বিচিত্র
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ কোনটি? এ প্রশ্নই একটি ধাঁধা। কিসের ভিত্তিতে বিবেচনা করবে কোনটা ছোট দেশ? আয়তনে নাকি জনসংখ্যার দিক থেকে? প্রশ্নটি ধাঁধা হলেও উত্তরটি সহজ। কারণ, দুটি প্রশ্নের উত্তর একই। অর্থাৎ আয়তন ও জনসংখ্যা—উভয় ক্ষেত্রে পৃথিবীর ছোট দেশ একটিই। চলো, আজ আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ১০ দেশ সম্পর্কে জানা যাক।
১০. মাল্টা—৩১৬ বর্গকিলোমিটার
দ্য রিপাবলিক অব মাল্টা একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এটি ইতালির দ্বীপ সিসিলি, উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া ও লিবিয়ার মধ্যে অবস্থিত। অর্থাৎ মাল্টা ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যে অবস্থিত। ২১৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মাল্টা রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬৪ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে ব্রিটেনের কাছ থেকে। ২০০৪ সালে সদস্য হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের। মাল্টার আয়তন ৩১৬ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ১৯ হাজার (২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী)। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর। মাল্টীয় ও ইংরেজি দেশটির সরকারি ভাষা।
৯. মালদ্বীপ—৩০০ বর্গকিলোমিটার
ভারত মহাসাগরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা মালদ্বীপ। প্রায় ১ হাজার ২০০ প্রবালদ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটির ১৮৫টি দ্বীপে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বাস। ছোট ছোট দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচুটি প্রায় ৬ ফুট। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে মালদ্বীপ চিরতরে পানির নিচে হারিয়ে যেতে পারে। দেশটি ১৯৬৫ সালে ব্রিটেনের থেকে স্বাধীনতা লাভ করা মালদ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ অর্থনীতি পর্যটননির্ভর। দেশটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্কের সদস্য। মালদ্বীপের সরকারি ভাষা ধিবেহি।
৮. সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস—২৬১ বর্গকিলোমিটার
সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস মূলত ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দুটি দ্বীপ। ১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে দ্বীপ দুটি স্বাধীনতা লাভ করে একটি দেশে পরিণত হয়। দেশটির সরকারি ভাষা ইংরেজি। ২০১৮ সালের তথ্যানুসারে দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫২ হাজারের চেয়ে কিছুটা বেশি। দেশটির বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস।
৭. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ—১৮১ বর্গকিলোমিটার
ওশেনিয়ার প্রায় ১ হাজার ২০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। ১৯৪৭ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। এ সময়ের মধ্যে দেশটিতে প্রায় ৬৭ বার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৯ সালে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে প্রথম সরকার গঠিত হয়। জাতিসংঘের সদস্য হয় ১৯৯১ সালে। সরকারি ভাষা ইংরেজি। জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার।
৬. লিচেনস্টাইন—১৬০ বর্গকিলোমিটার
দেশটি পশ্চিম ইউরোপে অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত। আকারে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির চেয়ে ছোট। তবে মাথাপিছু জিডিপি অনুসারে এটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। তবে দেশটিতে তেমন বনাঞ্চল নেই। তাই প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আমদানি করতে হয়। ১৯৯১ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে লিচেনস্টাইন। কিন্তু ২০০৮ সালে বড় ধরনের কর ফাঁকি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে দেশটি। ফলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় লিচেনস্টাইনের ব্যাংকিং খাতে। তা সমাধান করতে এখনো দেশটি কাজ করছে। প্রায় ৩৪ হাজার ৫০০ মানুষের বাস এ দেশে।
৫. সান মারিনো—৬১ বর্গকিলোমিটার
