কচ্ছপের বয়স নিয়ে কত কথাই তো আছে। দীর্ঘ বছর বাঁচে এই প্রাণী। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কিছু সামুদ্রিক কচ্ছপ ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে! বড় হতে এবং সন্তান জন্ম দিতে ওদের অনেক সময় লাগে। কিন্তু একবার পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলে নিয়মিত সন্তান জন্ম দিতে পারে কচ্ছপ।
সামুদ্রিক কচ্ছপ সৈকতে গর্ত করে ডিম পাড়ে। এরপর বালু দিয়ে ঢেকে দেয়। কচ্ছপের ডিম ফুটে কোন ধরনের ছানা বের হবে, তা নির্ভর করে বালুর তাপমাত্রার ওপর। শীতল বা ঠান্ডা বালু হলে বেশি বেশি ছেলে কচ্ছপ তৈরি হবে। অন্যদিকে উষ্ণ বালু বেশি মেয়ে তৈরি করবে। হুট করে যদি তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়, তাহলে ছেলে ও মেয়ে কচ্ছপের সংখ্যায় তারতম্য হতে পারে।
সমুদ্রে তো অথই পানি, কূলকিনারা নেই। সামুদ্রিক প্রাণী টিকে থাকার জন্য সাঁতার কাটে। জীবনভর একটি সামুদ্রিক কচ্ছপ লম্বা দূরত্বে সাঁতার কাটে। যেমন লেদারব্যাক কচ্ছপ প্রতিবছর সমুদ্রের ওপারে ১০ হাজার মাইলের বেশি ভ্রমণ করতে পারে। কিছু কচ্ছপ নির্দিষ্ট এলাকায় থাকে। খুব বেশি দূরে যায় না।
সমুদ্রে প্রতিটি প্রাণী অন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। ছোট মাছ ফাইটোপ্লাংকটন নামে এক ক্ষুদ্র কণা খায়। ছোট মাছকে খায় একটু বড় আকৃতির মাছ। বড় আকৃতির মাছকে তার চেয়ে বড় আকারের কোনো প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। এই পরস্পর নির্ভরশীলতাকে বলে বাস্তুতন্ত্র। একে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সামুদ্রিক কচ্ছপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা সামুদ্রিক ঘাস ও স্পঞ্জ খায়। ফলে ঘাস ও স্পঞ্জ খুব বেড়ে যায় না। পানির প্রবাহ ঠিক থাকে। অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। কচ্ছপ জেলিফিশ ও ক্রাস্টাসিয়ানও খায়। ফলে এগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত থাকে, এমনকি এরা অন্যান্য মাছের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে। কারণ, ছোট ছোট প্রাণী কচ্ছপের খোলের সঙ্গে লেগে থাকে, যেগুলোকে ছোট মাছ খুঁটে খুঁটে খায়।
কচ্ছপ কিন্তু খোলসের ভেতর লুকিয়ে থাকে না। খোলসটাই ওদের দেহের বাইরের অংশ। আমাদের যেমন চামড়া। ফলে হাঙর ও তিমির মতো শিকারি প্রাণীর আক্রমণে কচ্ছপ টিকতে পারে না। মাছ ধরার জালেও আটকে যায় সামুদ্রিক কচ্ছপ। সৈকতে বাসা বাঁধার সময় মানুষের আবর্জনায় আটকে যেতে পারে।
পৃথিবীতে খুব বেশি সামুদ্রিক কচ্ছপ অবশিষ্ট নেই। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, সমুদ্রে ৬৫ লাখের মতো কচ্ছপ অবশিষ্ট রয়েছে। এদের অনেক প্রজাতি বিপন্ন বা গুরুতরভাবে বিপন্ন হয়ে গেছে। মানে এরা বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
কোভিড–১৯ মহামারি চলার সময় মানুষের চলাচল কমে গিয়েছিল—জলে-স্থলে সবখানেই। ফলে কচ্ছপ দারুণ সময় কাটিয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা সমুদ্রসৈকতে লকডাউনের সময় খুব কম মানুষ গিয়েছে। কম দূষণের কারণে বিপন্ন লেদারব্যাক সামুদ্রিক কচ্ছপ অবাধে চলাফেরা করেছে, প্রজনন করেছে। সাধারণত ডিম ফুটে বের হওয়া কচ্ছপের মধ্যে প্রতি হাজারে মাত্র কয়েকটি কচ্ছপ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তবে মহামারির সময় আরও বেশি কচ্ছপ পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পথে সহায়তা পেয়েছে।
এদের আবাসস্থল রক্ষা করা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এদের নিরাপদ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।