নিলামে কত টাকায় বিক্রি হলো বব ডিলানের গানের খসড়া
২০১৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন বব ডিলান। মানুষ তাঁকে চেনে গায়ক হিসেবে। নোবেল পুরস্কারের তালিকায় তাঁর নাম দেখে সে সময় বিশ্ববাসী চমকে উঠেছিল। কারণ গীতিকার ও সংগীতশিল্পী বব ডিলানের আগে কোনো গায়ক বা গীতিকার সাহিত্যে নোবেল পাননি।
ডিলান একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সংগীত পরিচালক, চিত্রশিল্পী ও লেখক। মানবতাবাদ আর যুদ্ধবিরোধী চেতনা গানে তুলে আনার জন্য তিনি বিখ্যাত। ১৯৭১ সালে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে সংগ্রামরত বাংলাদেশের পাশে ছিলেন বব ডিলান।
এবার নিলামে তাঁর গানের খসড়া বিক্রি হওয়ায় খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ গনমাধ্যশ দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বব ডিলানের সঙ্গে সম্পর্কিত ৬০টি আইটেম যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলে নিলামে বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আছে ১৯৬৫ সালের বিখ্যাত গান ‘মিস্টার ট্যাম্বুরিন ম্যান’-এর টাইপরাইটারে লেখা খসড়া। ১৮ জানুয়ারি শনিবার এক নিলামে এই খসড়াটি পঞ্চাশ কোটি টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
দুটি হলুদ কাগজে রয়েছে এই গানের তিনটি খসড়া। তৃতীয় খসড়ায় নীল কালিতে লেখা কিছু টিকা আছে। টেনেসির ন্যাশভিলে গানের খসড়াটি নিলামে তোলা হয়েছিল। নিলামকারীরা যার মূল্য অনুমান করেছিলেন ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা থেকে ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। শেষে এটি বিক্রি হয় পাঁচ লাখ আট হাজার ডলার বা ৫২ কোটি ২১ লাখ টাকায়।
বব ডিলানকে উৎসর্গ করে এক বিশেষ নিলামের অংশ ছিল এই গানের খসড়াগুলো। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মিউজিশিয়ানস হল অব ফেম অ্যান্ড মিউজিয়ামে’। নিলামে ওঠা ৬০টি আইটেমের মধ্যে ৫০টি ছিল আমেরিকান সঙ্গীত-সাংবাদিক আল অ্যারোনোভিটজ-এর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নেওয়া।
১৯৬৪ সালে বব ডিলানের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। সে বছর মার্চ মাসের একদিন অ্যারোনোভিটজের বাসায় ছিলেন ডিলান। তিনি দেখেছিলেন, তাঁর সোফায় ঘুমিয়ে আছেন বব ডিলান। আর ‘মিস্টার ট্যাম্বুরিন ম্যান’ গানের লিরিক্স ডাস্টবিনে মুচড়ে ফেলে রাখা। অ্যারোনোভিটজের বাড়িতে একটি টাইপরাইটারে ডিলান নতুন গানটি প্রথম লিখেছিলেন। পরে আবার লিখে খসড়াগুলো ফেলে দেন।
এই নিলামে গানটির খসড়ার বাইরে ছিল ডিলানের আঁকা এবং স্বাক্ষর করা ১৯৬৮ সালের একটি তৈলচিত্র। এটি বিক্রি হয়েছে ৩১.৫৮ কোটি টাকায়। এই শিল্পকর্মটি ছিল উজ্জ্বল রঙে, কিউবিজম ধরনে আঁকা। শিল্পজগতে পা রাখার শুরুতে এটি এঁকেছিলেন তিনি। ডিলানের প্রথম স্ত্রী সারা ডিলানের ২৭তম জন্মদিনে তেল রঙ উপহার দিয়েছিলেন।
অন্যান্য মূল্যবান জিনিসের মধ্যে ছিল একটি ১৯৮৩ সালের ফেন্ডার টেলিকাস্টার ইলেকট্রিক গিটার। ডিলান এটি নিজে বাজিয়েছিলেন। পরে সঙ্গীতশিল্পী এবং অ্যাম্প্লিফায়ার প্রযুক্তিবিদ সিজার ডিয়াজকে দিয়ে দেন। এটির আনুমানিক মূল্য ছিল ১ থেকে ১.৪৫ কোটি টাকা। তবে বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকায়। ডিলানের বেশ কয়েকটি স্কেচও অনুমিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির প্লাজা হোটেলের একটি মেমো প্যাডে হাতে আঁকা স্কেচও রয়েছে। এর অনুমিত দাম ১ লাখ ৮২ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা অনুমান করা হলেও বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টাকায়।
১৯৮৭ সালের মিউজিক্যাল ড্রামা ফিল্ম ‘হার্টস অব ফায়ার’-এ ডিলানের পরা একটি লেভি’স জিনস জ্যাকেট বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ৪০০ ডলারে। নিলামের মধ্যে ছিল ১৯৬৩ সালের হাতে লেখা একটি পোস্টার। এ ছাড়াও বিক্রি হয়েছে পুরনো কিছু ছবি, এবং ডিলানের স্বাক্ষর করা হারমোনিকা।
জুলিয়েন’স অকশনসের মতে, ৬০টি আইটেমের এই সংগ্রহটি মোট দেড় মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে।