর সিনেমার যেকোনো ভক্ত জানে, এমন এক বাদুড় আছে, যারা তীক্ষ্ণ দাঁত দিয়ে প্রাণীর ত্বক ছিদ্র করে রক্ত বের করে চুষে খায়। রক্ত পানের সময় প্রাণীটি টের পায় না। হরর সিনেমার ভক্তসহ যে কেউ ভ্যাম্পায়ারের কথা উঠলে বাদুড়ের কথা ভাবে। পৃথিবীতে বাদুড়ের ১ হাজার ২০০–এর বেশি প্রজাতি আছে। তবে এগুলোর মধ্যে শুধু ডেসমডন্টিনে উপপ্রজাতিটি রক্ত পান করে।
ভ্যাম্পায়ার বাদুড় স্তন্যপায়ী প্রাণী বা পাখির শ্বাসপ্রশ্বাস টের পেয়ে কাছাকাছি নেমে আসে। ত্বকে ছিদ্র করে রক্ত বের করে পান করে। ঘুমন্ত প্রাণী বেছে নেয় তারা। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া এই ভ্যাম্পায়ার বাদুড় একমাত্র পরিচিত স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেটি রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। মানুষও কখনো কখনো এই রক্তচোষার শিকার হতে পারে। এই বাদুড়ের লালায় থাকা উপাদানের কারণে অন্য প্রাণীদের রক্তপানের সময় ওই প্রাণীরা সেটি টের পায় না। আবার সহজে এই রক্ত পড়া বন্ধও হয় না। রক্ত বের হতে হতে একসময় প্রাণীটি রক্তশূন্যতায় ভুগে মারা যায়।
জোঁক
বর্ষাকালে আমাদের দেশের পাহাড় ও বনে বেড়াতে গেলে অনেকেই জোঁকের খপ্পরে পড়ে। মিঠাপানি ও স্থলে বাস করা জোঁক দৈহিক গঠনের কারণে অনেকের কাছে অপছন্দের। অনেকের কাছেই প্রাণীটি গা ঘিন ঘিন করা কিছু। রক্তচোষা অমেরুদণ্ডী এই প্রাণী সাধারণত গাছপালা বা ঘাসের মধ্যে ওত পেতে বসে থাকে বাহকের অপেক্ষায়। পাশ দিয়ে কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী যাওয়ার সময় দ্রুত এর গায়ে চোষকের মাধ্যমে লেগে যায়। এরপর চোষক দিয়ে রক্ত শুষে খায়। এগুলো চোষকের মধ্য দিয়ে একটি অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট বা রক্ত জমাটে বাঁধা দেওয়া উপকরণ নিঃসরণ করে। এগুলোর লালার কারণে বাহক টের পায় না তাকে জোঁকে ধরেছে। পর্যাপ্ত রক্ত খাওয়া হলে আস্তে করে বাহককে ছেড়ে নিচে পড়ে যায় জোঁক।