‘কিশোর আলোর কুইজ জিতে পাওয়া ল্যাপটপে করছি ফ্রিল্যান্সিং’
আমি আবরার জাওয়াদ। ২০২২ সালের কিশোর আলোর লাখ টাকা কুইজে প্রথম বিজয়ী হিসেবে আমার ভাই মো. আতীকুল ইসলাম ল্যাপটপ পুরস্কার পেয়েছিল। ল্যাপটপটি আমরা দুজনই ব্যবহার করেছি। ল্যাপটপ ব্যবহার করে আমি পড়ালেখার পাশাপাশি খুদে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তিন বছরে ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও ওয়েবসাইট সেক্টরে কাজ করছি। পাশাপাশি ঢাকার একটি ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডিং এজেন্সিতেও কাজ করছি আমি। বর্তমানে পড়াশোনা করছি চট্টগ্রামের মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে। আমি আজ তোমাদের জানাব, এআই কীভাবে কাজ করে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইয়ের সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। এই নাম শুনলে মনে আসে চ্যাটজিপিটির কথা। চ্যাটজিপিটিকে আমাদের বন্ধু বলা চলে। কারণ, আমরা যখন কোনো সমস্যা নিয়ে এর কাছে যাই, সে ভালো বন্ধুর মতো আমাদের সব সমস্যার সমাধান বলে দেয়। হোক সেটা অ্যাসাইনমেন্ট বা অন্য কিছু।
আমাদের এই বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা জনপ্রিয় একটি এআই-ভিত্তিক কোম্পানি ওপেনএআই। ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি তৈরি করেছিল আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে। আইটি বিশেষজ্ঞ স্যাম অল্টম্যান এর প্রতিষ্ঠাতা। তৈরি করার পর বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সবকিছু ঠিকঠাক করে প্রায় ৮ বছর পর ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর এটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যাকে বলে ওপেন সোর্স করে দেওয়া হয়।
ওপেন সোর্স শব্দটি নতুন লাগতে পারে বা তুমি নাও বুঝতে পারো। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি—মনে করো, কাল তোমার ঘরে বিরিয়ানি রান্না হবে, তুমি খুব খুশি। আগের দিন প্রস্তুতি হিসেবে বিরিয়ানি মসলার প্যাকেট আনা হলো। রান্না শুরু হতেই ঘর সুগন্ধে ভরে গেল। তুমি মসলার ম্যানুয়াল বা প্রণালি দেখে বুঝলে, বিরিয়ানি মসলার সব উপকরণ ঘরেই আছে। মা এটা দেখে ঠিক করলেন, পরেরবার মসলার প্যাকেট না কিনে বাড়িতে থাকা মসলা আনুপাতিক হারে মিশিয়ে বাড়িতেই রান্না করবেন। কিছু জিনিস কমবেশি হলেও বিরিয়ানি সুস্বাদু হবে। এই যে তোমার মা বিরিয়ানি মসলার উপকরণ ব্যবহার করে নিজের ঘরে বিরিয়ানি বানিয়ে ফেলল, ঠিক চ্যাটজিপিটির ম্যানুয়েল কিন্তু ওপেনএআইয়ের কাছ থেকে পেয়ে যাচ্ছ। এটা শুনে আবার তুমি এই ভেবে বসো না যে তুমি চ্যাটজিপিটি বানাবে। এখানে বানানোর প্রক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে এটিকে তুমি নিজের মতো করে অনেকভাবে ব্যবহার করতে পারবে। এভাবে এটিকে ওপেন সোর্স বলা হয়েছে।
চ্যাটজিপিটির পেছনে রয়েছে বিশাল বিনিয়োগ। ওপেনএআই কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠার সময়েই ইলন মাস্ক, স্যাম অল্টম্যান ও অন্যান্য টেক জায়ান্টরা মিলে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। পরে মাইক্রোসফট এই কোম্পানিতে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগের ফলে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি-৩ এবং চ্যাটজিপিটি-৪–এর মতো শক্তিশালী মডেল তৈরি করতে পেরেছে। এ ছাড়া ওপেনএআই গবেষণা ও উন্নয়নকাজে এই বিনিয়োগ ব্যবহার করেছে। ফলে তারা এমন একপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যে কাজ আগে অনেকগুলো টুল ব্যবহার করে করতে হতো, সেই কাজ চ্যাটজিপিটি একাই করে দিতে পারে। তাই আমরা এমন অনেক খবর এখন শুনি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। ইমেজ জেনারেশন, ডেটা অ্যানালাইসিস, হিউম্যান ইন্টারেকশনের মতো দারুণ সব ফিচার এখন আমরা পাচ্ছি।
এখন ডিপসিক নামের নতুন একটি চায়নিজ ওপেন সোর্স চ্যাটবট এসেছে। এটি নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। এটি তথ্য অ্যানালাইস করে সরাসরি রেজাল্ট দিতে পারে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এতে বেশ ভালো ফিচার আছে। চ্যাটজিপিটি তৈরিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। অন্যদিকে ডিপসিকে খরচ হয়েছে মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলার। ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং। ২০২৪ সালে প্রথমে ডিপসিক-ভি২, এরপর বছর শুরুতে ডিপসিক-ভি৩ উন্মুক্ত হয়। বর্তমানে এর লেটেস্ট মডেল ডিপসিক-আর১ সবাই ব্যবহার করছে।
আমাদের হাতে ল্যাপটপ-মোবাইল ফোনের মতো যে ডিজিটাল ডিভাইস আছে, সেগুলো ব্যবহার করে আমরা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি। এখন এআই ছাড়া আমরা ঠিকভাবে এগুতে পারব না।