বিশ্বের পঞ্চম ক্ষুদ্রতম দেশটি উত্তর-মধ্য ইতালির একটি পার্বত্য দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র সংবিধান নিয়ে দেশটি এখনো টিকে আছে। এ দেশের সংবিধান লেখা হয়েছে ১৬০০ সালের দিকে। চারদিকের পর্বতগুলো দেশটিকে সুরক্ষিত রেখেছে। নেপোলিয়ান ইতালি আক্রমণের সময়ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সান মারিনোর সমৃদ্ধ ইতিহাসকে সম্মান করেছিলেন। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এখানে মানুষের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশি। এ রকম দেশ পৃথিবীতে এই একটিই আছে। দেশটির সরকারি ভাষা ইতালীয়।
৪. টুভালু—২৬ বর্গকিলোমিটার
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ৯টি দ্বীপদেশের মধ্যে টুভালু একটি। এটি একসময় ১১টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছিল। কিন্তু পানির উচ্চতা বাড়ায় দুটি দ্বীপ তলিয়ে গেছে। মালদ্বীপের মতো টুভালু দেশটির চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে আশার কথা হলো, চলতি বছর নভেম্বরে দেশটি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর ২০৮ টুভালুয়ান অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারবেন। টুভালু আগে এলিস দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭৮ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৬০০। সরকারি ভাষা টুভালুয়ান ও ইংরেজি। দেশটির প্রধান তৃতীয় চার্লস।
৩. নাউরু—২১ বর্গকিলোমিটার
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের আরও একটি ছোট্ট দ্বীপ নাউরু। জংসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৮০০। তবে তালিকার ওপরের দেশগুলোর মতো নাউরু পর্যটনকেন্দ্রিক দেশ নয়। এ দেশে নেই কোনো বন্দরও। দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল ফসফেট খনিজে আবৃত। এখানকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস এই ফসফেট খনিজ। তবে এখন সে খনিজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। দেশটিতে নেই কোনো নদী। বৃষ্টি হলে পানি ধরে রাখা হয়। দেশটির পাঁচ ভাগের চার ভাগই বসবাস ও চাষের অযোগ্য। এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে কোনো রাজধানী নেই। সরকারি ভাষা নাউরুয়ান ও ইংরেজি।
২. মোনাকো—২.০২ বর্গকিলোমিটার
বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশটি মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে অন্যতম ধনী দেশ। এটি ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্ব ভূমধ্যসাগরের তীরে এটি অবস্থিত। জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এটি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে এখানে। তবে দেশটি কিন্তু বেশ ধনী। মোনাকোতে পৃথিবীর সবচেয়ে কম দরিদ্র লোকেরা বাস করে। দেশটির মোট জিডিপি ৫ বিলিয়নের কাছাকাছি। যেহেতু এখানে আয়কর দিতে হয় না, তাই অনেক দেশের কোটিপতিরা মোনাকোয় সম্পদ লুকিয়ে রাখে। এখানকার সরকারি ভাষা ফরাসি। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর মন্টি কার্লোকে বলা হয় মোনাকোর কেন্দ্র। মোনাকোর জিডিপির সবচেয়ে বড় খাত ক্যাসিনো হলেও মোনাকোর নাগরিকেরা সেখানে প্রবেশ করতে পারে না।
১. ভ্যাটিকান সিটি—০.৪৯ বর্গকিলোমিটার
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সার্বভৌম ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিকান সিটি। আয়তন ও জনসংখ্যা—উভয় দিক থেকেই। ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরে অবস্থিত এ দেশ। ১৯২৯ সালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বেনিটো মুসোলিনি ও পোপ পিয়াস একাদশের ল্যাটেরান চুক্তির মাধ্যমে দেশটি স্বাধীন হয়। কিন্তু দেশটা আসলে কত ছোট? আয়তনের দিক থেকে প্রথমে দেখা যাক। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল পার্কের চেয়ে ছোট। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের চেয়ে কিছুটা ছোট ভ্যাটিকান সিটি। সাফারি পার্ক ১৪৯ একর জায়গাজুড়ে আছে। আর ভ্যাটিকান সিটির আয়তন ১২১ একর। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে নিজস্ব পোস্ট অফিস, টেলিফোন সিস্টেম, রেডিও স্টেশন, ব্যাংকিং সিস্টেম, এমনকি নিজস্ব মুদ্রাও আছে।
এ দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৮০০ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬০০ জনই পাদরি। দেশটিতে সুইস গার্ড নামের নিজস্ব সেনাবাহিনী আছে প্রায় ১০০ জন। স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং পোপের দেওয়া বিশেষ দায়িত্ব পালন করে এখানকার নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। ভ্যাটিকান সিটি একমাত্র দেশ হিসেবে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করেছে।