ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো - ১
পোকামাকড়ের সার্কাস
এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন কাজী আকাশ।
‘এটা কী সাসাফ্রাস?’ নিচু হয়ে আমার বিড়ালের তুলতুলে পশম ঘষতে লাগলাম। থাবা দিয়ে একটা শেওলা পড়া ভারী পাথর ওলটানোর চেষ্টা করছিল বিড়ালটা। নিশ্চয়ই এর নিচে ভালো কিছু আছে।
ধীরে ধীরে পাথরটা পাশে ঠেলে দিলাম আমি। হাততালিও দিলাম সঙ্গে সঙ্গে। এই পাথরের নিচে গুপ্তধন লুকানো আছে। আর তা হলো—কোটি কোটি রোলি-পলি পোকা।
আচ্ছা…হয়তো কোটি কোটি হবে না। তবে ২০টা নিশ্চয়ই হবে!
সাসাফ্রাস আমার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে বলল, ‘মিউ’
আমি বললাম, ‘না! এ পোকা খাবে না। এর স্বাদ ভালো নয়।’
আমার মতো আমার বিড়ালও পোকামাকড় পছন্দ করে। তবে আমাদের পছন্দের কারণ আলাদা। পোকামাকড়ের সঙ্গে খেলতে ভালোবাসি আমি। আর সাসাফ্রাস ভালোবাসে খেতে।
এখন এই পোকাগুলো নিয়ে দুর্দান্ত কিছু করতে হবে। এ জন্য চিন্তাভাবনার দরকার। আমি একটি পোকা হাতে তুলে নিলাম। ছোট ছোট পায়ের সাহায্যে ওটা আমার আঙুলের ওপর হাঁটছে। সুড়সুড়ি লাগছে আমার হাতে।
সাসাফ্রাস আমার জিনিসপত্রের স্তূপের কাছে এসে থিংকিং গগলসে (একধরনের চশমা) থাবা মারল।
‘হু, বুদ্ধিটা ভালো’, গগলসটা মাথায় পরতে পরতে বললাম।
বেশির ভাগ বিজ্ঞানী গগলস পরেন চোখে। নিজের চোখ সুরক্ষিত রাখার জন্য আমিও গগলস পরি। কিন্তু যখন আমার মাথায় বুদ্ধি কিলবিল করে, তখন গগলস মাথার ওপর উঠিয়ে দিই। চিন্তাভাবনা তো মাথার মধ্যে হচ্ছে, তাই। এভাবে গগলসটা মস্তিষ্কের কাছাকাছি রাখি আমি।
পোকাটা আমার আঙুলের ডগায় চলে এসেছে প্রায়। অন্য হাতের আঙুলটাও জুড়ে দিলাম। দুই আঙুল মিলে একটা সেতুর মতো হলো।
‘আইডিয়া! চলো পোকা নিয়ে একটু সার্কাস সার্কাস খেলি।’
প্রথমে দুটি পাথর সংগ্রহ করলাম। তারপর খুঁজে আনলাম একটা চিকন লাঠি। এবার দুই পাথরের মাঝে লাঠিটা একটু বাঁকিয়ে রাখলাম। একটা বড় সেতু তৈরি হলো। এরপর সেতুর নিচে দিলাম কিছু লতাপাতা, যেন আমার পোকা পড়ে গিয়ে ব্যথা না পায়।
তারপর পাথরের ওপর ছেড়ে দিলাম পোকাগুলো। একটা বড় আকারের পোকা পাথর থেকে লাঠির ওপর উঠে এল।
আমি কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে নরম ঘাসে শুয়ে পড়লাম। উৎসাহ দিতে লাগলাম পোকাকে। ‘চলো, ছোট্ট বন্ধু! এটা দিয়ে যেতে পারবে তুমি।’
‘এই তো…প্রায় পৌঁছে গেছ। আর একটু…হাল ছেড়ো না, তুমি পারবে…’
না! ঘাসের মধ্যে লুটিয়ে পড়ল পোকাটি। তারপর আরেকটি পোকা সেতু পার হওয়ার চেষ্টা করল। অবশ্য বড়গুলোর কষ্ট হচ্ছে। আমি ছোট্ট পোকাটিকে মাটি থেকে উঠিয়ে রাখলাম।
‘আচ্ছা, ছোট্ট বন্ধু, তুমি সবচেয়ে ছোট হতে পারো, কিন্তু আমার বিশ্বাস, তোমার এখনো অনেক কিছু দেখানোর বাকি। আমাকে দেখিয়ে দাও তুমি কী করতে পারো।’
ছোট্ট রোলি-পলিটাকে লাঠির এক প্রান্তে রাখলাম। হামাগুড়ি দিয়ে যেতে লাগল পোকাটা। আমি প্রায় নিশ্বাস আটকে রাখলাম, যতক্ষণ না ও পার হয়ে গেল।
ছোট্ট বন্ধু কাজটা করতে পেরেছে! ডালের এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পেরেছে পোকাটা। আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম আমি। খুঁজতে শুরু করলাম মাকে। ছোট্ট বন্ধুর কৃতিত্ব তাকে দেখাতে চাই। তখনই মনে পড়ল, মা ঘরে কাজ করছে। গোছগাছ করছে কিছু একটা। মা এখানে থাকলে খুব মজা হতো!
‘মা নিশ্চয়ই এটা পছন্দ করবে। চলো সাসাফ্রাস, মাকে ডেকে আনি!’
আমি ঠিক সময় পেছনে ঘুরে তাকালাম। সাসাফ্রাস আমার সার্কাসের পারফরমারদের দিকে হামাগুড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চিৎকার করে উঠলাম।
‘না, কিটি! তুমি আমার সঙ্গে যাবে। তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ছোট্ট বন্ধুরা তোমার স্ন্যাক্স নয়। চলে এসো!’
আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল সাসাফ্রাস। তারপরই হাল ছেড়ে দিয়ে আমার পিছু নিল। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই জানালার পাশে মাকে দেখতে পেলাম। কিন্তু মা আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। আমাদের পুরোনো শস্যাগারের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের হাতে একটা ছবি।
চলবে…
মূল: এশিয়া সিট্রো
রূপান্তর: কাজী আকাশ
ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে
এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন একজন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্ট বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।